—প্রতীকী চিত্র।
বছর দুয়েকের পুরনো তথ্য, তবু প্রাসঙ্গিক। বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের আবহে উদ্বেগ বাড়িয়ে তথ্যটি ফিরে এল আবারও। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো ও জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ভারতে ৪৫ হাজারেরও বেশি মহিলা আত্মহত্যা করেছেন, এঁদের অর্ধেকেরও বেশি, ৫১.৫% ‘গৃহবধূ’। ভারতে পেশা অনুযায়ী পুরুষ ও নারীর আত্মহত্যার তথ্যবিন্যাসের কাজে শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছে, আত্মহত্যার সংখ্যায় গৃহবধূরা তালিকার উপরের দিকে, এই ‘স্থানাধিকার’-এর ঘটনা ঘটছে বেশ কিছু বছর ধরেই। নারীমুক্তি ও নারী অধিকার নিয়ে ভাবনাচিন্তা একুশ শতকে দিগন্ত বিস্তার করলেও, ‘হাউসওয়াইফ’ শব্দে নিহিত অমর্যাদা ‘হোমমেকার’ শব্দে কিঞ্চিৎ মুখরক্ষা করলেও, বিবাহিত বা সংসার জীবনে মেয়েদের বাঁচা-মরার চিত্রটি যে সম্পূর্ণ ভিন্ন তা প্রমাণিত।
আত্মহত্যা শব্দটিই এমন এক বিষাদের জন্ম দেয়, যার প্রভাবে এর পশ্চাৎপট, প্রকৃত কারণ সন্ধানের মতো জরুরি বিষয়গুলির আলোচনা চাপা পড়ে যায়, ব্যক্তির মনস্তত্ত্বের উৎখননই প্রাধান্য পায় জনপরিসরে। রাষ্ট্রনেতা, সমাজ-নিয়ন্তারাও দেশে আত্মহত্যার তথ্য নিয়ে সজাগ নন, সরব হওয়া তো দূরস্থান— মেয়েদের ও তদুপরি গৃহবধূদের আত্মহত্যা নিয়ে সংসদে বা পথের রাজনীতিতে হেলদোল চোখে পড়ে না। অথচ রাষ্ট্রের তথ্যই বলে দিচ্ছে পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানটির মধ্যে মেয়ে ও গৃহবধূদের অবস্থান কী রকম, পুরুষ-নারী মিলিয়ে সার্বিক ভাবে সমস্ত আত্মহত্যার ঘটনার ৩০% ঘটছে বিয়ে বা পারিবারিক সমস্যার জেরে, তামিলনাড়ু কর্নাটক কেরল তেলঙ্গানার মতো অর্থনৈতিক ভাবে তুলনায় এগিয়ে থাকা রাজ্যগুলিতে দেখা যাচ্ছে আত্মহত্যার হার বেশি, এমনকি বিশ্লেষকদের মতে এই রাজ্যগুলির গৃহবধূদের ক্ষেত্রেও এই প্রবণতাটি সত্য। অথচ উত্তর ভারতের তুলনায় দক্ষিণ ভারতে মেয়েদের সাক্ষরতা ও শিক্ষার হার বেশি, গণমাধ্যমের সুযোগও।
এত দিন মনে করা হত আর্থিক সচ্ছলতা, ঘরে-বাইরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ব্যক্তির সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত ভাবেই আত্মহনন-প্রবণতার প্রতিষেধক, কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে এরও আড়ালে আছে অন্য সত্য, অন্য অন্ধকার। ভারতীয় মেয়েরা আর্থ-সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে বিয়ের পর মুখোমুখি হচ্ছেন নানা প্রতিবন্ধকের: তাঁদের সামাজিক গতিশীলতা বাধা পাচ্ছে, বাড়ছে স্বামীর বা শ্বশুরবাড়ির নিয়ন্ত্রণ— শারীরিক, মানসিক ও বিশেষত যৌন হেনস্থা-নিগ্রহ। কম উপার্জনের পরিবার-কাঠামোয় গৃহবধূদের উপর নেমে আসা হিংসার মাত্রা হচ্ছে লাগামছাড়া, আবার শিক্ষিত বা তথাকথিত সচ্ছল হওয়া সত্ত্বেও বহু ক্ষেত্রে কমছে বিবাহিতা মেয়েদের আর্থিক স্বনির্ভরতা। গৃহহিংসা, বিশেষত বিবাহোত্তর হিংসা বহুস্তরী, পণ বা অর্থের জন্য ক্রমাগত অত্যাচার কেবল একটি দিক মাত্র; অন্য পুরুষের সঙ্গে কথা বলায় রাগ-ঈর্ষা-সন্দেহ, দাম্পত্যে অবিশ্বস্ততার অভিযোগ, ‘বাপের বাড়ি’র সঙ্গে সম্পর্ক ছেদের চেষ্টা, টাকাপয়সার ব্যাপারে বিশ্বাস না করা— পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে এই সবই। বুঝতে অসুবিধা হয় না, কেন এ দেশে আত্মহত্যা ও বধূহত্যাকে প্রায়ই একই মুদ্রার দুই পিঠ বলে ভাবতে হয়। সমাজ বড় মুখ করে ‘হোমমেকার’ বলে ডাকছে, অথচ ঠেলেও দিচ্ছে আত্মহননের পথে, এর চেয়ে দ্বিচারিতার অপরাধ আর কী-ই বা হতে পারে, এই একুশ শতকে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy