Advertisement
E-Paper

অন্নপূর্ণা ও কুবের

২০২১-২২ অর্থবর্ষেই ‘খাদ্যসাথী’ ও ‘দুয়ারে রেশন’ কর্মসূচি মিলিয়ে যে খরচ হয়েছিল, তা বরাদ্দের চেয়ে প্রায় ২৯০০ কোটি টাকা বেশি ছিল।

rice.

ভারতে শিশুরা প্রধানত প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবারের অভাবে অপুষ্ট। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৩২
Share
Save

বাজারে গমের ঘাটতি থাকায় রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনায় গমের বদলে চাল দিচ্ছে রাজ্য সরকার। তার জন্য প্রতি মাসে বাড়তি চুরাশি কোটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে রাজ্যকে। অর্থাৎ, বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় করতে হবে রাজ্যকে। বিষয়টি উদ্বেগের, কারণ খাদ্য সুরক্ষার জন্য রাজ্যের খরচ বরাদ্দকে কেবলই অতিক্রম করে যাচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবর্ষেই ‘খাদ্যসাথী’ ও ‘দুয়ারে রেশন’ কর্মসূচি মিলিয়ে যে খরচ হয়েছিল, তা বরাদ্দের চেয়ে প্রায় ২৯০০ কোটি টাকা বেশি ছিল। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মিড-ডে মিলের জন্য বাড়তি বরাদ্দ, এবং গমের ঘাটতি পূরণে চাল কেনার খরচ। রাজ্য সরকার গম কেনে খোলা বাজার থেকে, কিন্তু চাল কিনতে হয় প্রচলিত রীতিতে— চাষির কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে ধান খরিদ করে চালকলে ভাঙিয়ে প্রস্তুত চালই কিনতে হয়। এই নিয়মে প্রতি কিলোগ্রামে অন্তত আটাশ টাকা ভর্তুকি দিতে হয় রাজ্যকে। গমের বদলে চাল দিতে গিয়ে প্রতি কিলোগ্রামে বাড়তি খরচ হচ্ছে বারো টাকা। রাজ্যের খাদ্যসাথী প্রকল্পের অধীনে দু’কোটি আশি হাজার উপভোক্তার জন্য এই বাড়তি খরচ রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে সরকার হয়তো বহন করছে। কিন্তু বৃহত্তর ছবিটি ভুলে গেলে চলবে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন যে, রাজ্যের যথেষ্ট টাকা নেই। টাকার অভাবে সরকারি কর্মীদের ন্যায্য পাওনা মেটানো যাচ্ছে না, বহু শূন্য পদে নিয়োগ স্থগিত রয়েছে, উন্নয়নের নানা প্রকল্পও এড়িয়ে যাচ্ছে রাজ্য।

এই পরিস্থিতিতে সরকারি প্রকল্পগুলি সম্পর্কে চিরাচরিত ‘যেমন চলছে তেমনই চলবে’ মনোভাব থেকে না বেরোলে রাজ্যের বিপন্নতা বাড়বে। পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ মানুষের খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারি সহায়তার প্রয়োজন, এই সত্যকে অস্বীকার করা চলে না। বার বার নানা সমীক্ষায় প্রমাণিত যে, পশ্চিমবঙ্গের গ্রামের মানুষের রোজগার ও ব্যয়ক্ষমতা ভারতের অনুন্নত রাজ্যগুলির অধিবাসীদের সঙ্গে তুলনীয়। কৃষির সঙ্কট অব্যাহত, অকৃষি ক্ষেত্রেও গ্রামীণ ভারতে মজুরি কার্যত বাড়েনি, অথচ খাদ্যের মূল্যস্ফীতি মাত্রা ছাড়িয়েছে। তাই খাদ্য সহায়তার প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু কেবল চাল-গম বিতরণই কি তার উপায়? বার বার এই অভিযোগ উঠেছে যে, রেশন গ্রাহকদের একটি বড় অংশ সুলভে প্রাপ্ত চাল-গম কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। সরকারি ভর্তুকির এই অপচয় চলতে দেওয়া যায় না। একই সঙ্গে, নানা সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, ভারতে শিশুরা প্রধানত প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবারের অভাবে অপুষ্ট। চাল-গমে সে ঘাটতি পূরণ হয় না।

কী ধরনের সহায়তা পুষ্টিবিধানে কার্যকর হয়, সে বিষয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে ভারতে। খাদ্যকুপন বিতরণ, খাদ্যের জন্য পৃথক অনুদান, গণরসুই কার্যসূচি, এমন নানা উপায়ের প্রয়োগ হয়েছে। এ-ও দেখা গিয়েছে যে, সকলের বিপন্নতা এক রকমের নয়। তাই সকলের জন্য একই প্রকল্প তৈরি না করে, এক গোষ্ঠীর জন্য এক-এক রকম প্রকল্প তৈরি করলে তাতে সাশ্রয় যেমন হয়, তেমন পুষ্টির প্রয়োজনও মিটতে পারে বেশি। এমন নানা বিকল্পের কথা চিন্তা করা দরকার। অন্নপূর্ণার ভূমিকায় নেতারা অবতীর্ণ হতে চান বটে, কিন্তু রাজকোষটি তো আর কুবেরের ভান্ডার নয়। তাই খরচ সামলে সকলের উদরপূর্তির ব্যবস্থার খোঁজ করা চাই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Khadya Sathi West Bengal Wheat

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}