রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। ফাইল ছবি।
অনেক দিনের সম্পর্কে সঙ্কটের ঘন ছায়া। যার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলল সম্প্রতি গোয়ায় অনুষ্ঠিত শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজ়েশন-এর বৈঠকে রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের বক্তব্যে। লাভরভের অভিযোগ, ভারতের ব্যাঙ্কে কোটি কোটি টাকা জমা থাকলেও বর্তমান যুদ্ধ-পরিস্থিতিতে সেই অর্থ রাশিয়া ব্যবহার করতে পারছে না আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের কাজে। গত বছর ইউক্রেন আক্রমণের জেরে পশ্চিমি দুনিয়ার নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হয়েছিল রাশিয়াকে। ওই পরিস্থিতিতে সস্তায় তেল রফতানির ক্ষেত্রে ভারতকে পাশে পায় তারা। কিন্তু মস্কোর সঙ্গে টাকায় লেনদেনের আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত কোনও চুক্তি হয়নি। মনে রাখতে হবে, আন্তর্জাতিক বাজারে টাকা পুরোপুরি সোনা কিংবা অন্য দেশের মুদ্রায় রূপান্তরিত করা যায় না। শুধু তা-ই নয়, আন্তর্জাতিক রফতানির বাজারেও এ দেশের দখল মাত্র ২ শতাংশ। এই সব কারণেই ভারতীয় টাকা জমা রাখতে ইচ্ছুক নয় রুশ সরকার। ফলে, আপাতত টাকার বিনিময়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক লেনদেন স্থগিত রাখা হয়েছে।
রাশিয়ার মতো এক সময় ইরান থেকেও তেল আমদানি হত ভারতে। কিন্তু বিবিধ কারণে দাঁড়ি পড়ে সেই সম্পর্কে। ভারতের সঙ্গে ইরান ও রাশিয়ার তেল সংক্রান্ত বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেকখানি অনুরূপ হওয়ায় প্রশ্ন উঠছে, ইরানের পুনরাবৃত্তি রাশিয়ার ক্ষেত্রেও ঘটবে কি না। প্রসঙ্গত, ইরান এবং রাশিয়া— দুই ক্ষেত্রেই ভারতের কাছে তেল আমদানির মূল চালিকাশক্তি থেকেছে ছাড়যুক্ত মূল্য। ২০২১ সালে যেখানে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি ছিল মাত্র পাঁচ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২২ সালে রাশিয়া ব্যারেল প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ ডলার ছাড় দিতে রাজি হলে, সেই আমদানিই বৃদ্ধি পায় প্রায় সাত গুণ। তা ছাড়া, দুই দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা থেকেছে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার। পূর্বে তেল আমদানির স্বার্থে ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে দিল্লির শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন আমেরিকা তাতে রাজি ছিল না। অবশ্য ইউক্রেন প্রশ্নে রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল আমদানির বিষয়ে পশ্চিমি দেশগুলির উষ্মা সত্ত্বেও ভারত আপাতত কূটনৈতিক সমঝোতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। তা সত্ত্বেও উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে যেখানে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য রোধের ক্ষেত্রে পশ্চিমি দেশগুলির হাতে কাউন্টারিং আমেরিকা’স অ্যাডভার্সারিজ় থ্রু স্যাংশনস অ্যাক্ট (সিএএটিএসএ)-এর মতো হাতিয়ার রয়েছে। অন্য দিকে, উপযুক্ত লেনদেন প্রক্রিয়ার অভাবও ভারত-রাশিয়ার বাণিজ্যকে প্রভাবিত করেছে। আমেরিকান ডলার এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনের অন্যতম প্রক্রিয়া সুইফ্ট-এর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার কারণে লেনদেন কঠিন হয়েছে। বিকল্প লেনদেন প্রক্রিয়ার উপরে নির্ভর করতে গেলেও সে প্রক্রিয়া ফলপ্রসূ হয়নি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দুই দেশের মিত্রতায় তেমন টোল না পড়লেও, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে দিল্লির। বিশেষত, যেখানে এই বাজারে চিনও ভারতের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে। ছাড়যুক্ত মূল্যে তেল আমদানির সুবিধা মূলত ভোগ করে ভারতই। ফলে, বাণিজ্যিক লেনদেনের উপযুক্ত পথ খোঁজার দায়ও প্রধানত দিল্লিরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy