Advertisement
E-Paper

অপরাধী

এমন ভাবে তথ্য গোপন করার চেষ্টা হয়েছে, প্রতি স্তরে অন্যায় ঢাকার জন্য আরও বড় অন্যায় করা হয়েছে যে এখন ঠিক তথ্য বার করা অসম্ভব, তাই পুরো প্রক্রিয়াটিকে নতুন করে করতে বলা ছাড়া উপায় নেই।

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:০৮
Share
Save

জট মাঝে মাঝে এমন পাকিয়ে যায় যে তাকে পুরো না কেটে দিয়ে খোলা যায় না। আড়াই হাজার বছর আগে আলেকজ়ান্ডার এই জন্যই ‘গর্ডিয়ান নট’ খোলার বদলে তা কেটে দিয়েছিলেন বলে কথিত আছে। স্কুল সার্ভিস কমিশন বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়টিকে ঠিক সেই ভাবেই দেখতে হবে। সমগ্র শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া যদি এমন ভয়ানক কলুষিত হয়ে যায় যাতে স্পষ্ট সিদ্ধান্তে আসার মতো তথ্যই পাওয়া না যায়— তবে গত্যন্তর কোথায়। আদালতের রায় নিয়ে যাঁরা বিচলিত, ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ— তাঁদের ক্রোধ ও ক্ষোভের কারণ বুঝতে অসুবিধা হয় না— বাস্তবিক এত বড় দুর্ভাগ্য ওঅপমানের মুহূর্ত পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে নজিরবিহীন— কিন্তু মনে রাখতে হবে, বিচারবিভাগের সিদ্ধান্ত তৈরি হয় একটি যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। কোনও মতেই সেই প্রক্রিয়ার বাইরে যাওয়া যায় না, সেটা কাম্যও নয়। সুতরাং আদালতের রায়ের ফলাফল নিয়ে তীব্র যন্ত্রণাবোধ সত্ত্বেও রায়টিকে অযৌক্তিক বা অন্যায্য বলা যায় না। যাঁরা বলছেন, এক জনও নিরপরাধ শাস্তি পেলে বিচারের ন্যায় রক্ষিত হয় না, তাঁদের মনে করিয়ে দেওয়া দরকার, কে নিরপরাধ আর কে অপরাধী, সেই মীমাংসাই অসম্ভব হয়ে গেলে গোড়া থেকে শোধরানো যেতেই পারে। ‘কেঁচে গণ্ডূষ’ কথাটি অনেকের পছন্দসই নয়, তবু তা এক বাস্তবোচিত পন্থা বটেই। এসএসসি তদন্তে যে তথ্যগুলি প্রতিষ্ঠিত— যেমন, ওএমআর শিটগুলি বিনষ্ট করা হয়েছে, তার কপি রাখা হয়নি, ওএমআর শিট ফাঁকা রাখা প্রার্থীরা নিযুক্ত হয়েছেন, তালিকার বাইরে থেকে প্রার্থী নিয়োগ হয়েছে ইত্যাদি। এমন ভাবে তথ্য গোপন করার চেষ্টা হয়েছে, প্রতি স্তরে অন্যায় ঢাকার জন্য আরও বড় অন্যায় করা হয়েছে যে এখন ঠিক তথ্য বার করা অসম্ভব, তাই পুরো প্রক্রিয়াটিকে নতুন করে করতে বলা ছাড়া উপায় নেই। যে বিরাট সংখ্যক নিরপরাধ তরুণ-তরুণী অন্যায় ভাবে বঞ্চিত ও পীড়িত হলেন, তাঁরা ও বাকিরা মনে রাখুন, তাঁদের এই হেনস্থার দায়— সম্পূর্ণত রাজ্য প্রশাসনের। হিমালয়প্রমাণ দুর্নীতির কান্ডারি নেতা-মন্ত্রী-সাগরেদদের অপরাধের দাম আজ এই অসহায় নিরপরাধদের মাথায় বজ্রাঘাতের মতো নেমে এসেছে। এই গভীর উদ্বেগপ্রহরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ও তারসমর্থক-সমাজের কাছে একান্ত অনুরোধ, অন্য কারও উপর দোষ চাপানোর ন্যক্কারজনক প্রয়াসে নিজেদের অমানবিকতার পরিমাণ আর বাড়াবেন না।

ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গবাসীকে একটি দুরূহ কাজ করতে হবে। এই হতাশ্বাস তরুণতরুণীদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস জোগাতে হবে, পুনর্বার সামনের দিকে তাকিয়ে চলার শক্তি দিতে হবে। এই লড়াই যেন কেবল পঁচিশ বা ছাব্বিশ হাজারের না হয়, এ যেন হয় সামূহিক সংগ্রাম। সঙ্গে সঙ্গে, এঁদের জন্য দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা করতে যাতে সরকার বাধ্য হয়, সে দায়িত্ব নাগরিক সমাজকেই নিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠকে অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেন, তার মধ্যে কতকগুলি সম্পূর্ণ যুক্তিহীন ও ভিত্তিহীন। যেমন, কাউকে টাকা ফেরত দিতে হবে না, এ কথা তিনি মোটেই বলতে পারেন না যখন আদালতের রায়ে স্পষ্ট নির্দেশ আছে। তা ছাড়া, মুখ্যমন্ত্রী যদি ভাবেন পঁচিশ হাজার ছেলেমেয়ের ‘ব্যবস্থা’ করে দিলেই তাঁর ক্লেদহস্ত ধৌত হয়ে যাবে, সম্পূর্ণ ভুল ভাবছেন। মনে রাখতে হবে ‘যোগ্য’রা যেমন অন্যায় ভাবে শাস্তি পেলেন, ‘অযোগ্য’রাও যে টাকা দিয়ে অন্যায় করতে পারলেন, সেই দায়িত্বও কেবল তাঁদের নয়— তৃণমূল সরকার যে ‘সিস্টেম’ তৈরি করেছে, তার দায়িত্বই বেশি। রাজনৈতিক মদতপুষ্ট দুষ্কৃতী নেতা-জনতা অগাধ দুর্নীতির প্রকৃষ্ট পরিসর পেয়ে আত্মহারা হয়েছে বলেই এমন ঘটনা ঘটেছে। সামাল-কৌশলে দুরস্ত মুখ্যমন্ত্রী আগামী নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি সামলাতে কেবল আইনি পথে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলেই ‘যথেষ্ট’ হবে না। প্রতি অপরাধীর দৃষ্টান্তযোগ্য কঠোর শাস্তি দান তাঁর নিজের ব্যক্তিগত দায় হয়ে থাকল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SSC recruitment scam TMC West Bengal government

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}