ফাইল চিত্র।
ফের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁহার প্রথম কর্তব্য কী হইবে, সেই প্রশ্নের উত্তর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানাইয়াছেন, তিনি সর্বাগ্রে কোভিড-সমস্যা সামলাইবেন। এক বার নহে, নির্বাচনের ফলপ্রকাশের চূড়ান্ত উত্তেজনার মুহূর্তেও বারে বারেই তাঁহার মুখে কোভিড-প্রসঙ্গ শুনা গিয়াছে। রাজ্যবাসী সামান্য হইলেও আশ্বস্ত হইতে পারেন— নির্বাচনী প্রচারপর্বে রাজনৈতিক নেতৃমণ্ডলী যে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়াছেন, এবং যাহার কুশীলব ছিলেন দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর দুই নেতা, নির্বাচন-পরবর্তী পশ্চিমবঙ্গ হয়তো সেই ভয়ঙ্কর পথ হইতে সরিয়া আসিবে। এই মুহূর্তে কোভিড-এর বিরুদ্ধে লড়াই বহুমুখী। প্রথমত, বিপুল সংক্রমণের যে চাপ রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপর পড়িয়াছে, তাহাকে সামাল দিতে হইবে। অক্সিজেনের অভাব গোটা দেশেই তীব্র, শয্যার অভাবও। তাহার সহিত আছে সংস্থাপনার গুরুদায়িত্ব। অস্বীকার করিবার উপায় নাই যে, পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য প্রশাসন দেশের অন্য অনেক রাজ্যের তুলনায় ভাল কাজ করিতেছে। কিন্তু তাহাকে প্রয়োজনের তুল্য করিয়া তুলিতে আরও অনেক যুদ্ধ করিতে হইবে। কোভিড-এর আঁচ অর্থব্যবস্থার গায়ে যত কম লাগে, তাহার ব্যবস্থাও মুখ্যমন্ত্রীকে করিতে হইবে। অন্য দিকে, আর্থিক দুরবস্থায় পড়িয়া মানুষ যাহাতে মৌলিক প্রয়োজনগুলি হইতে বঞ্চিত না হয়, তাহাও নিশ্চিত করিতে হইবে। তাহার জন্য অর্থ প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় সরকারকে সেই অর্থ দিতে বাধ্য করিতে হইবে। রাজ্যকেও চেষ্টা করিতে হইবে নিজস্ব সূত্রে অর্থসংস্থানের।
প্রয়োজন প্রতিষেধকের ব্যবস্থা করাও। কেন্দ্রীয় সরকার টিকা সংক্রান্ত বলটিকে রাজ্য সরকারগুলির কোর্টে পাঠাইয়াছে। এই মুহূর্তে কর্তব্য, বলটি ফের কেন্দ্রের কোর্টে ফেরত পাঠানো। সিরাম ইনস্টিটিউট, ভারত বায়োটেক বা অন্য কোনও সংস্থা হইতে যদি রাজ্য সরকারকে টিকা কিনিয়াও লইতে হয়, তাহার আর্থিক দায়ভার যে রাজ্যের উপর চাপানো চলে না, এই কথাটি দ্ব্যর্থহীন ভাবে বুঝাইয়া দেওয়া প্রয়োজন। সর্বভারতীয় স্তরে বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা কেন্দ্রের উপর চাপ তৈরি করিবার উদ্যোগ করিয়াছেন— তাঁহাদের দাবি, বাজেটে টিকাখাতে যে ৩৫,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হইয়াছে, তাহা রাজ্যগুলিকে টিকা কিনিবার অর্থসাহায্য করিবার কাজেই ব্যয় করিতে হইবে। এই জোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও শরিক। তাঁহার বিজেপি-বিজয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই জোটের দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সম্ভাবনা কী দাঁড়াইবে, সেই প্রশ্ন অন্যত্র বিবেচ্য, কিন্তু টিকার জন্য কেন্দ্রের উপর চাপ বজায় রাখা তাঁহার অবশ্যকর্তব্য। তিনি অহিংস আন্দোলনের কথা বলিয়াই রাখিয়াছেন।
রাজ্যবাসীরও কর্তব্য আছে। তাঁহাদের মুখ্যমন্ত্রীর পার্শ্বে দাঁড়াইতে হইবে। কোভিড-প্রতিরোধে প্রশাসন যে নির্দেশ দিবে, যে আচরণবিধি তৈরি করিয়া দিবে, তাহাকে মান্য করিতে হইবে। মুখ্যমন্ত্রী বিজয়োৎসব করিতে মানা করিয়াছিলেন— জানাইয়াছিলেন, কোভিড-এর বিপদ কাটিলে বিজয় মিছিলের আয়োজন করা হইবে। সংবাদমাধ্যম সাক্ষী, গোটা রাজ্যেই তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা দলের সর্বোচ্চ নেত্রীর, রাজ্যের প্রধান অভিভাবকের সেই নির্দেশ অমান্য করিয়াছেন। নাগরিক যদি দায়িত্বজ্ঞানহীন হন, তবে নেত্রীর কোনও সদিচ্ছাই ফলপ্রসূ হইতে পারে না। কাজেই, এই মুহূর্তে নিজেদের কর্তব্য বুঝিয়া লইতে হইবে। মাস্ক ব্যবহার করা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখিবার ন্যায় প্রাথমিক কাজগুলির কথা যেন নূতন করিয়া স্মরণ করাইয়া দিবার প্রয়োজন না পড়ে। জটলা করা, অপ্রয়োজনে বাড়ির বাহিরে থাকিবার মতো অভ্যাসও পরিত্যাজ্য। যে রাজনৈতিক যুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ী হইলেন, কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তাহার তুলনায় বহু গুণ কঠিন। সৈনিকদের তৈরি থাকিতে হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy