রাজ্যে বহুতল ভেঙে পড়া এখন ‘সাধারণ’ ঘটনা হয়ে গিয়েছে— মহেশতলার একটি বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত মামলার পরিপ্রেক্ষিতে করা কলকাতা হাই কোর্টের মাননীয় বিচারপতি টি এস শিবগণনমের সাম্প্রতিক মন্তব্যটি যে কতখানি যুক্তিযুক্ত, নেতাজিনগর তা ফের প্রমাণ করে দিল। চার তলা বাড়িটির বয়স মাত্র বছর পনেরো, আপাতদৃষ্টিতে জরা-ব্যাধির চিহ্ন নেই, দেওয়ালে ‘বিপজ্জনক’ বোর্ডও বসেনি। তা সত্ত্বেও বাড়িটি হেলতে শুরু করেছিল। অতঃপর, প্রোমোটার এবং বাসিন্দাদের যৌথ উদ্যোগে গত ডিসেম্বরে তার মেরামতির ব্যবস্থা করা হয়। সেই কাজ চলাকালীনই বাড়িটি আচমকা পাশের একটি বাড়ির উপর হেলে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় কারও প্রাণহানি হয়নি, এটা যেমন স্বস্তির কথা, তেমনই প্রশাসনের চরম অস্বস্তি হওয়া উচিত সেই সব পরিবারের কথা ভেবে, যাঁরা তাঁদের কষ্টার্জিত অর্থের বিনিময়ে মাথা গোঁজার একটি ঠাঁই খুঁজে নিয়েছিলেন, যে ঠাঁই তাঁদেরই চোখের সামনে দরকারি, মূল্যবান সামগ্রী আর অ-মূল্য স্মৃতি নিয়ে চিরতরে ধসে গেল।
তবে অস্বস্তি কমানোর দাওয়াইও সরকার পক্ষ অতি দক্ষতায় প্রয়োগ শুরু করে দিয়েছে। আপাতত জলাভূমি ভরাট করে নির্মিত ওই বেআইনি বাড়ির দায়টি পুরপ্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে বাম আমলের উপর চাপানো হয়েছে। কলকাতায় অবৈধ ভাবে জলাভূমি ভরাট করে নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তরটি যে বাম আমলেই সার্থক ভাবে প্রথিত হয়েছিল, তাতে সন্দেহ নেই। সন্দেহ এইখানেই যে, এই জমানাতেও সেই অনিয়মগুলি ধরা পড়ল না কেন? কলোনি এলাকায় কোনও প্ল্যানিং ছাড়াই যদি এক সময় ঘরবাড়ি নির্মিত হয়ে থাকে, তবে সেই নির্মাণগুলি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা করা কি বর্তমান পুর প্রশাসনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? আদালতের নির্দেশ অনুসারে অনুমোদিত নকশা ছাড়া নির্মাণ করলে পুরো নির্মাণই বেআইনি ঘোষণা করার কথা। এবং পুলিশি প্রহরায় সেগুলি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়ার কথা। আজ পর্যন্ত পুরসভা সেই কাজে কত দূর অগ্রসর হতে পেরেছে? জানা গিয়েছে, বাড়িটির যে মেরামতির কাজ চলছিল, সেটিও হচ্ছিল অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিক ভাবে এবং পুরসভার অনুমতি ছাড়াই। নিজ এলাকায় একটি বাড়ি ঘিরে এত দিন ধরে এমন অনিয়ম চলল, অথচ পুর প্রতিনিধি তার কোনও খবর রাখলেন না, আশ্চর্য বইকি!
আশ্চর্য এটাও, যে প্রশাসন বেআইনি নির্মাণের খবর পেলেই পূর্ববর্তী জমানার ঘাড়ে দায় চাপাতে ব্যস্ত থাকে, তাদেরই সময় গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বেআইনি বহুতল ভেঙে ১৩ জন প্রাণ হারান। সেই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও ছাড়পত্র না থাকা, নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল। তার পরেও পরিস্থিতি বিশেষ পাল্টায়নি। প্রসঙ্গত, পূর্ব কলকাতার জলাভূমি-সহ অসংখ্য জলাশয় একের পর এক বুজিয়ে যে অবৈধ নির্মাণগুলি গড়ে উঠেছে, তার কোনটি কোন জমানার সে হিসাবের মানে আছে কি? দশকের পর দশক স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন মুখে কুলুপ এঁটে থাকে রাজনৈতিক স্বার্থে, ব্যক্তিগত লক্ষ্মীলাভের প্রয়োজনে। সুতরাং, শাস্তি যদি পেতেই হয়, তবে সংশ্লিষ্ট প্রোমোটারের পাশাপাশি তাঁদেরও শাস্তি হওয়া প্রয়োজন, যাঁরা দিনের পর দিন নীরব থেকে এই বেআইনি কাজে প্রশ্রয় জুগিয়েছেন। গার্ডেনরিচ প্রমাণ করে দিচ্ছে, সেই সুবিচার দূর অস্ত্।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy