—প্রতীকী ছবি।
ভারতে কর্মসংস্থানের ঘাটতি যে বিপুল এবং সেই ঘাটতি আপাতত দূর হওয়ার বিশেষ ভরসা যে নেই, কেন্দ্রীয় সরকারের পরিচালকরা তাঁদের অসামান্য প্রচারকৌশল কাজে লাগিয়েও এবং সরকারি পরিসংখ্যান নির্মাণের যাবতীয় প্রকরণ ব্যবহার করেও সেই সত্যটিকে আড়াল করতে অপারগ, অর্থনীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন সমীক্ষার প্রতিবেদনে তা ক্রমাগত প্রকট হয়ে চলেছে, উদ্বেগের সুস্পষ্ট এবং ক্রমবর্ধমান ছাপ পড়ছে জনমতের পরিসরেও। কাজের বাজার যে-হেতু বহু স্তরে বিন্যস্ত, সুতরাং সমস্যার চরিত্রও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের। সেই বাজারের একটি অংশে আছে বৃত্তিশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলি। তাদের মধ্যে বিশেষত প্রথম বা দ্বিতীয় সারির আইআইটি, আইআইএম ও অন্যান্য অগ্রগণ্য প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে যে ছাত্রছাত্রীরা কর্মপ্রার্থী হন, তাঁদের সামনে কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা সচরাচর কম, বরং অনেক সময়েই তাঁরা পছন্দসই কাজ বা কর্মস্থল বেছে নেওয়ার অবকাশ পান। তার পিছনে থাকে চাহিদা ও জোগানের খেলা। এই প্রতিষ্ঠানগুলির সফল শিক্ষার্থীরা কর্মী হিসাবে দক্ষ, সম্ভাবনাময় এবং মূল্যবান বলে বিবেচিত, সুতরাং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানি তাঁদের কাজ দিতে আগ্রহী হয়। শিক্ষা সমাপ্ত হলেই অথবা তার আগেই তাঁদের একটি বড় অংশের— অনেক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সকলের— কর্মসংস্থান সম্পন্ন হয়ে থাকে।
এই ধারাতেই এ বছর গুরুতর ব্যাঘাত ঘটেছে। প্রযুক্তি শিক্ষা এবং ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে নানা বৃত্তিশিক্ষার ক্ষেত্রেই বিভিন্ন নামজাদা প্রতিষ্ঠানেও সফল ছাত্রছাত্রীদের একটি বড় অংশ, অনেক ক্ষেত্রে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ, প্রচলিত প্রক্রিয়ায় নিজেদের প্রতিষ্ঠানে বসেই ‘প্লেসমেন্ট’ অর্থাৎ কাজের সুযোগ পাননি, তাঁদের অতঃপর বৃহত্তর বাজারে কাজ খুঁজতে হচ্ছে বা হবে। তার অর্থ: বড় কোম্পানিগুলিতে প্রযুক্তি, পরিচালনা বা অন্যান্য ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীর চাহিদা কম। অর্থাৎ, তেমন কাজ যথেষ্ট নেই। সমস্যাটি গত বছরেও টের পাওয়া গিয়েছিল, তবে এ বার তার মাত্রা আরও অনেকটাই বেশি। প্রচলিত রীতি থেকে কেন এই বিচ্যুতি? একটি কারণ বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা। কিছু কিছু বহুজাতিক সংস্থা আপাতত নতুন কর্মী নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করেছে, তার ফলে রাশ টেনেছে তাদের ভারতীয় শাখা বা সহযোগীরাও। অনিশ্চয়তা দূর হলে কর্মীর প্রয়োজন বাড়বে, আপাতত এটুকুই ভরসা।
এই ভরসা কতখানি সত্য হবে, তা ভবিষ্যৎই বলতে পারে। কিন্তু এই সূত্রে একটি গভীরতর প্রশ্ন উঠে আসে। এ দেশের কাজের বাজারে বিশ্ব অর্থনীতির দোলাচলের প্রভাব কমানোর উপায় কী? বিশ্বায়নের দুনিয়ায় প্রভাব থাকবেই, এই দোলাচলও তার অঙ্গ। কিন্তু মনে রাখা দরকার, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নামক সাড়ম্বর ঘোষণার যদি কোনও অর্থ থাকে, তবে তা কেবল ভারতে পণ্য উৎপাদনের প্রসারে সীমিত থাকতে পারে না, ওই স্লোগান কাজে রূপায়িত হলে ভারতীয় অর্থনীতির নিজস্ব স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তাও বাড়বে। তার সুফল মিলবে কাজের বাজারের সমস্ত স্তরেই। এক দিকে যেমন শ্রমিকের প্রয়োজন ও প্রাপ্য বাড়বে, অন্য দিকে তেমনই প্রযুক্তিবিদ বা পরিচালন-বিশারদদের কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা বা অস্থিরতাও কমবে। এ বছরের ‘প্লেসমেন্ট’ সমস্যাকে নিছক সাময়িক অঘটন হিসাবে না দেখে এই মূল প্রশ্নটির দিকে দৃষ্টিপাত করা জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy