—ফাইল চিত্র।
গাজ়ায় ইজ়রায়েল সামরিক আগ্রাসনের শতাধিক দিবস অতিক্রান্ত। গত বছর অক্টোবর থেকে নেতানিয়াহু সরকারের প্রতিশোধস্পৃহার জেরে গাজ়ায় মানবিক সঙ্কট যে জটিল আকার ধারণ করছে, বিভিন্ন পরিসংখ্যানেই তা স্পষ্ট। সামরিক হামলায় এ-যাবৎ প্রাণ গিয়েছে অন্তত ২৪,০০০। আহত ষাট হাজারের বেশি। যুদ্ধের জেরে ইতিমধ্যেই ঘরছাড়া মানুষের সংখ্যা অন্তত আঠারো লক্ষ। এঁদের অনেকেরই আর ঘরে ফেরার উপায় নেই, যে-হেতু ইজ়রায়েলি বোমায় বহু মানুষের বসতভিটে আজ ধ্বংসস্তূপে পর্যবসিত। মৃত্যু ও ধ্বংসলীলার পাশাপাশি খাদ্য, পানীয় জল, ওষুধপত্র— দৈনন্দিন জীবনধারণের ন্যূনতম প্রয়োজনটুকুর অভাব আজ যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলটির সর্বত্র প্রকট। পরিস্থিতি যা তাতে আগামী দিনে খরার জেরে প্রায় আট লক্ষ মানুষের খাদ্যসঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা। অন্য দিকে, হামাসের হাতে বন্দি ইজ়রায়েলিদের ভবিষ্যৎও বা কী, তা-ও আপাতত অজানা।
এ দিকে, গাজ়ায় ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে দ্য হেগ শহরের আন্তর্জাতিক ন্যায়ালয়ে মামলা করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। শুনানিতে ইজ়রায়েল সওয়াল করেছে— হামাসের ভয়াবহ জঙ্গিহামলার পরিপ্রেক্ষিতে আত্মরক্ষার স্বার্থে গাজ়ায় তাদের এ-হেন সামরিক আগ্রাসন উদ্ভূত হয়েছে। এমনকি ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যত ক্ষণ না হামাস সম্পূর্ণ রূপে নির্মূল হচ্ছে এবং এটা নিশ্চিত করা যাচ্ছে যে ইজ়রায়েলের পক্ষে গাজ়া আর কোনও দিন কোনও ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে না, তত দিন এ যুদ্ধ চলবে। লক্ষণীয়, তাঁর শাসনকালে নেতানিয়াহু সর্বদাই প্যালেস্টাইন সমস্যাকে গুরুত্ব না দেওয়ার চেষ্টা করে এসেছেন। বস্তুত, এটাও সর্বজনবিদিত যে তিনি কোনও কালেই প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতার পক্ষপাতী ছিলেন না। উল্টে তাঁর সরকার অন্য আরব রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছে এই অভিপ্রায়ে যে, প্যালেস্টাইনকে একঘরে করতে পারলে তাদের উপরে চাপ সৃষ্টি করে নিজেদের শর্তারোপ করা সহজতর হবে ইজ়রায়েলের পক্ষে। ইজ়রায়েল যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করলে এর আঁচ যে পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য প্রান্তেও ছড়ানোর প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে, তারই ইঙ্গিত এক দিকে লেবাননের হিজ়বুল্লা জঙ্গিগোষ্ঠীর ইজ়রায়েলের উপরে আক্রমণ এবং অন্য দিকে, লোহিত সাগরে ইয়েমেনের হুথিদের কারণে অশান্তি। গত বছর অক্টোবরের গোড়ায় ইজ়রায়েলের উপরে হামাসের রক্তক্ষয়ী জঙ্গি হামলা বহু রাষ্ট্র ভাল চোখে না দেখলেও পরবর্তী সময়ে গাজ়ার উপরে ইজ়রায়েলের লাগামহীন ও অমানবিক সামরিক হামলার পর অনেক দেশই অবস্থান পাল্টেছে।
এমনিতেই হামাস হামলার আগে ইজ়রায়েল এবং সৌদি আরবের মধ্যে শান্তি চুক্তির সূত্রে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে যে বিশেষ ছাড় পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছিল, সে আশা আজ অতীত। শুধু তা-ই নয়, দুই রাষ্ট্র নীতি বলবৎ হওয়ার ন্যূনতম সম্ভাবনাও দুরাশায় পর্যবসিত। গাজ়ায় এখন দীর্ঘমেয়াদি সামরিক উপস্থিতি চায় ইজ়রায়েল, যার মোটেই পক্ষপাতী নয় আমেরিকা-সহ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী। এই একশো দিন আমূল বদলে দিয়েছে অনেক কিছু। পরিকাঠামোগত, অর্থনৈতিক ভাবে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত অঞ্চলে আজ একটাই প্রশ্ন— যুদ্ধ হয়তো এক দিন শেষ হবে। তার পর?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy