প্রবল বর্ষণে বিপর্যস্ত দিল্লির জনজীবন। ছবি: পিটিআই।
বছরভর তীব্র দূষণে ধুঁকতে থাকা ক্ষীণকায়া যমুনাকে দেখে কি আন্দাজ করা যেত যে, সে নদী দিল্লিকে এমন ভাসিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে? গত পঁয়তাল্লিশ বছরের রেকর্ড ছাপিয়ে যমুনার জল সম্প্রতি বিপদসীমার তিন মিটার উপর দিয়ে বয়েছে। সৌজন্যে, দিল্লির সাম্প্রতিক বর্ষা। রাজপথের বিভিন্ন স্থানে নৌকা চলেছে, জল ছুঁয়েছে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের বাসভবন, সুপ্রিম কোর্টের দোরগোড়া। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে, চাকরিজীবীদের বাড়ি থেকে কাজের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দিল্লির ক্ষেত্রে এ-হেন বন্যাচিত্র বিরল হলেও উত্তর ভারতের পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষেত্রে তেমনটা নয়। প্রতি বছর উত্তরাখণ্ড এবং হিমাচলের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকায় বর্ষার শুরুতে প্রবল বৃষ্টি, হড়পা বান এবং বন্যায় তোলপাড় হওয়ার ঘটনা এখন আর বিস্মিত করে না। এ বছরও ব্যতিক্রম নয়। শুধুমাত্র হিমাচলপ্রদেশেই এক সপ্তাহের মধ্যে প্রাণহানি হয়েছে প্রায় একশো জনের। স্বাভাবিকের তুলনায় ২২৬ শতাংশ অধিক বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছে জাতীয় সড়ক, সেতু।
বর্ষায় পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টি-বিপর্যয় নতুন নয়। ধস নামা, হড়পা বানে গ্রাম ভেসে যাওয়ার নিদর্শনও বহু। সেই বিপদ মাথায় নিয়েই বাসিন্দারা দিনাতিপাত করেন, প্রকৃতির মর্জি বুঝে যাপনের ধারায় বদল আনেন। কিন্তু গত কয়েক বছরের বর্ষায় বিশেষত হিমাচল ও উত্তরাখণ্ডে যে আবহাওয়া দেখা গিয়েছে, তা যেন যাবতীয় অনুমান, হিসাবকে ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। এত ঘন ঘন এই মাপের বিপর্যয় অতীতে দেখা যায়নি। হিমাচলের বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত তথ্য অনুসারে, ২০১৭ থেকে ২০২২-এর সময়কালে প্রায় দু’হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন শুধুমাত্র বৃষ্টি-বিপর্যয়ের কারণে। কিন্তু এই বিপর্যয় কি শুধুই প্রাকৃতিক? হিমালয় বয়সে নবীন এবং চরিত্রগত ভাবে ভঙ্গুর। অথচ, মাটির সেই বৈশিষ্ট্যকে কার্যত উপেক্ষা করে এই অঞ্চলে যে বেপরোয়া ভাবে পর্যটনের প্রসার ঘটানো হয়েছে, চওড়া রাস্তা নির্মিত হয়েছে, নদীর প্লাবনভূমিকে অগ্রাহ্য করে তার ধার ঘেঁষে বহুতল হোটেল গড়ে উঠেছে, তাতে এই ক্ষয়ক্ষতি কি খুব অপ্রত্যাশিত ছিল? নিঃসন্দেহে নির্বিচারে পাহাড় কেটে, মাটিকে ধরে রাখা বিস্তীর্ণ অরণ্যভূমি ধ্বংস করে ‘উন্নয়ন’-এর জোয়ারের ধাক্কা হড়পা বানের তুলনায় কম কিছু নয়। সেই জোয়ারে আক্ষরিক অর্থে ‘ভাসছে’ এই দুই পাহাড়ি রাজ্য।
দিল্লির মতো অত্যাধুনিক শহর প্লাবিত হওয়ার অন্যতম কারণও সেটাই। অপরিকল্পিত নগরায়ণের তোড়ে সেখানে প্রাকৃতিক নিকাশি নালাগুলির হাল শোচনীয়। এবং এ ক্ষেত্রে দিল্লি, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, কলকাতা— তফাত নেই বিশেষ। সাম্প্রতিক অতীতে হায়দরাবাদ বা বেঙ্গালুরুর বন্যার কারণ হিসাবেও উঠে এসেছিল জল নিকাশের পথগুলি রুদ্ধ করে নগরের বিস্তারকে জবরদস্তি সে দিকে ঠেলে দেওয়া। ফলে, অতিবৃষ্টিতে জমা জল বেরোনোর সহজ পথ না পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। দিল্লিতে পলি পড়ে যমুনার খাত প্রায় ভরাট হয়ে এসেছে, এবং সেই পলি সরানোয় সরকারি উদাসীনতা লক্ষণীয়। জলস্তর বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার কারণটি সহজবোধ্য। কলকাতার সৌভাগ্য, সাম্প্রতিক কালে তাকে অতিবর্ষণের সম্মুখীন হতে হয়নি। হলে, শহরের গামলার মতো আকৃতি, অনিয়মের নগরায়ণ এবং বুজে আসা নিকাশি নালা শহরবাসীকে কোন বিপর্যয় প্রত্যক্ষ করাবে, ভাবনার বিষয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy