Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

কোনও প্রশ্ন নয়

রাফাল দুর্নীতি নিয়ে বিরোধীরা যতই হল্লা করুন, মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা তিন দফা অভিযোগই নাকচ করে দিয়েছিল।

PM Narendra Modi.

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৩ ০৫:২৬
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে দেশের ৩১ শতাংশ মানুষের আশীর্বাদধন্য হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে আসীন হওয়ার আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন, তাঁর জেহাদ দুর্নীতির বিরুদ্ধে। তিনি নিজেকে ‘দেশের চৌকিদার’ হিসাবে দেখতে— নিদেনপক্ষে দেখাতে— স্বচ্ছন্দ। ‘খাব না, খেতেও দেব না’ ছিল তাঁর শপথবাক্য। ঘটনা হল, তাঁর, তাঁর সরকারের অথবা তাঁর দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যত অভিযোগ গত ন’বছরে উঠেছে, তার কোনওটাই ধোপে টেকেনি। রাফাল দুর্নীতি নিয়ে বিরোধীরা যতই হল্লা করুন, মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা তিন দফা অভিযোগই নাকচ করে দিয়েছিল। তাঁর আমলেই বিপুল ঋণখেলাপি করে নীরব মোদীর মতো ধনকুবের বিদেশে পালিয়েছেন। কিন্তু বিরোধীদের শত চেষ্টাতেও সেই দুর্নীতির কাদা প্রধানমন্ত্রীর গায়ে লাগেনি। সাম্প্রতিক অতীতেও প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানির গোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া বিতর্কে কোনও গোলমালের নিদর্শন খুঁজে পায়নি বিশেষ তদন্তকারী দল। ২০১৮ সালে দেশের ছ’টি বিমানবন্দর বেসরকারিকরণের সময় সংশ্লিষ্ট নিয়মবিধিতে একটি পরিবর্তন ঘটেছিল— স্থির হয়েছিল, এই ক্ষেত্রে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, এমন কোনও গোষ্ঠীও দর হাঁকতে পারবে। ছ’টি বিমানবন্দরই পেয়েছিল আদানি গোষ্ঠী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আদানি গোষ্ঠীকে কোনও বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছেন, এমন কোনও অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি। পিএম কেয়ারস তহবিলের টাকা কী হল, তা জানা যায়নি। যদিও বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থেকে এই তহবিলে জমা পড়েছিল প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা, তবুও সরকার জানিয়েছে যে, এই তহবিল সরকারি নয়, ফলে তথ্যের অধিকার আইনের আওতাতেও পড়ে না। প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রি কী, জানতে তথ্যের অধিকার আইনে মামলা করেছিলেন অরবিন্দ কেজরীওয়াল। আদালত তাঁকেই জরিমানা করেছে। অর্থাৎ, কোনও ভাবেই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনও অভিযোগ টেকেনি।

এখানে এসেই একটি ধাঁধা তৈরি হয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যিনি নাকি এমন সদাজাগ্রত— তেলঙ্গানা থেকে ছত্তীসগঢ়, বিরোধীশাসিত যে কোনও রাজ্যের শাসকদের বিরুদ্ধেই যাঁর রাজনৈতিক অভিযোগের প্রধানতমই হল দুর্নীতি— তিনি কেন দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের নিজের কাছে টানেন? এমন নেতা, যাঁর বিরুদ্ধে দিনকয়েক আগেই তিনি দুর্নীতির বিষোদ্গার করেছিলেন? মহারাষ্ট্রে অজিত পওয়ার-সহ এনসিপি-র যে বিধায়করা বিজেপি সরকারে যোগ দিলেন, তাঁদের চার জনের বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সরকারে যোগদানের দিনকয়েক আগেই প্রধানমন্ত্রী তাঁদের দিকে আঙুল তুলেছিলেন। কিন্তু শুধু তাঁরাই তো নন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত নেতারা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, এবং তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি মিইয়ে গিয়েছে, এমন উদাহরণ কার্যত না খুঁজতেই মেলে— পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান বিরোধী দলনেতার কথাও মনে পড়তে পারে কারও। বিরোধীরা বলছেন, এ এক আজব ‘ওয়াশিং মেশিন’— বিজেপিতে যোগ দিলেই দুর্নীতির যাবতীয় অভিযোগ ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে যায়। আবার লক্ষণীয়, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গত ন’বছরে দুর্নীতির কোনও অভিযোগ টেকেনি। কে জানে, হয়তো এই ভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকদের অন্ধকার পথ থেকে সরিয়ে আনার কৌশল করছেন তিনি ও তাঁরা— অসৎসঙ্গে যাতে সর্বনাশ না হয়, তা নিশ্চিত করছেন! রাজ্যে রাজ্যে বিধায়করা যখন ঝাঁক বেঁধে বিজেপিতে যোগ দেন, ফলে অন্য দলের সরকার পড়ে গিয়ে বিজেপির সরকার গঠিত হয়, কে জানে, তা-ও হয়তো ‘শুদ্ধি’র প্রক্রিয়া মাত্র। যে কোনও সম্ভাবনাই সত্য হতে পারে। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর দল দুর্নীতিকে আশ্রয় দিচ্ছেন, এই সম্ভাবনা সত্য হওয়ার, বা সত্য বলে প্রমাণিত হওয়ার কোনও উপায় নেই। সে অভিযোগ ওঠার পরিসর থাকলে তবে তো প্রমাণের প্রশ্ন।

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi BJP Central Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy