Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Singur

জলাঞ্জলি

টাটা মোটরস-এর পরিত্যক্ত জমিতে শেষ অবধি তেলাপিয়া খেলিয়া বেড়াইবে, এই সত্যটিও বাঙালিকে তাহার শীতঘুম হইতে জাগাইতে পারে না।

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৫:৪৪
Share: Save:

পিছন দিকে আগাইয়া চলুন— কলিকাতার বেসরকারি বাস কন্ডাক্টরদের নির্দেশটি রাজ্য প্রশাসন অক্ষরে অক্ষরে পালন করিতে বদ্ধপরিকর। দেড় দশক পূর্বে সিঙ্গুরে এক শিল্প-সম্ভাবনার উদয় হইয়াছিল, রাজনীতির পাকেচক্রে তাহা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়, অতঃপর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অধিগৃহীত জমি কৃষককে ফিরাইয়াও দেওয়া হয়। আবাদের শত চেষ্টাতেও সেই জমিতে সোনা ফলিবে না, এই বাস্তবটি মানিয়া এই বার সেই জমিতে মাছের ভেড়ি নির্মাণের সিদ্ধান্ত লইয়াছে রাজ্য সরকার। এক আবর্ত পূর্ণ করিয়া বিসর্জিত হইল সুবিপুল স্বপ্ন। স্বখাত সলিলে ডুবিয়া মরিবার এমন আক্ষরিক উদাহরণ খুঁজিয়া পাওয়া দুষ্কর।

এই অবস্থার জন্য রাজ্যের বর্তমান শাসক দলকে দোষ দেওয়া চলে। তাহা বিধেয়ও বটে। কিন্তু, এমন শিল্পমেধ রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে রাজ্যজয়ের আয়ুধ হইয়া উঠিতে পারে কেন, সেই প্রশ্নের উত্তর সন্ধান না করিলে নিছক দোষারোপ ফলপ্রসূ হইবে না। গুজরাত বা মহারাষ্ট্রের কথা বাদই থাকুক— তামিলনাড়ু বা অন্ধ্রপ্রদেশের ন্যায় রাজ্যেও কোনও দল শিল্প-সম্ভাবনাকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করিয়া ভোটে জিতিবার খোয়াব দেখিবে না। পশ্চিমবঙ্গে তাহা সম্ভব হয়, কারণ এই রাজ্যে ভদ্রলোকি সংস্কৃতির প্রাধান্য— তাহার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ কেরানিগিরি অথবা মাস্টারি করিয়া গ্রাসাচ্ছদনের ব্যবস্থা করাও বটে। ফলে, বৎসরের পর বৎসর স্কুল সার্ভিস কমিশনের অলীক দোলাচলে ভোগা বঙ্গ তরুণ-তরুণীরা তাহার পরের বৎসরও সেই ভরসাতেই থাকেন— নিজস্ব ব্যবসা শুরু করিবার উদ্যোগ করেন না। ব্যবসার গুরুত্ব কতখানি, তাহার সম্যক ধারণা করিবার মতো সাংস্কৃতিক পটভূমিকা বাংলায় নাই, কেউ এ-হেন মন্তব্য করিলে তাহাকে উড়াইয়া দেওয়া মুশকিল। টাটা মোটরস-এর পরিত্যক্ত জমিতে শেষ অবধি তেলাপিয়া খেলিয়া বেড়াইবে, এই সত্যটিও বাঙালিকে তাহার শীতঘুম হইতে জাগাইতে পারে না। তাহার ক্ষতির হিসাব কষিবে কে?

তাহা হইলে কি সিঙ্গুরের সলিল সমাধিতেই বাংলার শিল্পাভিযান সমাপ্ত হইবে? না কি, পশ্চিমবঙ্গ নিজের চরিত্রের জাড্যকে অতিক্রম করিয়া শিল্পায়নের পথে হাঁটিতে পারিবে? এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করিতেছে রাজ্যের শীর্ষনেতৃত্বের উপর। রাজ্যে শিল্পায়নের কাজটি বিলক্ষণ কঠিন। প্রথমত, জমির প্রশ্নে যে জট বাঁধিয়া আছে, তাহাকে অতিক্রম করিতে হইবে— প্রয়োজনে জনসমক্ষে নিজেদের ভুল স্বীকার করিয়াও। দ্বিতীয়ত, সিন্ডিকেট নামক উৎপাতটিকে সম্পূর্ণ দূর করিতে হইবে। তৃতীয়ত, রাজ্যের যে শিল্পবিরোধী ভাবমূর্তি তৈরি হইয়াছে, তাহাকে দূর করিতে হইবে। শেষ কাজটি সম্ভবত দুষ্করতম। কারণ, তাহার স্কন্ধে ইতিহাসের বোঝা রহিয়াছে। জঙ্গি শ্রমিক আন্দোলন হইতে শিল্পের প্রতি রাজ্যের প্রশাসকদের উন্নাসিক অবহেলার ভঙ্গি, প্রযুক্তির বিরোধিতা হইতে আলিমুদ্দিনের বজ্রকঠোর নিয়ন্ত্রণ— বাম জমানার বহু ভূতকে আজও বহন করিয়া চলিতে হইতেছে। কিন্তু, শিল্পের গুরুত্ব এতখানিই বেশি যে, কোনও বাধার সম্মুখেই থামিলে চলিবে না। মুখ্যমন্ত্রীও জানেন যে, উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ডের জন্য বিপুল অর্থ প্রয়োজন। একমাত্র শিল্পই তাহার সংস্থান করিতে পারে। অতএব, থামিলে চলিবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Singur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy