Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Manipur Violence

অপরিমেয় ক্ষত

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভয়ঙ্কর যুদ্ধের আতঙ্ক ভুলতে তাঁদের যে বিশেষ থেরাপি প্রয়োজন, এনএইচএস-এর মাধ্যমে তা পেতে অন্তত দু’বছর অপেক্ষা করতে হবে।

Manipur Violence.

অশান্ত মণিপুর। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:৫৭
Share: Save:

হি‌ংসা এক সময়ে থামে, বিপর্যয়ের রেশ মিলিয়ে আসে। কিন্তু যে চিহ্ন সে মানবজীবনে রেখে যায়, তাকে কাটিয়ে ওঠা সহজ নয়। উপযুক্ত চিকিৎসা বিপন্ন মানুষদের শারীরিক ক্ষত পূরণ করতে পারে, কিন্তু মানসিক ক্ষত অনেক গভীর, ক্ষেত্রবিশেষে পাকাপাকিও। মণিপুরের সাম্প্রতিক জাতিদাঙ্গার পরিস্থিতিই তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ। সেখানে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে মানসিক ক্ষত সবচেয়ে তীব্র— সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছেন সদ্য কলকাতায় ফেরা মণিপুর পিস মেডিক্যাল মিশন-এর সদস্যরা। মৈরাং এবং ইম্ফলে আটটি স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করেছিলেন চিকিৎসকরা। সেখানে নানাবিধ শারীরিক সমস্যা, সংক্রামক রোগের কমতি নেই। আশা, সঠিক এবং সময়মতো চিকিৎসায় হয়তো সেই রোগ নিরাময় হবে। কিন্তু যে উদ্বেগ, আতঙ্ক তাঁদের তাড়া করে ফিরছে, তার চিকিৎসার কী হবে? জাতিহিংসায় চোখের সামনে নিকটজনকে খুন হতে দেখে, পরমপ্রিয় বাসস্থানটিকে পুড়তে দেখে যে অসহ্য যন্ত্রণা তাঁদের সঙ্গী হয়েছে, তার হাত থেকে কি কোনও দিন নিস্তার মিলবে?

যন্ত্রণার এই চিত্র অবশ্য মণিপুরের নিজস্ব নয়। যেখানেই যুদ্ধ বেধেছে, জাতিদাঙ্গা বা সাম্প্রদায়িক হানাহানি দেখা দিয়েছে, সেই সমস্ত জায়গার চিত্রগুলি জড়ো করলে দেখা যায়, বিপন্নদের বাসস্থান এবং শারীরিক চিকিৎসায় যদিও বা কিছু উদ্যোগ করা হয়, মানসিক চিকিৎসার প্রসঙ্গে সেটুকুও থমকে যায়। সম্প্রতি ঠিক এই অবস্থাই দেখা গিয়েছে ব্রিটেনে ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের মধ্যে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভয়ঙ্কর যুদ্ধের আতঙ্ক ভুলতে তাঁদের যে বিশেষ থেরাপি প্রয়োজন, এনএইচএস-এর মাধ্যমে তা পেতে অন্তত দু’বছর অপেক্ষা করতে হবে। মানসিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে এই অপেক্ষার পরিণতি যে মর্মান্তিক হতে পারে, তা অজানা নয়। সে দেশের স্বাস্থ্য এবং সমাজকল্যাণ বিভাগের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, আধিকারিকরা ইউক্রেনীয়দের এই মানসিক ক্ষত সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল এবং তাঁরা শরণার্থীদের পাশেই আছেন। অথচ বাস্তবে, নতুন আসা শরণার্থীদের ক্ষেত্রে সেই ক্ষত নিরাময়ের ব্যবস্থা কী হবে, তার কোনও স্পষ্ট দিশা এখনও মেলেনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রদত্ত এক পরিসংখ্যানে তুলে ধরা হয়েছিল, গত দশ বছরে যে মানুষরা যুদ্ধ বা অন্য সংঘর্ষের শিকার হয়েছেন, তাঁদের প্রতি পাঁচ জনে এক জন অবসাদ, উদ্বেগ, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, স্কিৎজ়োফ্রেনিয়ার মতো নানা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক নির্দেশিকা বলছে, প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে ক্লিনিক্যাল কেয়ার পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে পরিষেবা বিস্তারের কথা। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, বিশেষ ও আপৎকালীন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষেত্রে অনতিবিলম্বে পরিষেবা প্রদানের কথা। কিন্তু বাস্তবে যে তার দেখা মেলে না, তার কারণ মানসিক সমস্যাকে ‘অসুখ’ হিসাবেই গণ্য না করার দীর্ঘলালিত মানসিকতা। যাঁকে প্রতিনিয়ত বাঁচার জন্য মনের সঙ্গে লড়াই করতে হয়, তাঁকে যে অন্য কোনও ভাবে ‘ভাল’ রাখা যায় না— সারা বিশ্বেই এই বোধের তীব্র অভাব। মণিপুর-ফেরত চিকিৎসকদের যেমন আশঙ্কা, ‘নাগাড়ে’ কাউন্সেলিং ছাড়া দুর্গতদের মানসিক অসুস্থতা চিরস্থায়ী হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘ দিনের প্রতিবেশী পরস্পরের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মেতেছে দেখেও যারা নিশ্চেষ্ট, নীরব থাকে, তারা দুর্গতদের সর্বাঙ্গীণ আরোগ্যে উদ্যোগী হবে, এমনটি কষ্টকল্পনামাত্র।

অন্য বিষয়গুলি:

Manipur Violence Violence Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy