—প্রতীকী চিত্র।
গরমে পুড়ছে দক্ষিণ ইউরোপ। বহু জায়গায় তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রি। তাপমাত্রার এ-হেন বৃদ্ধিকে অবশ্য অপ্রত্যাশিত বলা চলে না। বিজ্ঞানীরা বহু বার সতর্ক করেছেন এই বলে যে, সাম্প্রতিক দশকগুলিতে অন্য মহাদেশের তুলনায় ইউরোপ অধিক দ্রুত হারে উষ্ণ হয়ে উঠছে। বর্তমান পরিস্থিতি সেই বিপদবার্তাকেই সত্য প্রতিপন্ন করেছে মাত্র। এবং এতেই শেষ নয়। শীঘ্রই নতুন ভাবে তাপপ্রবাহ ধাক্কা দিতে পারে, এমনটাই আশঙ্কা। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটা স্রেফ সূচনা। আগামী দিনে সারা বিশ্ব জুড়েই গরম আরও বাড়বে। বস্তুত, গত মে মাসেই বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যেই হয়তো প্রথম বারের জন্য বিশ্ব ১.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির সীমারেখাকে অতিক্রম করে যাবে। এখনও অনেকাংশে অনিয়ন্ত্রিত কার্বন নিঃসরণ, এবং চলতি বছরের শেষার্ধে এল নিনো পরিস্থিতি এই সম্ভাবনাকে আরও জোরদার করে তুলছে। অর্থাৎ, ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তিতে যে অঙ্গীকার করা হয়েছিল— বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রিতে বেঁধে রাখা, সেই সীমা উল্লঙ্ঘন করার খুব কাছাকাছি ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে মানবসভ্যতা। এর মানে অবশ্য এই নয় যে, অতঃপর ১.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধিই স্থায়ী হবে। কিন্তু এক বার সেই সীমা অতিক্রম করে যাওয়ার অর্থ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি, প্রতিশ্রুতি, বাৎসরিক সম্মেলন সত্ত্বেও উষ্ণায়নের গতি কমার কোনও লক্ষণই নেই। এবং এই সীমারেখা যদি অল্প সময়ের ব্যবধানে বারংবার ভাঙতে থাকে, তবে জলবায়ুর ক্ষেত্রে তার প্রভাব মারাত্মক অনুভূত হবে বিশ্ব জুড়ে। এই তো সবে শুরু— কথাটির তাৎপর্য তাই গভীর।
পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের সর্বাধিক ধনী দেশগুলির মধ্যে মাত্র দশ শতাংশ বিশ্বে মোট গ্রিনহাউস গ্যাসের ৫০ শতাংশ নিঃসরণ করে থাকে, যা বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রধানতম কারণ। সেখানে ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর গরিব দেশগুলি নিঃসরণ করে মাত্র ১২ শতাংশ। অথচ, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির ধাক্কা সর্বাধিক লাগে এই দেশগুলিতেই। এই কারণেই ১৯৯৭ সালের কিয়োটো প্রোটোকল-এ জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে ‘অভিন্ন অথচ অসমান দায়িত্ব’-এর কথা বলা হয়েছিল। পরবর্তী কালে প্যারিস চুক্তিতে ধনী দেশগুলিকে বলা হয়েছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের সঙ্গে যুঝতে গ্লোবাল সাউথ-এর দেশগুলিকে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দানের তহবিল গড়ার কথা। অথচ, শিল্পোন্নত বিশ্ব কোনও দিন এই ঐতিহাসিক দায় স্বীকারে সম্মত হয়নি, বরং যেখানে বর্তমানে এই ক্ষেত্রে প্রতি বছর প্রয়োজন প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ডলারের, সেখানে এখনও প্যারিস চুক্তির প্রস্তাবমতো বাৎসরিক ১০০ বিলিয়ন ডলারও বরাদ্দ করা যায়নি। শুধু তা-ই নয়, অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণকারী শিল্পগুলিকে দরিদ্র দেশগুলিতে সরিয়ে তারা নিজেদের কার্বন নিঃসরণের বোঝা কম দেখাতে চেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করতে হলে সর্বাগ্রে উন্নত দেশগুলিকে এই আচরণ পাল্টাতে হবে। মানতে হবে, এই সমস্যা বৈশ্বিক, কোনও একটি দেশ বা মহাদেশের নিজস্ব নয়। তাই, দরিদ্র দেশগুলির ক্ষতি পূরণেও অবিলম্বে এক সদর্থক ভূমিকা নিতে হবে। সর্বোপরি, জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে এক সামগ্রিক সহযোগিতা এবং সহমর্মিতার পরিবেশ গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। অন্যথায়, শেষের সূচনা মেনে নিতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy