ইউক্রেনের উপর সামরিক আগ্রাসনের কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছে বেশ কিছু দেশ। তাহার মধ্যে একটি নিষেধাজ্ঞা চরিত্রগত ভাবে বিশেষ— আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনের ব্যবস্থা দ্য সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাঙ্ক ফাইনানশিয়াল টেলিকমিউনিকেশন বা সুইফট হইতে রুশ ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে ছাঁটিয়া ফেলা। সুইফট হইল এক ধরনের সুরক্ষিত বার্তা প্রেরণ প্রক্রিয়া, যাহার সাহায্যে বিভিন্ন দেশে আর্থিক লেনদেন করা যায়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইহার গুরুত্ব অপরিসীম। এই প্রক্রিয়া হইতে বাদ পড়িবার অর্থ, বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রুশ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি আমদানি বা রফতানির লেনদেন ছাড়াও বিদেশের বাজারে ঋণলাভ বা বিনিয়োগও করিতে পারিবে না। তা ছাড়া, বিভিন্ন দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট রুশ প্রতিষ্ঠানগুলির বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার নিষ্ক্রিয় করিয়া দেওয়া হইয়াছে, যাহাতে সেগুলি ব্যবহার করিয়া রুবলের দাম পড়িবার সমস্যা ঠেকাইতে না পারে রাশিয়া। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও এখন সে দেশে লগ্নি করিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করিতেছেন।
আন্তর্জাতিক লেনদেনের পরিসর হইতে বহিষ্কৃত হইবার ফল রাশিয়ায় টের পাওয়া যাইতেছে। রুবলের দাম পড়িয়া গিয়াছে অনেকখানি— এবং, তাহা প্রভাব ফেলিতেছে সাধারণ মানুষের উপরে। এক দিকে ক্রয়ক্ষমতা কমিতেছে, অন্য দিকে সেই দেশে বাড়িতেছে জিনিসপত্রের দাম। ওষুধপত্র থেকে সয়াবিন— বহু জিনিসই বিদেশ হইতে আমদানি করিতে হয় রাশিয়াকে। যুদ্ধ এবং আর্থিক নিষেধাজ্ঞার কারণে এইগুলি মহার্ঘতর হইয়াছে। দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করিতে তাই রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সুদের হার ৯.৫ শতাংশ হইতে ২০ শতাংশ করিয়াছে, যাহাতে অর্থনীতিতে রুবলের জোগানে ঘাটতি না ঘটে। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো সম্ভব হইবে কি না, সেই বিষয়ে উদ্বেগ রহিয়াছেই। এমনিতেই ক্রাইমিয়ার আগ্রাসনের সময় আমেরিকা ও তার সহযোগীদের আর্থিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ধাক্কা খাইয়াছিল দেশের অর্থনীতি। সাম্প্রতিক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা সেই দেশের অর্থনৈতিক সমস্যা আরও জটিল করিয়া তুলিবে, তাহাতে সন্দেহ নাই।
বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে নিষেধাজ্ঞাগুলি রাশিয়ার উপর আরোপ করা হইতেছে, আর্থিক লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা তাহার পরিপূরক। ঘটনা হইল, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যেমন এই মুহূর্তে চিন রাশিয়ার বড় ভরসা, আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও তেমনই। রাশিয়ার নিকট পিপল্স ব্যাঙ্ক অব চায়না-র সিআইপিএস নেটওয়ার্ক সুইফট-এর একটি বিকল্প হইতে পারে। ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া সঙ্কটের পরই প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল সিস্টেম ফর ট্রান্সফার অব ফাইনানশিয়াল মেসেজেস। রাশিয়া তাহাও ব্যবহার করিতে পারে। আরও একটি বিকল্প হইতে পারে ক্রিপ্টোকারেন্সি। যে হেতু এই মুদ্রার উপর কোনও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ নাই, ফলে সেই লেনদেন আটকাইবার সাধ্যও আমেরিকা বা অন্য কোনও দেশের নাই। অর্থাৎ, সুইফট হইতে ছাঁটিয়া ফেলিলেই যে রাশিয়ার সম্মুখে সব দরজা বন্ধ, তাহা নহে। কিন্তু, এইগুলি নেহাতই খিড়কি। একমাত্র সুইফট-এর মাধ্যমেই বিশ্বের বৃহত্তম বাজারগুলির সহিত সংযুক্ত থাকা সম্ভব। কথাটি রাশিয়াও বিলক্ষণ জানে। এই চাপে কত ক্ষণে, এবং কতখানি কাজ হইবে, এই মুহূর্তে তাহাই দেখিবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy