কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রটিকে যেন এক ‘নেই’ রোগে ধরেছে। তার প্রথম ও প্রধান অভাবটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়-সহ রাজ্যের ন’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নেই, অস্থায়ী উপাচার্যের মেয়াদ ফুরিয়েছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ও আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য শুরু থেকেই সামলাচ্ছিলেন দার্জিলিং হিল বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বও, সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিও এখন অভিভাবকহীন। ঝাড়গ্রামে সাধু রামচাঁদ মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত রবিবার, স্থায়ী উপাচার্য না থাকায় সমস্যায় পড়েছে সাম্প্রতিক কালে এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় গড়ে ওঠা অন্য দু’-তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ও।
রাজ্য সরকারের উচ্চশিক্ষা দফতর বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে— উপাচার্য না থাকায় কী কী সমস্যা হচ্ছে তা জানতে চেয়ে। সেই রিপোর্টও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঠিয়ে দিয়েছেন, সে অন্য কথা। কিন্তু এই কি রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ভবিতব্য, উপাচার্য না থাকলে কী কী সমস্যা হয় বা হতে পারে তা রিপোর্ট পাঠিয়েই জানাতে হবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান মানেই হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর বছরভর পড়াশোনা, একের পর এক পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ, গবেষণা-সহ বিরাট এক কর্মযজ্ঞ, উপাচার্য তার প্রধান যাজ্ঞিক— তাঁর নেতৃত্বে ও তত্ত্বাবধানেই সমগ্র ব্যবস্থাটি পরিচালিত হয়। আবার শুধু ছাত্রছাত্রীরাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মী, কর্মসমিতি, ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল, রিসার্চ বোর্ড থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার অন্তর্গত গুরুত্বপূর্ণ ‘এজেন্সি’গুলি উপাচার্যের মতামত ও সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, এমনকি অস্থায়ী উপাচার্যও না থাকায় চাপ পড়ছে প্রো-ভিসি, রেজিস্ট্রার, ফিনান্স অফিসারদের উপর, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পদগুলির মেয়াদও ফুরোনোর মুখে, অথচ উপাচার্য না থাকায় সেই দায়িত্বও কাউকে দেওয়া যাচ্ছে না।
ফলত রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যে ছবিটি দেখা যাচ্ছে তা খুবই উদ্বেগের— কোথাও পরীক্ষার পরে কয়েক মাস কেটে গেলেও ফল প্রকাশ করা যাচ্ছে না, কোথাও সিদ্ধান্তের অভাবে অফলাইন পঠনপাঠন আজও চালু হয়নি, পিএইচ ডি-র মতো ডিগ্রি দেওয়া যাচ্ছে না, কোথাও অর্থ সংক্রান্ত লেনদেন বন্ধ হয়ে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বেতন বা অবসরপ্রাপ্তদের আর্থিক সুবিধা আটকে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সর্বোপরি উপাচার্য না থাকায় করা যাচ্ছে না কর্মসমিতির বৈঠক, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জরুরি সিদ্ধান্তগুলি যে বৈঠকে গৃহীত হয়। উচ্চশিক্ষা দফতর বলছে কোনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে উপাচার্য পদ ফাঁকা হওয়ার আগেই তা আচার্য তথা রাজ্যপালকে জানানো হয়েছে, কিন্তু তাঁর তরফে কোনও সিদ্ধান্ত না হওয়াতেই পদপূরণ হয়নি। কিন্তু সমস্যা স্রেফ দেরির নয়, সমস্যা রাজ্য সরকারের মানসিকতার— কখনও পছন্দের মানুষটিকে পদে বসানো নিয়ে আদালতের সঙ্গে টানাপড়েন, কখনও স্রেফ গড়িমসি, বা অস্থায়ী উপাচার্যের মেয়াদ যথাসাধ্য বাড়িয়ে চলা। শুধু নানা জেলায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলেই হয় না, নতুন-পুরনো সব বিশ্ববিদ্যালয়েই স্থায়ী উপাচার্য যে এক অবিসংবাদিত প্রয়োজন, এই সরকার তা আর কবে বুঝবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy