—ফাইল চিত্র।
আবারও পার্ক স্ট্রিটে আগুন। আবারও একটি রেস্তরাঁ থেকে আগুন ছড়াল। গত কাল দক্ষিণ কলকাতার শপিং মলে আবারও অগ্নিকাণ্ড। রেস্তরাঁর ব্যবসায় আগুনের ব্যবহার অপরিহার্য। আবার অন্য রকম দোকানেও আগুনের ব্যবহার হতে পারে, বিশেষত নির্মাণ বা সারাই-পর্বে। সামান্য অসতর্কতাও সেখানে বড় মাপের বিপদ ডেকে আনতে পারে। ঘটনা যে, আগের তুলনায় দমকল বিভাগের তৎপরতা বেড়েছে, অগ্নিকাণ্ড সামলানোর ক্ষমতাও বেড়েছে। অনেকের মতে, নজরদারির পরিমাণও বেড়েছে। কিন্তু, কোনওটিই যে যথেষ্ট পরিমাণে বাড়েনি, এ সপ্তাহে একাধিক অগ্নিকাণ্ড তার জ্বলন্ত প্রমাণ। ভারতের অন্যত্র এবং একাধিক দেশের অগ্নিকাণ্ডগুলি বিশ্লেষণ করলে একটি ছক পাওয়া সম্ভব— নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা ও অগ্নি-সচেতনতার অভাব; বিভিন্ন বেআইনি কার্যকলাপ, যা অগ্নি নির্বাপণ বিভাগের নজরদারির বাইরে থেকে গিয়েছে; আগুন লাগার পর সংশ্লিষ্ট ভবনটির কর্তৃপক্ষের তৎপরতার অভাব; দমকল বিভাগের অপ্রস্তুত অবস্থা। কলকাতার অগ্নিকাণ্ডগুলির ক্ষেত্রে এই প্রতিটি ধাপে কোথায় কী গাফিলতি থাকছে, তার বিশদ বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
পার্ক স্ট্রিট-ক্যামাক স্ট্রিটের সাম্প্রতিকতম অগ্নিকাণ্ডের পর দেখা যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট ভবনটিতে এমন কিছু নির্মাণ ছিল, যার বৈধতা প্রশ্নযোগ্য। যে রেস্তরাঁটি থেকে আগুন ছড়িয়েছিল, সেটি সাম্প্রতিক কালে বন্ধ, কিন্তু তদন্তে প্রকাশ, সেখানে মজুত ছিল বিপুল পরিমাণ দাহ্য পদার্থ। হাওয়া চলাচলের কোনও পথ ছিল না বলেও জানা গিয়েছে। কেউ বলতে পারেন যে, বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি প্রতিষ্ঠানের ভিতরে ঠিক কী আছে, প্রশাসনের পক্ষে তা জানা কঠিন। ঠিকই, তবে বন্ধ হওয়ার আগে তো বিষয়টি কঠিন ছিল না। সে সময় এমন একটি কাঠামোয় ব্যবসা চলতে দেওয়া হল কেন, সেই হিসাব অবশ্যই নেওয়া প্রয়োজন। ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার সময় বিপজ্জনক পদার্থ সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে কি না, সে দিকে নজর রাখাও প্রশাসনেরই কর্তব্য। সেই দায়িত্ব সম্পূর্ণ পালন করা হয়েছে কি না, দেখা প্রয়োজন।
তবে, নিরাপত্তার দায়িত্ব দোকানের মালিকপক্ষেরও বটে। তাঁরা বেআইনি কাজ করলে কঠোর শাস্তি হওয়া বিধেয় তো নিশ্চয়ই, কিন্তু লাভের পরিমাণ বাড়াতে এমন ঝুঁকি তৈরি করার মধ্যে যে প্রবল অনৈতিকতা আছে, সে কথাটিও তাঁদের বুঝতে হবে। কার্যত প্রতিটি দুর্ঘটনার পরই দেখা যায় যে, নিরাপত্তার প্রশ্নটিকে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এই মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। এমন হোটেল-রেস্তরাঁর নিরাপত্তা বহুলাংশে নির্ভর করে কর্মরত শ্রমিকদের উপরেও। তাঁরা নিয়মবিধি মানছেন কি না, সে দিকে নজর রাখার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। তারও আগে শ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। কেন অগ্নিবিধি মানতে হবে, সে কথাটি তাঁদের বারংবার বুঝিয়ে বলতে হবে। এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে এই শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকি যে প্রবল, সে কথাটি তাঁদের কাছে স্পষ্ট হওয়া চাই। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি সম্মিলিত দায়িত্ব। তাতে প্রশাসনের ভূমিকা যেমন অপরিহার্য, সংশ্লিষ্ট নাগরিকের ভূমিকাও তার তুলনায় খাটো নয়। উভয় পক্ষই যদি তাৎক্ষণিক লাভের মোহ ত্যাগ করে নিরাপত্তার প্রশ্নটিকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়, তা হলেই বিপদের সম্ভাবনা কমবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy