Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Supreme Court of India

সুবিচার

ধর্ষণ বা যৌন নিগ্রহের মামলায় শীর্ষ আদালতকে আচরণবিধি বাঁধিয়া দিতে হইল কেন, এই প্রসঙ্গে কেহ মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের ইনদওর বেঞ্চের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গ উত্থাপন করিতে পারেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২১ ০৫:৩৭
Share: Save:

চিকিৎসক কড়া ঔষধ দিবার অর্থ, রোগ কঠিন হইয়াছে। সুপ্রিম কোর্ট যে নিম্ন আদালতগুলির জন্য যৌন নিগ্রহের মামলায় পালনীয় বিধি জারি করিল, ইহাও তেমনই এক সঙ্কটের ইঙ্গিত। নারী নির্যাতনের মামলায় বহু আদালত এমন অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছে, যাহা নারীমর্যাদার পরিপন্থী। ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিনের শর্ত নির্দিষ্ট হইয়াছে ধর্ষিতাকে বিবাহ— নানা রাজ্যে এমন দৃষ্টান্ত ভূরি ভূরি। সম্প্রতি ভারতের মাননীয় প্রধান বিচারপতিও একটি মামলায় ধর্ষণে অভিযুক্তের আইনজীবীকে প্রশ্ন করিয়াছিলেন, তাঁহার মক্কেল অভিযোগকারিণীকে বিবাহ করিতে সম্মত কি না। বিস্তর শোরগোল পড়িতে প্রধান বিচারপতি জানাইয়াছিলেন যে, তিনি কেবল অভিযুক্তের অভিপ্রায় জানিতে চাহিয়াছিলেন। প্রশ্ন উঠিতে পারে, মেয়েটির অভিপ্রায় কি কেহ জানিতে চাহিয়াছিল? সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা দেখিয়া কেহ প্রশ্ন করিতে পারেন, তবে কি শীর্ষ আদালত স্বীকার করিয়া লইল যে, দেশের বিচারব্যবস্থার উপর পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা ছায়া ফেলিতেছে? যাহাই হউক না কেন, শীর্ষ আদালত বিশেষ ধন্যবাদার্হ— এই বিপদটিকে চিহ্নিত করিবার জন্য, এবং তাহা সংশোধনে তৎপর হইবার জন্য।

ধর্ষণ বা যৌন নিগ্রহের মামলায় শীর্ষ আদালতকে আচরণবিধি বাঁধিয়া দিতে হইল কেন, এই প্রসঙ্গে কেহ মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের ইনদওর বেঞ্চের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গ উত্থাপন করিতে পারেন। ওই বেঞ্চ যৌন নিগ্রহের অভিযোগে কারারুদ্ধ এক ব্যক্তির জামিন পাইবার অন্যতম শর্ত রাখিয়াছে এই যে, অভিযুক্তকে রাখির দিন অভিযোগকারিণীর বাড়ি গিয়া রাখি পরিয়া আসিতে হইবে। এই অবস্থানে কয়টি কথা স্পষ্ট। এক, নিগৃহীতা মেয়েটির সিদ্ধান্তকে মূল্য দিতে রাজি নহে আদালত। যে নিগ্রহকারী, তাহাকে ‘স্বামী’ অথবা ‘ভাই’ বলিয়া গ্রহণ করিতে তাঁহার আপত্তি হইবে না, তাহা ধরিয়াই লওয়া হইতেছে। তাই ধর্ষণে অভিযুক্তের মত জানিতে চাহিলেও, ধর্ষিতার মতামত পূর্বে জানিতে চাহেন নাই বিচারপতি। দুই, ইহা প্রকারান্তরে পারিবারিক হিংসায় সমর্থন। যে অপরিচিত ব্যক্তি নারী নির্যাতনে কারারুদ্ধ হইয়াছে, ‘স্বামী’ বা ‘ভাই’ হইতে রাজি হইলে সে-ই জামিনে মুক্তি পাইবে।

কেহ বলিতে পারেন, আদালত সমাজ-বহির্ভূত কোনও প্রতিষ্ঠান নহে। সমাজের রীতিনীতির প্রতিফলন ঘটিবে বিচারপতির বিবেচনাতে, তাহা প্রত্যাশিত নয় কি? উত্তরে বলিতে হয়, এই প্রত্যাশা অসঙ্গত। সামাজিক রীতির মধ্যে নানা অন্যায় বিধৃত রহিয়াছে। সেগুলিকে বাতিল করিবার উদ্দেশ্যেই ভারতীয় সংবিধান লিঙ্গ-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের সমান মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করিয়াছে। আইন ও আদালত সেই আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করিবে, ইহাই যথাযথ প্রত্যাশা। আদালত যখন মেয়েদের স্বতন্ত্র সত্তা অস্বীকার করিয়া তাঁহাদের ‘পত্নী’ অথবা ‘ভগিনী’-র ছাঁচে ফেলিতে চাহে, তখন তাহার সেই বিচার কি সংবিধান-প্রদর্শিত সাম্যের পথে চলিতেছে? বিবাহ করিবার, রাখি পরিবার নির্দেশ বস্তুত এই ধারণাকে অনুমোদন দেয় যে, স্ত্রী অথবা ভগিনী রূপেই মেয়েরা সম্মানের যোগ্য, যাহা নারীকে মর্যাদা দানের কর্তব্যকে কেবল পারিবারিক গণ্ডির মধ্যে বাঁধিয়া রাখে। আধুনিক ভারতে এই ধারণা অচল। আজ পরিবারের ভিতরে অথবা বাহিরে, সর্বত্রই মেয়েদের দেহ-মনের উপর তাহারই সম্পূর্ণ স্বত্বাধিকার স্বীকার করিতে হইবে। তাই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এ এম খানউইলকর নির্দেশ দিয়াছেন, অভিযুক্ত ও অভিযোগকারিণীর মধ্যে সম্পর্ক রাখিবার প্রয়োজন হয়, জামিনের জন্য এমন কোনও শর্ত ধার্য করা চলিবে না। অভিযুক্তের সহিত আপস বা রফা করিতে উৎসাহ দেওয়া চলিবে না। অভিযোগকারিণীর আত্মবিশ্বাসে আঘাত করা চলিবে না। এমন নির্দেশ বুঝাইয়া দেয়, ন্যায়বিচার পাইবার পথ মেয়েদের জন্য আজও কত দুর্গম।

অন্য বিষয়গুলি:

Supreme Court of India Rape Victims
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy