Advertisement
E-Paper

উত্তম ‘পুরুষ’

প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার এক ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সম্প্রচারিত, সাড়া ফেলে দেওয়া টিভি-সিরিজ় অ্যাডোলসেন্স-এর শুধু প্রশংসাই করেননি, এক ধাপ এগিয়ে দেশের সব মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে সিরিজ়টি যাতে দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়, সেই পদক্ষেপও করেছেন।

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:২০
Share
Save

ডিজিটাল পরিসর, বিশেষত ওটিটি এসে বিনোদনের বিরাট দিগন্ত খুলে দিয়েছে, অতি সহজে ও দ্রুত তা জানতে-দেখতে পারছেন দর্শক। এই জানা ও দেখা আরও দ্রুতি পায় যখন সমাজের বিশিষ্টজন কোনও ‘কনটেন্ট’-এর প্রশংসা করেন। যেমন সম্প্রতি হল ব্রিটেনে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার এক ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সম্প্রচারিত, সাড়া ফেলে দেওয়া টিভি-সিরিজ় অ্যাডোলসেন্স-এর শুধু প্রশংসাই করেননি, এক ধাপ এগিয়ে দেশের সব মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে সিরিজ়টি যাতে দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়, সেই পদক্ষেপও করেছেন। স্কুলের পাঠক্রমে পড়াশোনার সম্পূরক বা অতিরিক্ত পাঠ হিসেবে অনেক সময় সিনেমা ইত্যাদি দেখানো হয় বটে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যাপার আলাদা— সরকারি ভাবেই একটি বিনোদনবস্তুকে পাঠের অঙ্গ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে।

স্পষ্টতই, সিরিজ়টির বিষয় ও তার আন্তরিক, বাস্তববাদী উপস্থাপনই এর কারণ। সহপাঠিনীকে খুনের অভিযোগে তেরো বছরের একটি বালকের গ্রেফতারি, পরিবারের প্রবল মানসিক বিপর্যয় এবং বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন ছেলেটির মানসিক অবস্থা তুলে ধরে এই সিরিজ়: অভিযুক্ত, তার প্রিয়জন, বন্ধু, পুলিশ, মনোবিদ-সহ নানা চরিত্রের আয়নায়। ঘটনাক্রম সে তো বাহ্যিক কাঠামো, প্রকৃত সমস্যাটি ভিতরের— আজকের প্রজন্ম, বিশেষত বালক ও কিশোররা অভিভাবকদের চোখের আড়ালে মোবাইল, কম্পিউটার, আন্তর্জালে কী করছে, দেখছে, শিখছে এবং সবচেয়ে বড় কথা কী ভাবছে, সেটি। বয়ঃসন্ধির মতো এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অথচ বিভ্রান্তিকর শারীরবৃত্তীয় ও মানসিক পরিবর্তনের স্তরে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি এদের মনোভাব কাছের মানুষের অগোচরে পাল্টে যেতে পারে নারীবিদ্বেষে, এবং তার পরিণাম হতে পারে ভয়ঙ্কর— এই নির্মম সত্যই উঠে এসেছে সিরিজ়টিতে। নির্মাতারা সমস্যাটি তুলে ধরেছেন অত্যন্ত মানবিক ভাবে, কোনও রকম বাগাড়ম্বর বা নীতিপুলিশি না করে, খাপ বা ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ না বসিয়ে। সেই কারণেই তা দেশে দেশে দর্শকের হৃদয় স্পর্শ করেছে; আর্থ-সামাজিক ও রাষ্ট্রিক ভিন্নতা নির্বিশেষে সকলে বলেছেন, এই সঙ্কট হয়তো আমাদের ঘরে ঘরে কিন্তু আমরা তা বুঝতে পারিনি, এই সিরিজ় আমাদের চোখ খুলে দিল।

ভারতেও সমাজমাধ্যমে এ নিয়ে সবাই উচ্ছ্বসিত। তবে রাষ্ট্রনায়কদের মতামত তত মেলেনি: তাঁরা ব্যস্ত মানুষ, খেয়েপরে কাজ আছে, এবং অনেকেরই মনোভাবে এ নেহাতই এক ‘বিদেশি সমাজবাস্তবতা’, অমৃতকালের ভারত যা থেকে যোজন দূরত্ব ‘এগিয়ে’। এ দেশের প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর নিকট-সহকর্মীদের সিনেমা দেখার খবর মাঝে-মাঝে মেলে বটে, তবে সে অন্য ধারার ‘কনটেন্ট’, যেখানে শত্রু দেশের বা বিধর্মের ষড়যন্ত্র বা হামলা সমূলে নিকাশ করতে পর্দায় আবির্ভূত হন ‘মসিহা’রূপী নায়ক: দেবতা, ইতিহাসের বীর, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা, গুপ্তচর, পুলিশ বা সেনার অধিনায়ক অবতারে। আগাগোড়াই তা ‘পুরুষ’-এর জয়গাথা, নারী সেখানে গৌণ বা যৌন। ভারতীয় বহু চিত্রনির্মাতা আক্ষেপ করেছেন, অ্যাডোলসেন্স-এর মতো ‘কনটেন্ট’ এ দেশে তৈরি হওয়া অসম্ভব। কেন তা সহজেই অনুমেয়, কিন্তু আশঙ্কা জাগে নবপ্রজন্মের ভাবী পুরুষগুলিকে নিয়ে, এই রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক আবহে ভিতরে ভিতরে তারা কি শুধুই ‘পুরুষ’ হয়ে উঠছে, ‘মানুষ’ নয়!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

OTT platform Britain Adolence

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}