প্রতীকী ছবি।
কর্তব্যরত চিকিৎসকদের উপর আক্রমণে উদ্বিগ্ন প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা। চিকিৎসক দিবস উপলক্ষে তিনি বলিয়াছেন, ভারতে চিকিৎসকের সংখ্যা অপ্রতুল, পরিকাঠামো ও ঔষধ পর্যাপ্ত নহে, প্রযুক্তিও পুরাতন। চিকিৎসাক্ষেত্র সরকারের নিকট প্রাধান্য পায় নাই। অপর দিকে, বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত লাভের জন্য উন্মুখ। অন্যের এই সকল ব্যর্থতার জন্য আক্রান্ত হইতেছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসাব্যবস্থার মজ্জাগত রোগ যথার্থই নির্ণয় করিয়াছেন প্রধান বিচারপতি। সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজন নানাবিধ পরীক্ষার ব্যবস্থা, আধুনিক সরঞ্জাম-সহ উন্নত পরিকাঠামো, এবং পর্যাপ্ত সংখ্যায় প্রশিক্ষিত সহায়ক। সর্বোপরি, চিকিৎসকের কাজের পরিবেশ হইবে নিরাপদ, সুশৃঙ্খল এবং স্বাস্থ্যকর। সরকারি হাসপাতালে এই প্রাথমিক চাহিদাগুলিও দুষ্প্রাপ্য। অপর দিকে, নামী-দামি বেসরকারি হাসপাতালগুলি দর্শনধারী হইলেও, চিকিৎসকের স্বাতন্ত্র্য সেখানে ব্যাহত হইতে পারে বাণিজ্যিক স্বার্থে। বিনিয়োগকারীদের সন্তুষ্ট করিতে চিকিৎসকরা অহেতুক পরীক্ষা করাইতেছেন, ঔষধ লিখিতেছেন, অযথা অস্ত্রোপচার করিতেছেন— এমন অভিযোগ প্রায়ই উঠে।
ইহাতে চিকিৎসকের সহিত রোগীর সম্পর্ক দূষিত হইয়াছে। হাসপাতাল পরিচালনা বিষয়ে সিদ্ধান্ত যাঁহারা নেন, সরকারি অথবা বেসরকারি ক্ষেত্রের সেই কর্তারা রোগীর পরিজনের ধরাছোঁয়ার বাহিরেই থাকিয়া যান। যে আধিকারিক পরীক্ষা করিবার যন্ত্র সারাইবার আবেদনের ফাইলটি চাপিয়া বসিয়া থাকেন, তাঁহার নাম রোগী জানেন না। রোগীর পরিজন সকল দায়িত্ব কেবল চিকিৎসকের উপরেই ন্যস্ত করিতে অভ্যস্ত। বিনা চিকিৎসায় স্বজনকে হারাইবার ক্ষোভ, অথবা চিকিৎসা করাইতে গিয়া সর্বস্বান্ত হইবার আক্রোশ, সকলই আছড়াইয়া পড়ে চিকিৎসকদের উপরে। রোগীর প্রতি অবহেলা, অথবা রোগীর পরিজনদের শোষণ করিবার অভিযোগে চিকিৎসক প্রহৃত হইয়াছেন, তাঁহাকে সমন পাঠাইয়াছে আদালত। এই সমস্যার সমাধান করিতে চিকিৎসক সংগঠনগুলি দুষ্কৃতীদের আরও কঠোর শাস্তি, হাসপাতালে আরও পুলিশ মোতায়েন, চিকিৎসকের আরও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার দাবিই বারংবার করিয়াছে। রোগী এবং চিকিৎসক যেন দুই যুযুধান পক্ষ হইয়া উঠিয়াছে। অথচ, প্রকৃতপক্ষে চিকিৎসক ও রোগী, উভয়েরই ঝুঁকি ক্রমশ বাড়িয়াছে। দুই পক্ষকেই বিপন্ন করিতেছে অপর কোনও ব্যর্থতা।
এই ব্যর্থতার প্রকৃতি অজ্ঞাত নহে। স্বাস্থ্য পরিষেবার বিপুল প্রয়োজনের তুলনায় সরকারি বরাদ্দ সামান্য, তাহারও অধিকাংশ বেতন এবং বিমার প্রিমিয়ামে চলিয়া যায়। চিকিৎসা পরিকাঠামোর উন্নয়নে ব্যয় বাড়ে না। বেসরকারি হাসপাতালগুলির উপর নিয়ন্ত্রণের যথাযথ ব্যবস্থাও নাই। তাহার উপর রহিয়াছে রাজনৈতিক দাদাগিরি। মেডিক্যাল কলেজ-সহ সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলিকে স্বাতন্ত্র্য দিবার অনিচ্ছা সেগুলিকে অদক্ষ, অপচয়প্রবণ করিয়া তুলিতেছে। হাসপাতাল পরিচালনায় চিকিৎসকদের প্রয়োজন ও পরামর্শ উপেক্ষা করিতেছেন আধিকারিক ও নেতারা। চিকিৎসকদের সম্মান করিতে হইলে তাঁহাদের কথার মূল্য দিতে হইবে। শঙ্খ কিংবা থালা বাজাইয়া, অথবা বৎসরে এক দিন অনুষ্ঠান করিয়া সম্মানপ্রদর্শন নিরর্থক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy