Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Deep Fake

আগুন নিয়ে খেলা

রাজনীতির ময়দানে ডিপফেক কতখানি প্রভাব ফেলতে পারে, বৈশ্বিক স্তরে সে বিষয়ে জোর আলোচনা চলছে।

deep fake

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:১৪
Share: Save:

উদ্বিগ্ন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও। জি২০’র মঞ্চে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন; ডিপফেক-এর ক্ষেত্রে ছবি বা ভিডিয়োতে বিধিবদ্ধ বিবৃতি রাখার পক্ষে সওয়াল করেছেন। প্রধানমন্ত্রী উদ্বিগ্ন হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারও স্বভাবতই নড়েচড়ে বসেছে, বিভিন্ন সমাজমাধ্যম সংস্থার শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী। কেউ হয়তো মুচকি হেসে বলবেন, অদৃষ্টের পরিহাস— যে দলের আইটি সেল-এর পরিচিতির একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ভুয়ো খবরের বেসাতি, সেই দল এখন ভুয়ো ছবি আর ভিডিয়ো নিয়ে উদ্বিগ্ন! প্রশ্ন হল, ডিপফেক-এর উপদ্রব তো শুরু হয়েছে বেশ কিছু দিন আগেই— সাধারণ মানুষ থেকে রুপালি পর্দার নায়িকা, অনেকেই শিকার হয়েছেন সেই মিথ্যার; প্রধানমন্ত্রী তথা কেন্দ্রীয় শাসকরা হঠাৎ এখন উদ্বিগ্ন হলেন কেন? অনুমান করা চলে, সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারপর্বে যে ভাবে শিবরাজ সিংহ চৌহানের মতো বড় মাপের বিজেপি নেতার ডিপফেক ছড়িয়ে পড়ল, তাতে বিজেপি শিবিরে একটি বার্তা পৌঁছেছে— ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের এই দানব বিরোধী পক্ষের হাতেও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। এই প্রযুক্তি ক্রমেই সুলভ ও সহজ হয়েছে এবং হচ্ছে— ফেক ভিডিয়ো তৈরি করতে এখন কার্যত কোনও প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজন পড়ে না। ফলে, তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া যায় যে, ভারতে শাসক বা বিরোধী, কোনও পক্ষের রাজনৈতিক দলই নকল ভিডিয়ো তৈরি করে বাজারে ছাড়ার মতো অনৈতিক কাজ করবে না, তা হলেও কোনও অত্যুৎসাহী সমর্থকের পক্ষে কাজটি করে ফেলা সম্ভব। তার রাজনৈতিক প্রভাব কত দূর হতে পারে, তা অনুমান করার মতো দূরদৃষ্টি শাসক শিবিরের রয়েছে। অতএব উদ্বেগ ও সক্রিয়তা।

রাজনীতির ময়দানে ডিপফেক কতখানি প্রভাব ফেলতে পারে, বৈশ্বিক স্তরে সে বিষয়ে জোর আলোচনা চলছে। অতি সম্প্রতি আয়োজিত একাধিক নির্বাচনে সেই প্রভাব প্রত্যক্ষও করা গিয়েছে। প্রশ্ন হল, কী ভাবে এই প্রযুক্তির অপব্যবহারে লাগাম টানা যায়। ভিডিয়ো বা ছবিতে ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে নির্মিত’ মর্মে বিধিবদ্ধ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার যে পরামর্শ প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন, প্রযুক্তির আঙিনায় তা বিশেষ দাঁড়াবে না। প্রথমত, বড় সংস্থাগুলিকে এই নিয়ম মানতে বাধ্য করা গেলেও যেখানে ছোট বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ডিপফেক তৈরি করা হবে, তাদের নিয়ম মানাবে কে? দ্বিতীয়ত, যে বিজ্ঞপ্তি ছবি বা ভিডিয়োতে চোখে দেখা যাবে, তা মুছে ফেলার মতো সফটওয়্যার সহজলভ্য, অন্তত ডার্ক ওয়েবে। আর, যদি মেটাডেটা হিসাবে সেই বিজ্ঞপ্তি ব্যবহার করা হয়, সে ক্ষেত্রেও মুশকিল— ফেসবুক, এক্স বা ইনস্টাগ্রামের মতো মাধ্যমে ডেটার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বহু ক্ষেত্রেই মেটাডেটা ছেঁটে ফেলা হয়। প্রযুক্তি যে বিপদ তৈরি করেছে, প্রযুক্তির মাধ্যমে তার বিশল্যকরণী সন্ধানের কাজটি চালিয়ে যেতে হবে বটে, কিন্তু এখনই সে সমাধানসূত্র মিলবে, সেই ভরসা কম।

অন্য পথ হল, নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি— সমাজমাধ্যমে ভেসে আসা কোনও ভুয়ো ভিডিয়ো বা ছবি দেখে নাগরিকের এটুকু সন্দেহ যেন হয় যে, সেটি নকল। সে পথেও অনেক বাধা। তার মধ্যে অন্যতম হল, যাঁরা যেটা বিশ্বাস করতে চান, সেটায় বিশ্বাস করা তাঁদের পক্ষে খুবই সহজ— মানুষের মন তেমন ভাবেই চলে। ফলে, ভুয়ো খবর যেমন রাজনৈতিক মেরুকরণ বাড়িয়েছে, ডিপফেক-এর দৌলতে তা গভীরতর হবে, সেই আশঙ্কা প্রবল। অন্য কারণ হল, মূলত আইটি সেলের কল্যাণে ভুয়ো খবরের এমনই রমরমা হয়েছে, ‘সমাজমাধ্যম বিশ্ববিদ্যালয়’-এর প্রভাব এমনই গভীর হয়েছে যে, মানুষকে তার থেকে বার করে নিয়ে আসা কঠিন। আগুন নিয়ে খেলার বিপদ এক সময় প্রকট হয়ে ওঠেই। সেই সময়টি উপস্থিত।

অন্য বিষয়গুলি:

Deep Fake Artificial Intelligence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy