Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Israel Palestine Conflict

প্রতিকারহীন

নেতানিয়াহুর লক্ষ্য সুস্পষ্ট। প্রথমত, হামাসকে ধ্বংস করা; দ্বিতীয়ত, কেবল গাজ়ায় নয়, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক অর্থাৎ জর্ডন নদীর পশ্চিম তীরবর্তী ভূখণ্ড-সহ প্যালেস্টাইনের সমগ্র এলাকায় ইজ়রায়েলের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা।

Israel Palestine Conflict

যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজ়া। ছবি: রয়টার্স।

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৩৩
Share: Save:

বিধ্বস্ত, বন্ধ হয়ে যাওয়া হাসপাতালের যত্রতত্র মৃতদেহ, বাতাসে পচনের গন্ধ, ভূ-তলে গণকবর। ইনকিউবেটর অচল, অতএব সদ্যোজাত শিশুদের দেহ টিনের পাতে মুড়ে গরম জলের পাশে রাখা, কিংবা পাশাপাশি শোয়ানো— যাতে পরস্পরের দেহের উত্তাপ তাদের বাঁচাতে পারে। এমন অ-কল্পনীয় দৃশ্যাবলিতেও দুনিয়ার দর্শকরা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। হাসপাতালে হামাস-এর আত্মগোপনের ভয়ঙ্কর কৌশল এবং হিংস্র আক্রমণের ‘জবাব’ দিতে গাজ়া ভূখণ্ডে ইজ়রায়েলের সেনাবাহিনীর দুর্নিবার ধ্বংসলীলা অব্যাহত। বিপর্যয়ের প্রকৃত পরিমাপ কারও জানা নেই। কমপক্ষে পনেরো লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া। অন্তত দশ হাজারের বেশি অধিবাসী মৃত, তার একটি বিরাট অংশ শিশু। পৃথিবীর ইতিহাসে যুদ্ধ বা সংঘর্ষে এই অনুপাতে শিশু-নিধন অভূতপূর্ব। এই বিষয়ে সমস্ত নিন্দা ও প্রতিবাদকে একবাক্যে উড়িয়ে দিয়ে নেতানিয়াহুর যান্ত্রিক জবাব: এই পরিস্থিতির জন্য হামাসই দায়ী, কারণ তারা অসামরিক নাগরিকদের ‘ঢাল’ হিসাবে ব্যবহার করছে, বিশেষত হাসপাতালগুলি তাদের অন্যতম প্রধান ঘাঁটি এবং রক্ষাকবচ। এই ‘যুক্তি’র মর্মার্থ: শত্রুপক্ষের ঢাল বা রক্ষাকবচ তাঁরা ধ্বংস করবেনই, সে জন্য অসহায় নাগরিক এবং নবজাত শিশু-সহ অগণন মানুষের প্রাণহানি ঘটলেও কিছু করার নেই! এই সহস্রাব্দের গোড়ায় আফগানিস্তানে আমেরিকার আক্রমণের সময় সাধারণ নাগরিকের প্রাণহানি সম্পর্কে ব্যবহৃত হয়েছিল ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’ শব্দবন্ধটি। আনুষঙ্গিক ক্ষয়ক্ষতির সেই ধারণাকে ইজ়রায়েলের রাষ্ট্রনায়ক এক নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিতে পেরেছেন।

নেতানিয়াহুর লক্ষ্য সুস্পষ্ট। প্রথমত, হামাসকে ধ্বংস করা; দ্বিতীয়ত, কেবল গাজ়ায় নয়, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক অর্থাৎ জর্ডন নদীর পশ্চিম তীরবর্তী ভূখণ্ড-সহ প্যালেস্টাইনের সমগ্র এলাকায় ইজ়রায়েলের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা। স্বতন্ত্র প্যালেস্টাইনের অস্তিত্ব তিনি সরাসরি অস্বীকার করেননি, কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহের ঘটনাবলির পরে ‘দুই রাষ্ট্র’ সমন্বিত সমাধান সুদূরপরাহত বলাই যায়। নেতানিয়াহু নিজের হাতে কত দিন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন, সে প্রশ্ন এখন গৌণ। কিন্তু তাঁর ‘চরম অভিযান’ ইতিমধ্যেই প্যালেস্টাইন সঙ্কটকে যেখানে এনে ফেলেছে, তার মোকাবিলায় কোনও পুরনো অঙ্কই আর কার্যকর হতে পারে না। প্যালেস্টাইনের মানুষের নিজস্ব বাসভূমি ও স্বশাসনের ভবিষ্যৎ অনেক দিন ধরেই দূরে সরে যাচ্ছিল, অতঃপর তা হয়তো সম্পূর্ণ বিলীন হতে চলেছে। আক্ষরিক অর্থেই তাঁদের অস্তিত্ব গভীর সঙ্কটে।

কূটনীতির পরিসরে এই সঙ্কটের সুরাহার কিছুমাত্র ভরসা আজ আর অবশিষ্ট নেই। রাষ্ট্রপুঞ্জ নামক প্রতিষ্ঠানটি কার্যত সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক একটি অলঙ্কারে পরিণত। ওয়াশিংটন রকমারি সবিনয় নিবেদনেই নিজেকে সীমিত রেখেছে এখনও পর্যন্ত। কোনও ‘বড়’ দাবি করলে এবং ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী সেই দাবি না মানলে দুনিয়ার হাটে ‘এক নম্বর মহাশক্তি’র বড় রকমের অমর্যাদা হবে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন হয়তো সেই ঝুঁকি নিতে নারাজ। কিন্তু অন্য কারণও থাকতে পারে। এই মুহূর্তে সৌদি আরব থেকে ইরান, কেউই ইজ়রায়েলের সঙ্গে বড় রকমের সংঘাতে যেতে চায় না। বৃহত্তর পরিসরেও চিন, রাশিয়া বা সম্মিলিত ইউরোপ কেউই চায় না যে, ইউক্রেনের পরে নতুন রণাঙ্গন তৈরি হোক। এই পরিপ্রেক্ষিতেই ভারতের কূটনীতিও ‘ভারসাম্য’ বজায় রাখতে সচেষ্ট, রাষ্ট্রপুঞ্জে সাম্প্রতিকতম অবস্থানটি তারই পরিচয় দেয়। কাজটি কঠিন, এতটাই কঠিন যে আগামী জি২০ সম্মেলনে ভার্চুয়াল সভায় বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতার বক্তৃতার সময় অন্যদের পর্দায় মুখোমুখি দেখানো না হতে পারে— এতদ্দ্বারা এক বছরের গোষ্ঠীপতি ভারতের অস্বস্তি এড়ানো যাবে! অতএব, কূটস্য কূট নীতির ঘূর্ণিপাকে গাজ়ার শিশু এবং তাদের অভিভাবকরা হামাস বনাম নেতানিয়াহুর মহা-যুদ্ধের বলি হয়ে চলবে, এমনটাই তাদের ভবিতব্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Israel Palestine Conflict Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy