একশো দিনের কাজের প্রকল্পের প্রতি মোদী সরকার কখনওই আগ্রহী ছিল না। ফাইল চিত্র।
মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্পে বরাদ্দ কেন বিপুল কাটছাঁট করা হল এই বাজেটে, তার কোনও ব্যাখ্যা দেননি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তবে তাঁর বাজেট-বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন, বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক কাজ তৈরি হবে, আরও বিনিয়োগ এবং আরও কাজের এই হিতকর চক্র চলতে থাকবে, এমনই আশা করছে সরকার। এই রাজনৈতিক বার্তাটি নতুন নয়। একশো দিনের কাজের প্রকল্পের প্রতি মোদী সরকার কখনওই আগ্রহী ছিল না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একে ‘গর্ত খোঁড়ার প্রকল্প’ এবং ‘কংগ্রেসের ব্যর্থতার সৌধ’ বলে অভিহিত করেছিলেন। নরেন্দ্র মোদী আগাগোড়াই বলে এসেছেন, বিপুল কর্মসংস্থান তাঁর লক্ষ্য— বছরে এক কোটি কাজ, ২০২৩ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারে দশ লক্ষ নিয়োগ ইত্যাদি। সেগুলি কতটা পূরণ হয়েছে, বা হওয়া সম্ভব, বিরোধীরা সে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর সরকারের গত সাড়ে আট বছরের চলন দেখে অনুমান করা সম্ভব যে, এই কর্মসংস্থান বাজারের পথে হবে বলেই তাঁদের প্রত্যাশা। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, তা হয়নি। কর্মসৃষ্টির সরকারি পরিসংখ্যানে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরাও। কিন্তু প্রশ্ন কেবল পরিসংখ্যানের সত্যতা নিয়ে নয়, সরকারের চিন্তার যুক্তিগ্রাহ্যতা নিয়ে। বেসরকারি ক্ষেত্রে বর্ধিত বিনিয়োগ যদি বা হয়, সেই বিনিয়োগ থেকে গ্রামাঞ্চলে যথেষ্ট কর্মসংস্থান হতে গেলে কিছু প্রাক্-শর্ত পূরণ করা আবশ্যক। তার মধ্যে প্রথমটি গ্রামীণ পরিকাঠামো। গ্রাম থেকে শহরে শ্রমশক্তির পরিযাণেরও যে বিপদ রয়েছে, অতিমারি তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। ফলে, গ্রামের জন্য অ-কৃষি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের কথাটি আলাদা ভাবে চিন্তাকরা প্রয়োজন।
তথ্য বলছে যে, মূল্যস্ফীতির জন্য গ্রামীণ মজুরি বস্তুত কমেছে। একটি বেসরকারি সংস্থা ভারতের তিনশোটি জেলায় নমুনা সমীক্ষা করে জানাচ্ছে, চলতি আর্থিক বর্ষে তার আগের বছরের তুলনায় পারিবারিক আয় কমার আশঙ্কা করছেন ষাট শতাংশ মানুষ। অন্য দিকে, ভারতের গ্রামে যা প্রধান জীবিকা, সেই কৃষি থেকেও চাষির রোজগার বাড়ার ভরসা মেলেনি। তার নানা কারণের ব্যাখ্যা রয়েছে আর্থিক সমীক্ষাতেই। তবে কৃষিক্ষেত্রে নিযুক্তদের একটা বড় অংশ যে বস্তুত কর্মহীন, তাঁরা চাষির ‘ছদ্মবেশ’ ধরে রয়েছেন, সে কথা ফের মনে করিয়েছে সমীক্ষা। অর্থাৎ, গ্রামে কর্মহীনতা এবং স্বল্প মজুরি এক আর্থিক সঙ্কট তৈরি করেই রেখেছে। এর শুরু অতিমারির আগে থেকে, অতিমারি তাকে আরও তীব্র করেছে মাত্র। দেশের অর্থনীতির কর্মকাণ্ড গ্রামের মানুষের এক বিপুল অংশকে দৈনন্দিন জীবনযাপনের মতো যথেষ্ট রোজগার দিতে পারছে না বলেই গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্পের মতো সরকারি সহায়তার প্রয়োজন হয়েছে।
সেই কারণেই সরকার এই প্রকল্পে বার বার বরাদ্দের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করতে বাধ্য হয়েছে। বিশেষত অতিমারির সময়ে মানুষের হাতে টাকার জোগান বজায় রাখতে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি এই প্রকল্পের উপরেই নির্ভর করেছে। ২০২০-২১, ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩, প্রতিটি অর্থবর্ষেই খরচ হয়েছে বরাদ্দের চাইতে অনেক বেশি। চলতি আর্থিক বর্ষে ৮৯,০০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, তবু আগামী বছরের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৬০,০০০ কোটি টাকা। কেবল বকেয়া মজুরি মেটাতেই ২৫,০০০ কোটি টাকা লাগবে বলে হিসাব। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে অবশ্য অনুমান করা চলে যে, সঙ্কট তীব্রতর হলে প্রকল্পে বাজেটবরাদ্দের চেয়ে বেশি টাকা খরচ হতে পারে। কিন্তু, বেকারত্বের সমস্যায় নাজেহাল অর্থব্যবস্থার বাজেট পেশ করার সময় এই প্রকল্পের গুরুত্ব খাটো করে দেখানোর মধ্যে যে রাজনৈতিক বার্তাটি রয়েছে, তা অর্থব্যবস্থার পক্ষে সুসংবাদ নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy