প্রতীকী ছবি।
যে শহুরে শিশুটিকে ঘরে রাখিয়া বাবা-মা সিনেমা দেখিতে গিয়াছিলেন, তাহার জন্য গান বাঁধিয়াছিলেন গায়ক-কবি। তাহাতে একা ঘরে টেলিভিশনে মগ্ন না থাকিয়া জানলার বাহিরে আকাশ দেখিবার আন্তরিক পরামর্শ নিহিত ছিল। দিনকাল বদলাইয়াছে, টিভি তত নহে, এখন স্মার্টফোন-ল্যাপটপ কিশোর-যুবাদের তো বটেই, শিশুদেরও দৈনন্দিনতার অঙ্গ। উপরন্তু রহিয়াছে নিরবচ্ছিন্ন আন্তর্জাল-সংযোগ, তাহা ছাড়া অতিমারিকালে ঘর হইতে পাঠ বা পরীক্ষা চলে না। প্রবাদবাক্যের বেদের ন্যায় আন্তর্জালেও সব আছে, এবং জ্ঞানার্জনের উপাত্তের পাশাপাশি বখিয়া যাইবার উপকরণাদিও আন্তর্জালে মজুত। এইখানেই আশঙ্কা, এবং তাহাই সত্য হইতেছে। শিক্ষক, মনস্তত্ত্ববিদ ও মন-চিকিৎসকরা সতর্ক করিতেছেন, গৃহকোণে ফোন-কম্পিউটারে মগ্ন শিশুরা আন্তর্জালে এমন সব জিনিস দেখিতেছে যাহা মোটেই বয়সোচিত নহে। সাত-আট বৎসরের শিশুরও হইতেছে পর্নোগ্রাফি দেখিবার অভ্যাস। গৃহকার্যে বা গৃহ হইতে কার্যে রত বাবা-মা সবর্দা দেখিতেছেন না, ফোন বা কম্পিউটারে কী কী খোলা আছে। কর্মক্ষেত্রে চলিয়া যাওয়া বাবা-মায়ের নজরদারি ন্যূনতম, অনলাইন ক্লাসে পাঠের সমান্তরালে শিশু অবাঞ্ছিত কিছু দেখিলেও ওই পারে থাকা শিক্ষক তাহা বুঝিতে পারিতেছেন না, বুঝিলেও কিছু করিবার অবকাশ নাই। শিশুজীবনে প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও আবশ্যকতায় বিপদ ঘনাইতেছে।
নাগরিক জীবনে, বিশেষত এই অতিমারিকালে শিশু ও প্রযুক্তির ব্যবহারকে ঘিরিয়া এ-হেন পরিস্থিতির উদ্ভব বস্তুত এক উভয়সঙ্কট। শিশুর শিক্ষার জন্য, মাঠ পার্ক খেলা ও বন্ধুবিহীন কোভিডকালে বিনোদনের জন্যও আন্তর্জাল ছাড়া চলে না, আবার একাকী যাপন ও অনর্গল আন্তর্জাল-সংযোগ বয়সবিরুদ্ধ প্রবণতাসকল বহিয়া আনে। সমস্যা প্রযুক্তি নহে, শিশুরা তো নহেই, সমস্যা কতকাংশ নজরদারির। অভিভাবক সব কাজ বন্ধ রাখিয়া শিশুর আন্তর্জাল-আচরণ সতত চোখে চোখে রাখিতে পারেন না, পারিবার কথা নহে, সেই অতিনিয়ন্ত্রণ সঙ্গতও নহে। আবার আন্তর্জাল-ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আইন করা তথা প্রশাসন বা রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপও কোনও কাজের কথা নহে, ঘোষিত উদ্দেশ্য যতই বৃহত্তর স্বার্থ, শিশু বা নাগরিকের কল্যাণ হউক না কেন। বরং আধুনিকতম প্রযুক্তির বিপদ মোকাবিলা করা দরকার প্রযুক্তির সহায়তাতেই, তাহাকে কাজে লাগাইয়াই। আন্তর্জালে অধিক সময় কাটানো কেবল বঙ্গের নহে, বিশ্বের শিশুদেরও অভ্যাস, সুতরাং উদ্ভূত বিপদটিও নিশ্চয়ই স্থানিক নহে, বৈশ্বিক। অন্য দেশ তাহা কীরূপে সামলাইতেছে, তাহা দেখা দরকার। আবার উন্নত দেশগুলির এই সমস্যা সামলাইবার সর্বাধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধা এই দেশে বা রাজ্যে নাই; ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রের পক্ষেও সেই সুবিধা ভোগ পরের কথা, তাহার ব্যবস্থা করিতে পারাও সহজ নহে। তাই গৃহকোণে ফোনমগ্ন যে শিশুটির আচার-আচরণ ‘অন্য রকম’ ঠেকিতেছে, তাহার সমস্যাটি বহুমাত্রিক, তাহার সমাধানসূত্রও বিস্তর ভাবনা ও আলোচনাসাপেক্ষ। অভিভাবক, শিক্ষক, সমাজ হইতে রাষ্ট্র, সকলকে এই সমস্যার গুরুত্ব বুঝিতে হইবে। উন্মুক্ত আন্তর্জাল শিশুর স্বাভাবিক শৈশব মুছিয়া জটিল-কুটিল অন্তর-জাল না হইয়া উঠে, দেখিতে হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy