Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Fisheries

সামর্থ্যের প্রশ্ন

খরচে অপারগতার এই ‘সঙ্কট’ রাজ্যের বরাদ্দ ও ব্যয়ের জটিল ছবিটিকে সামনে আনে। এক দিকে কেন্দ্রীয় সরকার একশো দিনের কাজ, আবাসন প্রভৃতি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ বন্ধ করেছে।

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৪
Share: Save:

টাকা পড়ে থাকে, কাজ হয় না— পশ্চিমবঙ্গের এই সঙ্কট এখন অতিপরিচিত। ফের সামনে এল এই প্রশ্ন মৎস্য-সূত্রে। গত বছর মাছের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর সরকার ২০২৩-২৪ সালের বাজেটে মৎস্য দফতরের জন্য বরাদ্দ করেছিল চারশো কোটি টাকা। ওই টাকায় বিভিন্ন জেলায় পুকুরে বড় আকারের মাছ চাষ হবে, চাষির রোজগার বাড়বে, এমনই পরিকল্পনা ছিল। বছরের দশ মাস কেটে গিয়েছে, এক-চতুর্থাংশ টাকাই খরচ হয়নি। ক্ষুদ্র মাছ চাষিরা তাঁদের প্রত্যাশিত সহায়তা পাননি। মৎস্য দফতরের অধীনে ডিরেক্টরেট এবং সচিবালয়ের মধ্যে সমন্বয় না থাকার জন্যই বরাদ্দ খরচ হয়নি, এমন ব্যাখ্যা মিলেছে দফতর সূত্রে। ব্যাখ্যা নানা প্রকার হয়ে থাকে। তবে মৎস্য দফতরের বাজেট দেখলে প্রশ্ন জাগে, দীর্ঘ দিন ধরে একটিই দফতরের মধ্যে দু’টি বিভাগের সমন্বয়ের অভাব চলতে পারে কী করে? ২০২২-২৩ সালে পুকুরের মাছ চাষের পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য বরাদ্দ হয়েছিল কুড়ি কোটি আশি লক্ষ টাকা, তার চার কোটি টাকাও খরচ হয়নি। ফলে ২০২৩-২৪ সালে বরাদ্দই হয়েছে কম— ন’কোটি টাকা। তেমনই, মাছ পরিবহণের ‘কোল্ড চেন’ তৈরির জন্য পাঁচ কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ হয়েছিল গত অর্থবর্ষে, খরচ হয়েছে তার অর্ধেকেরও কম। নতুন মাছের বাজার তৈরির জন্য বরাদ্দ হয়েছিল প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা, এক কোটি টাকাও খরচ হয়নি। এ থেকে বোঝা যায়, খরচ করার সামর্থ্য তৈরি হয়নি মৎস্য দফতরের।

এই ব্যর্থতা কেন? প্রকল্পগুলির রূপায়ণে কোথায় খামতি থেকে যাচ্ছে? তার কোনও পর্যালোচনা না করেই কেন ফের বাজেট তৈরি হচ্ছে, নতুন করে টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে? সেই সঙ্গে আবার ঘোষণা করা হচ্ছে নতুন নতুন প্রকল্প। পুরনো প্রকল্পের ব্যর্থতা থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই যেন নতুন ঘোষণার প্রয়োজন হচ্ছে। মৎস্য দফতর এই সঙ্কটের একটি দৃষ্টান্ত মাত্র। রাজ্য সরকারের প্রায় যে কোনও বিভাগের বাজেটের দিকে তাকালেই চোখে পড়ে অব্যবহৃত টাকার পরিমাণ, যা প্রায়ই ব্যবহৃত টাকার অঙ্ককে কয়েকগুণ ছাড়িয়ে গিয়েছে। একই চিত্র রাজ্যের পঞ্চায়েত ব্যবস্থাতেও। ২০২০-২১ সাল থেকে পর পর তিন বছরে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকার পূর্ণ খরচ করা যায়নি। অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা, যা দেখেশুনে গত বছর সেপ্টেম্বরে রাজ্য সরকার নির্দেশ দিয়েছিল, দৈনিক ৬০ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। বলা বাহুল্য, সব ক’টি জেলা মিলিয়েও টাকা খরচের অমন দৈনিক লক্ষ্যে পৌঁছনো যায়নি। তার কারণ, গ্রামের স্তরে প্রকল্পগুলির আকার ছোট, বেশি টাকা খরচ করতে অনেক প্রকল্প সমান্তরাল ভাবে চালানো প্রয়োজন। প্রকল্প শুরুর ছাড়পত্র পাওয়ার প্রশাসনিক শর্তগুলি পূরণ করা সময়সাপেক্ষ, হঠাৎ নির্দেশ দিলেই প্রকল্প শুরু করা সম্ভব নয়। গভীর ‘সঙ্কট’, সন্দেহ নেই।

খরচে অপারগতার এই ‘সঙ্কট’ রাজ্যের বরাদ্দ ও ব্যয়ের জটিল ছবিটিকে সামনে আনে। এক দিকে কেন্দ্রীয় সরকার একশো দিনের কাজ, আবাসন প্রভৃতি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ বন্ধ করেছে। পাশাপাশি বরাদ্দের সদ্ব্যবহার করতে রাজ্য সরকার যথেষ্ট দক্ষ এবং তৎপর হতে পারছে না। এবং একই সঙ্গে চলেছে সরকারি টাকার অবাধ অবৈধ খরচ। অর্থ দফতরের অনুমোদন ছাড়াই মৎস্য উন্নয়ন নিগমের মন্ত্রী-আধিকারিকদের গাড়ির খরচ বাবদ মাসে চার লক্ষ টাকা ব্যয় হচ্ছে, অথচ অস্থায়ী কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না— এই সংবাদ প্রশাসনিক ব্যবস্থার চূড়ান্ত অনিয়মকে সামনে নিয়ে আসে। প্রশাসনিক নিয়মের কঠোর শৃঙ্খলার স্থানটি যদি নেয় রাজনৈতিক নির্দেশের খামখেয়ালিপনা, তা হলে এমনই যে হবে, তাতে আর আশ্চর্য কী। প্রশাসনিক ব্যবস্থার মর্যাদা ও স্বাতন্ত্র্য ক্ষুণ্ণ করলে আখেরে উন্নয়নের গতি ব্যাহত হয়, এই সত্যটি রাজ্য সরকার যত দ্রুত উপলব্ধি করে, ততই মঙ্গল।

অন্য বিষয়গুলি:

Fisheries West Bengal Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy