—প্রতীকী ছবি।
আইন কার জন্য? নাগরিকের জন্য, তাঁরই সুবিধায়। কিন্তু আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের কাজটি যাঁদের উপর ন্যস্ত তাঁরাই অনেক সময় এমন আচরণ করেন, যা হয়ে পড়ে নাগরিকের অসুবিধার কারণ। নবদ্বীপের এক মহিলা তাঁর সন্তানের জন্মের শংসাপত্রে পিতৃপরিচয় বদলাতে চাইলে পুরসভা তাঁর আবেদন খারিজ করে এই যুক্তিতে যে, জন্মের শংসাপত্রের আইন অনুযায়ী এক বার নথিভুক্ত তথ্য বদলানো সম্ভব নয়। অথচ, মহিলার এর মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে এবং তিনি দ্বিতীয় বার বিয়ে করেছেন, দ্বিতীয় স্বামী প্রথম পক্ষের সন্তানকে নিজের সন্তান হিসাবে গ্রহণ করেছেন, এমনকি শিশুটির জন্মের শংসাপত্রে পিতৃপরিচয় বদলের ক্ষেত্রে প্রথম স্বামীরও আপত্তি নেই। পুরসভা তাঁর আবেদন খারিজের পর মহিলা কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করলে মাননীয় বিচারপতি বলেছেন, আইনে তথ্য সংশোধনের উপায় বলে দেওয়া আছে, সেই অনুযায়ী জন্মের শংসাপত্রে শিশুটির পিতৃপরিচয় বদলানো সম্ভব, অবিলম্বে যেন তা করা হয়।
এ তো গেল কাজের কথা। কিন্তু এরই সূত্রে মাননীয় বিচারপতির বৃহত্তর পর্যবেক্ষণগুলি অতি জরুরি, কারণ তা একই সঙ্গে আইনের কড়াকড়ি এবং সমাজ বদলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তার নমনীয় হওয়ার প্রয়োজনটিও তুলে ধরে। জন্মের শংসাপত্র ব্যক্তি তথা নাগরিকের পরিচয় সংক্রান্ত অতি গুরুত্বপূর্ণ এক নথি, তাকে অভ্রান্ত ধরে নেওয়া হয় বলেই তার আইনটিও কড়া। কিন্তু যে কোনও আইনই তৈরি হয় তার সময় ও সমাজের প্রেক্ষাপটে, এবং মনে রাখা দরকার, যুগ বদলের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন আসে সমাজের গড়নে ও মনে, নাগরিকের জীবনধারা ও মূল্যবোধেও। এ ভাবেই বিবাহের পাশাপাশি বিবাহবিচ্ছেদ ও পুনর্বিবাহ এখন ঘটমান বাস্তব; কেউ চাইতেই পারেন সন্তানের জন্মের শংসাপত্রে তার পুরনো সম্পর্কের ভার বা ছাপ না থাকুক। আবার যে শিশু জন্মদাতাকে নয়, দ্বিতীয় কাউকে বাবা বলে চিনছে, বড় হয়ে জন্ম-নথিতে অন্য কোনও নাম আবিষ্কার তার জন্য কষ্টের ও অসম্মানের হতে পারে, সম্পর্কে তৈরি করতে পারে অস্বস্তি। সমাজে এই জটিলতা যাতে না হয়, সে কথা মাথায় রেখে তাই আইনকে অচল ও স্থাণু হলে চলবে না, হতে হবে সচল, যুগোপযোগী।
সমগ্র বিষয়টিরই মূল কথা: সাধারণ মানুষ তথা নাগরিকের স্বার্থে, সময়ের সঙ্গে তাল রেখে চলবে আইন। এর মানে আইনের প্রয়োগে আপস করা নয়, সমাজের মূল্যবোধের রূপান্তরকে সহজ সত্য বলে গ্রহণ করে আইনকে সহিষ্ণু, গ্রহণশীল করে তোলা। আবার উল্টো দিকে এ-ও সত্য, পরিবর্তনশীল সময়ের দোহাই দিয়ে, আইনকেই প্রাচীনপন্থী ও রক্ষণশীল বলে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নাগরিক নিজের স্বার্থসিদ্ধি করবেন না। আইনকে যেমন নাগরিকের মনও বুঝতে হবে, নাগরিককেও তেমনই আইনের অপব্যবহার করলে চলবে না। আইনি কঠোরতার জেরে নাগরিকের দুর্দশা যেমন এই ভারতে সত্য, তেমনই আইনের কড়াকড়িকে কাজে লাগিয়ে সহনাগরিককে প্যাঁচে ফেলাও আজ ঘটমান বাস্তব। তা যাতে না ঘটে, নজর রাখতে হবে সেই দিকেও। শাসনব্যবস্থায় ‘চেকস অ্যান্ড ব্যালান্স’-এর ধারণাটি বহুলপরিচিত, আইনের ক্ষেত্রেও তা সমান জরুরি। ধরে থাকা আর ছেড়ে রাখার আইনি ভারসাম্যই নাগরিকের সামাজিক স্থিতির প্রাণভ্রমরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy