Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Financial Literacy

বাতিঘর

অতিমারিকালে অর্থ সংক্রান্ত জ্ঞানের গুরুত্বের আভাস পাওয়া গিয়েছিল সর্বাধিক। ওই সময় কর্মহীনতা, বেতন হ্রাস, ব্যবসায় সঙ্কট চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে বহু মানুষকে।

representational picture of financial literacy.

অতিমারিকালে অর্থ সংক্রান্ত জ্ঞানের গুরুত্বের আভাস পাওয়া গিয়েছিল সর্বাধিক। ছবি: সংগৃহীত।

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৩ ০৮:৪৭
Share: Save:

টাকাপয়সা বস্তুটি জীবনে প্রায় জল-হাওয়ার মতো, তাকে এড়িয়ে বাঁচা কার্যত অসম্ভব। ইদানীং তাতে যোগ হয়েছে আরও একটি মাত্রা— টাকা বলতে এখন শুধু কাগজের নোট বা ধাতব মুদ্রা নয়, এখন প্লাস্টিকের কার্ডেও টাকা, ফোনের অ্যাপেও টাকা। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তৈরি ডিজিটাল টাকাও ব্যবহার করার পরিস্থিতি তৈরি হবে। কৈশোর থেকেই টাকা-পয়সার হিসাব, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ-সহ আর্থিক বিষয় সম্বন্ধে ধারণা তৈরি হলে ভবিষ্যতে আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথগুলি সহজতর হয়। সেই সূত্রেই আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ‘ফাইনানশিয়াল লিটারেসি’ বা ‘আর্থিক শিক্ষা’-কে স্কুল-পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করছে আইসিএসই বোর্ড। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কী কী শেখানো হবে, দেওয়া হয়েছে তার একটা প্রাথমিক রূপরেখাও। যেমন, শ্রেণি অনুসারে অর্থনীতির পাঠগুলি ইতিহাস, ভূগোল, বাণিজ্যের মতো বিভিন্ন বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।

দেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় আর্থিক শিক্ষায় জ্ঞানলাভের সুযোগ বোর্ডের পড়ুয়াদের সে ভাবে থাকে না। গাণিতিক সূত্র ব্যবহার করে অঙ্কের তাত্ত্বিক সমস্যা সমাধান করতে পারলেও, অর্থ সঞ্চয় ও বিনিয়োগের বাস্তব জ্ঞান গড়ে ওঠে না তাদের। সাধারণত পড়ুয়ারা নবম শ্রেণি থেকে বিজ্ঞান বা বাণিজ্য শাখা বেছে নেওয়ার সুযোগ পায়। যারা ওই সময়ে বাণিজ্য নেয়, তাদের পরিচিতি ঘটে আর্থিক দুনিয়ার প্রাথমিক পাঠের সঙ্গে। কিন্তু বাকিরা সেই সুযোগ পায় না। শুধু তা-ই নয়, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সংস্কৃতি হল, অল্প বয়সি সন্তানের সঙ্গে বহু অভিভাবক টাকাপয়সার কথা আলোচনা করতে চান না। সেই কারণেই আর্থিক শিক্ষা আরও বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীদের জন্য। গত কয়েক বছরে ‘পার্সোনাল ফাইনান্স’-এর ক্ষেত্রটি বহু গুণ বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও জনসাধারণের একটি বড় অংশ এখনও আর্থিক ভাবে সাক্ষর নন। তার অন্যতম প্রমাণ গত বছরের সিকিয়োরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (সেবি)-র সমীক্ষা। সেখানে দেখা যায়, মোট জনসাধারণের মাত্র ২৭ শতাংশ আর্থিক ভাবে সাক্ষর। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, চিট ফান্ডের রমরমার পিছনে একটা মস্ত কারণ এই আর্থিক অশিক্ষা। দেশের বৃহত্তর অংশে যে আর্থিক সাক্ষরতা আরও বহু গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে— এই সমীক্ষা তারই ইঙ্গিতবাহী।

অতিমারিকালে অর্থ সংক্রান্ত জ্ঞানের গুরুত্বের আভাস পাওয়া গিয়েছিল সর্বাধিক। ওই সময় কর্মহীনতা, বেতন হ্রাস, ব্যবসায় সঙ্কট চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে বহু মানুষকে। সর্বোপরি, আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও ডিজিটাইজ়েশনের যুগে নানা ধরনের আর্থিক প্রতারণার শিকার হতে হচ্ছে মানুষকে। স্কুলে আর্থিক দুনিয়ার প্রাথমিক জ্ঞান পাঠ্যক্রমে অন্তর্গত হলে তার একটি বৃহত্তর প্রভাব থাকা সম্ভব। মোবাইল ফোনের মতো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেখা যায়, ছেলেমেয়েরা অতি দ্রুত তাতে রপ্ত হয়ে ওঠে এবং মা-বাবাকেও শেখায়। আর্থিক সাক্ষরতার ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটতে পারে। কোন মেসেজটি স্প্যাম, আর কোন ‘অতি লোভনীয়’ স্কিম সত্য হওয়ার সম্ভাবনা নিতান্ত ক্ষীণ, এই কথাগুলি ছেলেমেয়েরাই বুঝিয়ে বলতে পারে অভিভাবকদের। আর্থিক দুনিয়ার মহাসমুদ্রে ভাসমান সাধারণ মানুষের পক্ষে তা বাতিঘরের মতো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Economy ICSE Schools
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy