Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Epidemic

অন্য অতিমারি

কোভিডকে সামলানো গিয়েছে, কিন্তু ভবিষ্যতেও নতুন অতিমারি-মহামারি আসতে পারে, সতর্ক করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র প্রাক্তন প্রধান বিজ্ঞানী।

A Photograph of Covid

কোভিড-অতিমারির প্রকোপ যে কমিয়ে আনা গিয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:১৫
Share: Save:

কোভিড-অতিমারির প্রকোপ যে কমিয়ে আনা গিয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু অন্য এক অতিমারি এখনও আশঙ্কা ও আতঙ্কের কারণ, সম্প্রতি শোনা গেল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র প্রাক্তন প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথনের কথায়। সেটি হল ‘ইনফোডেমিক’ বা ‘তথ্যের অতিমারি’। প্রযুক্তি তথা আন্তর্জাল ও মূলত সমাজমাধ্যম বেয়ে বিপুল পরিমাণ তথ্যের বিশ্বময় বিস্তার: যাদের বহুলাংশই অপতথ্য— মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর। পুরো অতিমারি-পর্বে সৌম্যা কাজ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল টেড্রস গেব্রিয়াসেস-এর সহযোগী হিসেবে। কোভিড ছড়িয়ে পড়ার গোড়ার দিকে, ২০২০-এর ফেব্রুয়ারিতে, টেড্রস-ও বলেছিলেন এই ইনফোডেমিক-এর কথা: ভুয়ো তথ্য ও বিভ্রান্তিমূলক খবরের স্রোত কী ভাবে কোভিডের মতো জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়কে করে তুলেছিল ‘গভীর অসুখ’, মানুষের মনে ঢুকে গিয়েছিল প্রবল ভয় ও সন্দেহ, সামাজিক আচরণে এসেছিল বিবিধ অসঙ্গতি। দেশে দেশে সরকার, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা যখন কোভিড রোগীদের ন্যূনতম পরিষেবাটুকু দিতে হিমশিম খাচ্ছেন, তখন এই ইনফোডেমিক তাঁদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল আরও বড় এক চ্যালেঞ্জের সামনে: প্রায় অজানা এক ভাইরাস এবং তখনও পর্যন্ত প্রতিষেধকহীন এক অসুখকে ঘিরে যে অপতথ্যের স্রোত বইছিল, তার মোকাবিলা।

কোভিডকে সামলানো গিয়েছে, কিন্তু ভবিষ্যতেও নতুন অতিমারি-মহামারি আসতে পারে, সতর্ক করেছেন সৌম্যা। একই সতর্কবার্তা প্রযোজ্য ইনফোডেমিক-এর ক্ষেত্রেও। সে জন্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে এখনও বিশদে লেখা তথ্যের অতিমারি কী, কী ভাবে তা সামলাতে হবে, সংস্থাটি এর মোকাবিলায় কী কর্মসূচি নিয়েছে, ভবিষ্যতেও কোন পদক্ষেপ করবে ইত্যাদি নিয়ে। তথ্যের অতিমারি রুখতে দেশে দেশে সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব অনেকখানি, কারণ ইনফোডেমিক আজ শুধু জনস্বাস্থ্য-সঙ্কটেই নয়, জনজীবনে তীব্র অভিঘাত বা প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে এমন যে কোনও ঘটনার ক্ষেত্রেও সমান প্রাসঙ্গিক।

রাজনীতি ও ধর্মের পরিসরে এই তথ্য-অতিমারি ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়াতে পারে। সাম্প্রতিক নানা ঘটনা-দুর্ঘটনাই সাক্ষ্য দেবে, রাজনীতিতে শাসক দল ও বিরোধীদের হিংস্র রাজনৈতিক কাজিয়ায়, কিংবা দুই ভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে বিদ্বেষবিষ ছড়াতে প্রযুক্তি-বাহিত অপতথ্যের এক বিরাট ভূমিকা আছে। আন্তর্জাল ও প্রযুক্তির সহজপ্রাপ্যতা সমাজের একটি বড় অংশের কাছে এক ধরনের নিষ্প্রশ্ন বিশ্বাসযোগ্যতার জন্ম দিয়েছে, তারই সুযোগ নিচ্ছে রাজনৈতিক, ধর্মীয়, বাণিজ্যিক বা অন্যান্য স্বার্থ হাসিল করতে চাওয়া দুর্বৃত্তের দল। ভয়ানক ভূমিকম্প, তুষারধস, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আবহে জনমানসে ছড়িয়ে পড়ছে নানা ভুল তথ্য, বিপর্যয় মোকাবিলার কাজকেই যা কঠিন করে তুলছে। স্রেফ আইন করে বা শাস্তির ভয় দেখিয়ে এই অতিমারি রোধ করা যাচ্ছে না, হাঙ্গামা এড়াতে প্রশাসন অনেক সময় আন্তর্জাল সংযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে, তাতে ব্যাহত হচ্ছে অন্য জরুরি পরিষেবা, লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকারও। যে তথ্য-প্রযুক্তি এক দিকে জীবনের সুরক্ষা দিচ্ছে, তারাই অন্য দিকে হয়ে উঠছে জনজীবনে স্থিতি ও স্বস্তির পরিপন্থী। তথ্যের মতো সদ্ব্যবহারে অতি কল্যাণকর একটি বস্তুকেও কী ভাবে ভয়ঙ্কর করে তুলতে হয়, মানুষই জানে।

অন্য বিষয়গুলি:

Epidemic Infodemic COVID-19 World Health Organization
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy