Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
GDP

তিক্ত ফসল

পচনশীল ফসল সংরক্ষণের ‘কোল্ড চেন’ নির্মাণ ও প্রসার যেমন দরকার, তেমনই দরকার বৈজ্ঞানিক সেচ ব্যবস্থা।

GDP

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪৬
Share: Save:

কৃষিতে বৃদ্ধির হার কমার প্রভাব পড়ছে দেশের জিডিপির বৃদ্ধির হারে। ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার নামতে পারে ৬ শতাংশেরও নীচে, বলছে মূল্যায়ন সংস্থা ‘ইক্রা’র রিপোর্টে। কেন্দ্রের জাতীয় পরিসংখ্যান দফতরের অনুমান, প্রথম ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন, ২০২৩) জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৮%, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৭.৬%। তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ওই হার কমার অন্যতম কারণ, বর্ষার অভাবে খরিফ শস্যের ফলনে পতন। আবার এল নিনো-র প্রভাবে তাপমাত্রা বাড়ার ফলে রবি মরসুমে বীজ বোনার কাজও গতি পায়নি। ডাল-সহ নানা শস্যের বীজ বপনের এলাকা আগের চেয়ে কমেছে। চলতি অর্থবর্ষে কেন্দ্র দেশের জিডিপি ৭.৩% বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিলেও, কৃষি ক্ষেত্রে বৃদ্ধির অনুমান আটকেছে ২ শতাংশের নীচে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে কৃষিতে বৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে মাত্র ১.৮ শতাংশে, যা গত আট বছরে সর্বনিম্ন। বিষয়টি কেবল কৃষকদের জন্যই দুশ্চিন্তার, এমন নয়। কৃষিক্ষেত্রে বৃদ্ধি না ঘটলে তা ভারতের অর্থনীতির জন্যেও সঙ্কট তৈরি করবে। ভারতের অর্থনীতির পনেরো শতাংশের মতো কৃষি থেকে আসে, কিন্তু বহু মানুষ রোজগারের জন্য কৃষির উপরেই নির্ভর করেন। ফসলের উৎপাদন কমলে মূল্যস্ফীতি দেখা যায়, গত বছর যার আঁচ পেয়েছিল মানুষ। এল নিনোর প্রভাবে বর্ষায় ঘাটতি হওয়ায় প্রায় সমস্ত খাদ্যের দাম বেড়েছিল। শীতে আনাজ ও ফলের দাম কমে, কিন্তু গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ক্রমশ চড়েছে, যা সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিকে ঊর্ধ্বমুখী করেছে। গমের উৎপাদনে ঘাটতির ফলে চাল ও গমের রফতানিতে কেন্দ্রের নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ, এর ফলে চাষিদের রোজগার কমেছে, অথচ দেশের বাজারে গমের দাম কমেনি।

এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার উপযুক্ত নীতি কী, সে বিষয়ে কেন্দ্র নীরব। আপনা হতেই এর নিরসন হবে না, কারণ গমের চড়া দাম সত্ত্বেও উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চাষিদের মধ্যে গম চাষের আগ্রহ কমেছে জলের অভাবে। ফলে গমের দাম সহজে কমবে না। এক দিকে কৃষকের আয়ের নিরাপত্তাহীনতা, অন্য দিকে দরিদ্র-নিম্নবিত্তের খাদ্য নিরাপত্তার অভাব, এই উভয়সঙ্কট ক্রমশ প্রকট হচ্ছে সাধারণ নির্বাচনের মুখে। হয়তো পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্মান নিধির অনুদানের অঙ্ক আরও বাড়ানো হবে। মহিলা চাষিদের জন্য তা দ্বিগুণও হতে পারে, সরকারি সূত্রে প্রকাশ। ভোটবাক্সে চটজলদি লাভের আশায় এমন কোনও চমক বাজেটে প্রত্যাশিত। একই সঙ্গে, সরকারি অনুদানের নীতি যে চাষি অথবা উপভোক্তার সঙ্কট মেটাতে ব্যর্থ হতেই পারে, কারণ, চাষির আয় বাড়াতে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দরকার পরিকাঠামোয় সংস্কার।

কৃষিতে বৃদ্ধি আনতে হলে জলবায়ু পরিবর্তনের উপযোগী প্রযুক্তি ও প্রকৌশল ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো, ফসলের অপচয় কমানো, জল ও মাটির সুরক্ষা, বাজারের উপরে মধ্যস্বত্বভোগীর নিয়ন্ত্রণ কমানো প্রয়োজন। পচনশীল ফসল সংরক্ষণের ‘কোল্ড চেন’ নির্মাণ ও প্রসার যেমন দরকার, তেমনই দরকার বৈজ্ঞানিক সেচ ব্যবস্থা। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঞ্চন প্রকল্প বহু আড়ম্বরে শুরু হয়েছিল, গত বাজেটে তা নিঃশব্দে মিশে গিয়েছে ‘কৃষি-উন্নতি’ প্রকল্পে। ২০২১-২২ সালে বরাদ্দের মাত্র অর্ধেক খরচ হয়েছিল। ভারতের পঁয়তাল্লিশ শতাংশ কৃষি জমি আজও বৃষ্টি-নির্ভর। সেখানে সেচব্যবস্থা কেন প্রসারিত হল না, সে প্রশ্নটি বড় হয়ে উঠছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কৃষিকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য যে পৃথক তহবিল কেন্দ্র তৈরি করেছিল ২০১৫-১৬ সালে, তার বরাদ্দ এসে ঠেকেছে এক-পঞ্চমাংশে। কৃষকের অনুদানের অঙ্ক কিছু বাড়িয়ে পরিকাঠামো নির্মাণে ব্যর্থতা ঢাকা দেওয়া সম্ভব নয়। জিডিপি বৃদ্ধির হারের নিম্নগতি চাষির বিপন্নতার প্রতিফলন।

অন্য বিষয়গুলি:

GDP Economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy