Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Karnataka Teacher Sacked

অজ্ঞানতা

শাস্ত্র পুরাণ ইতিহাস সাহিত্য সবই সগর্ব সহাবস্থানে থাকবে এমনটাই কাম্য, বিশেষ করে বিদ্যায়তনে। সে কথাটি ছাত্রদের বোঝাবেন যাঁরা, সেই শিক্ষকদেরই স্কুলছাড়া হতে হলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

school

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:০৭
Share: Save:

অসহিষ্ণুতা ও অজ্ঞানতার মধ্যে সম্পর্কটি ঘনিষ্ঠ, এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কার্য-কারণের। তা-ই আরও এক বার প্রমাণিত হল কর্নাটকে: ক্লাসে পড়াতে গিয়ে রামায়ণ-মহাভারতকে ‘কাল্পনিক’ বলায় শোরগোলের জেরে এক প্রাথমিক শিক্ষিকা বরখাস্ত হলেন। ঘটনাটি রাজনৈতিক, কারণ এ ক্ষেত্রে শোরগোল তুলেছিল স্থানীয় হিন্দুত্ববাদী সংগঠন, তারাই অভিযোগ করেছে যে শিক্ষিকা নাকি শুধু রামায়ণ-মহাভারতকেই অপমান করেননি, সাম্প্রতিক নানা ঘটনার সূত্রে বাজে কথা বলেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কেও, কিন্তু তাঁর আসল ‘অপরাধ’ পড়াতে গিয়ে শ্রীরামচন্দ্রকে ‘পৌরাণিক চরিত্র’ বলা। স্কুলটি কনভেন্ট পরিচালিত, সুতরাং হিন্দুত্ববাদীদের দুইয়ে দুইয়ে চার করতে সময় লাগেনি। পরিণতি: এর মধ্যেই শিক্ষা প্রশাসন তদন্তে নেমেছে, স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষিকাকে পত্রপাঠ বরখাস্ত করে ক্ষমাপ্রার্থনার বিবৃতি দিয়েছেন ইত্যাদি।

এমন নয় যে, এ-হেন ঘটনা প্রথম ঘটল। গত বছর বরোদার এক স্কুলেও এক শিক্ষিকা রামায়ণকে ‘অলীক’ বলায় হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর হইচই; পঞ্জাবের এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বরখাস্ত হয়েছিলেন রামকে ‘অপমান’ করার অভিযোগে। দেখা যাবে এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে জনপরিসরে, সভামঞ্চে— সমাজমাধ্যমের কথা বাদই দেওয়া গেল। কিন্তু স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসরে এমন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া গুরুতর আশঙ্কা জাগায়, এগুলি ‘শিক্ষা’প্রতিষ্ঠান বলেই। কোন শিক্ষক পড়ানোর সময় কী বলবেন, তার কতটুকু তাঁর ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও বোধের বৃত্ত থেকে উচ্চারিত হবে আর কতটুকু হবে স্রেফ বইয়ের পাতার নির্দোষ পুনরাবৃত্তি, তার গণ্ডি কেউ বেঁধে দেয়নি। বস্তুত তা বেঁধে দেওয়ারও নয়, তা শিক্ষকের ব্যক্তিসত্তা ও শিক্ষক-সত্তার নিজস্ব বোঝাপড়া। আবার শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ প্রশ্ন তোলা, এমনকি বইয়ে যা লেখা আছে তা নিয়েও। অনেক ক্ষেত্রে তার সূচনা করতে হয় শিক্ষককেই, বিষয়টি অস্বস্তির বা স্পর্শকাতর জেনেও। তবু ক্লাসে পড়াতে গিয়ে যে কথা উঠছে তা একান্তই ক্লাসঘরের ব্যাপার, সেখানেই তর্ক ও নিষ্পত্তিও কাঙ্ক্ষিত। কর্নাটকের ঘটনা এ কারণেই দুর্ভাগ্যের, এ ক্ষেত্রে তা গিয়ে পড়ল স্কুল ডিঙিয়ে ধর্মীয় রাজনীতির কারবারিদের হাতে, এবং ফল যা হওয়ার তা-ই হল।

রাজনীতির স্বভাবই দখলদারি, সে ভোটব্যাঙ্কেরই হোক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। তর্কের খাতিরে সে কথা সরিয়ে রেখেও বলা যায়, কর্নাটকের স্কুলের ঘটনার আর একটি দিক আছে যা একান্ত ভাবেই শিক্ষা বিষয়ক— বলা ভাল শিক্ষার অজ্ঞানতা বিষয়ক। বিশ্বের যে কোনও প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতিতেই ইতিহাস, পুরাণ ও সাহিত্য সবই আছে, তাদের মধ্যে অনর্গল দেওয়া-নেওয়াও আছে। ধর্মবিশ্বাসে যিনি পূজ্য দেবতা, সাহিত্যে তিনি দোষগুণধারী, জন্ম-মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যাওয়া মানুষ— এমনটা হয়েই থাকে, তাতেই তার বৈচিত্র ও সৌন্দর্য। পুরাণ ও ইতিহাসকে পৃথক জেনে, তাদের মতো করে রসাস্বাদনই প্রকৃত পাঠের উদ্দেশ্য। ধর্মের কিছু উপাত্ত ইতিহাসলগ্ন বলেই তাদের ‘ইতিহাস’ বলে দাগিয়ে দেওয়া কাজের কাজ নয়, আর তা নিয়ে হেনস্থা-হাঙ্গামা তো কখনওই নয়। শাস্ত্র পুরাণ ইতিহাস সাহিত্য সবই সগর্ব সহাবস্থানে থাকবে এমনটাই কাম্য, বিশেষ করে বিদ্যায়তনে। সে কথাটি ছাত্রদের বোঝাবেন যাঁরা, সেই শিক্ষকদেরই স্কুলছাড়া হতে হলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

অন্য বিষয়গুলি:

Karnataka school Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy