Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
PM Narendra Modi

হাতে রইল গল্প

আজ অর্থমন্ত্রী যখন এ বছরের ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করবেন সংসদে, এই উদ্বেগগুলির একটিও সেখানে শোনা যাবে না, তা প্রায় নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়।

PM Narendra Modi.

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩১
Share: Save:

গণস্মৃতি নিতান্তই ক্ষীণ। তবু এক দশক আগে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি যে সব আর্থিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেগুলির কথা কারও কারও মনে থাকতেও পারে। তার ‘জুমলা’ অংশগুলি নাহয় বাদই দেওয়া যাক— সবার অ্যাকাউন্টে পনেরো লক্ষ টাকা, ডলারের দাম চল্লিশ টাকা, পেট্রলের দামও তাই, এ সব কথার কথা যে বাস্তবায়িত হবে না, বোঝা গিয়েছে আগেই। কিন্তু, অর্থব্যবস্থার মূল প্রশ্নগুলি কোথায় দাঁড়াল, নরেন্দ্র মোদীর দ্বিতীয় দফা শাসনের শেষ পর্বে এসে সেই প্রশ্নটি না করলেই নয়। ১৯৯১ সালে ভারতে আর্থিক সংস্কারের পরবর্তী সময়ে নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালেই সার্বিক ভাবে আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল সর্বনিম্ন। তার জন্য কোভিডকে দায়ী করা চলে না, কারণ অতিমারি আরম্ভ হওয়ার আগেই আর্থিক বৃদ্ধি নিম্নমুখী হয়েছিল। কোভিড শুরু হওয়ার আগের চারটি আর্থিক বছরের প্রতিটিতে বৃদ্ধির হার ছিল তার আগের আর্থিক বছরের তুলনায় কম। দেশের আর্থিক উন্নতির ক্ষেত্রে বিনিয়োগের গুরুত্ব অপরিসীম। ২০১১-১২ সালে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের প্রায় ৩৫ শতাংশ ছিল বিনিয়োগ। ২০২৩ সালে সেই অনুপাত কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। বেকারত্বের হার আকাশছোঁয়া, বিশেষত শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে— পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভের পরিসংখ্যান জানাচ্ছে যে, স্নাতক বা তার বেশি শিক্ষিত তরুণ জনগোষ্ঠীতে যত জন প্রত্যক্ষ ভাবে চাকরি খুঁজছেন, তাঁদের প্রতি চার জনের মধ্যে এক জন কর্মহীন। আর্থিক অসাম্য যে ক্রমেই বাড়ছে, তারও নানান প্রমাণ মিলছে বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে। জাতীয় নমুনা সমীক্ষা সংস্থার কনজ়িউমার এক্সপেন্ডিচার বা ভোগব্যয় সংক্রান্ত সর্বশেষ সমীক্ষাটি হয়েছিল ২০১৭ সালে, তার ফলাফল সরকার এখনও প্রকাশ করেনি। কিন্তু, সেই ফলাফল ‘ফাঁস’ হয়েছিল, এবং তাতে জানা গিয়েছিল যে, গ্রামাঞ্চলে প্রকৃত ভোগব্যয় নিম্নমুখী। অন্য দিকে, মূল্যবৃদ্ধির ঊর্ধ্বগতিতে লাগাম পরানোও সম্ভব হয়নি। সব মিলিয়ে, নরেন্দ্র মোদীর দশ বছর ভারতীয় অর্থব্যবস্থাকে এক অতল খাদের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে।

আজ অর্থমন্ত্রী যখন এ বছরের ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করবেন সংসদে, এই উদ্বেগগুলির একটিও সেখানে শোনা যাবে না, তা প্রায় নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়। অর্থব্যবস্থার ক্ষেত্রে এই সরকারের অঘোষিত নীতিটির নাম ‘ডিনায়াল’ বা বাস্তবকে অস্বীকার করা, এবং তথ্যের অযথা ব্যবহার করে একটি মেকি বাস্তব খাড়া করা। তার কারণ, অর্থনীতির যুক্তি-তর্ক বহু ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের আয়ত্তের বাইরে— তাঁরা শুধু একটি বিশ্বাসযোগ্য বয়ান জানতে চান। জি২০-র সভাপতিত্বকে কেন্দ্র করে যেমন ‘বিশ্বগুরু’ হয়ে ওঠার বয়ান তৈরি করল বিজেপি। সেই শোরগোলে এ কথাটি চাপা পড়ে গেল যে, গোষ্ঠীর সভাপতিত্বের দায়িত্বটি ঘুরেফিরে সব দেশই পায়, তার জন্য কোনও বিশেষ কৃতিত্বের প্রয়োজন হয় না। এবং, গোষ্ঠীভুক্ত ২০টি দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন মাথাপিছু আয় ভারতেরই। প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী থেকে আইটি সেলের কর্মী, সবাই বুক ফুলিয়ে জানান যে, ভারতীয় অর্থনীতি এখন আয়তনের নিরিখে বিশ্বের পঞ্চম স্থানে। এ কথা বলেন না যে, তা সম্ভব হয়েছে নিতান্তই জনসংখ্যার কারণে। আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের হিসাবে, মাথাপিছু আয়ের নিরিখে ২০২৩ সালে বিশ্বের ১৯৫টি দেশের মধ্যে ভারত ১৪৩তম স্থানে। দেশের নেতারা হুঙ্কার দিয়ে জানান যে, ভারতের মতো আর্থিক বৃদ্ধির হার আর কোনও বৃহৎ অর্থব্যবস্থার নেই। নিচু ভিত্তির উপরে তুলনায় বেশি বৃদ্ধির হার অর্জন করার কাজটি যে সহজতর, তাঁরা সে কথা বলেন না। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে ভারতের জাতীয় আয়ের যে কণামাত্র ব্যয় হয়, তা যে উন্নয়নের সহায়ক হতে পারে না, বলেন না তা-ও। দশ বছরের শাসন শেষে যদি শুধু অর্ধসত্যের উপরে ভর করেই বয়ান সাজাতে হয়, তবে দেশের কী অবস্থা তাঁরা করেছেন, বুঝতে অসুবিধা হয় না।

অন্য বিষয়গুলি:

PM Narendra Modi BJP Economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy