—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বর্ষায় বৃষ্টি হবে, জল জমে রাস্তার অবস্থা কিছুটা বেহাল হবে, তা প্রত্যাশিত। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে বর্ষা শেষে কলকাতার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার যে ভয়ঙ্কর অবস্থা দাঁড়াচ্ছে, তাকে ‘কিছুটা বেহাল’ বললে সত্যের অপলাপ হয়। এই বিষয়ে পুর-প্রশাসনের অমনোযোগ এবং পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট। সম্প্রতি যেমন শহরের ৩৩০টি রাস্তার উল্লেখ করে সেগুলির দ্রুত মেরামতির জন্য চিঠি দিতে হয়েছে লালবাজারকে। চিঠি গিয়েছে কলকাতা পুরসভা, পূর্ত দফতর, কেএমডিএ-সহ বিভিন্ন দফতরের কাছে। পাশাপাশি দু’শোর অধিক রাস্তায় জমে থাকা আবর্জনা পরিষ্কারের কথাও বলা হয়েছে। অর্থাৎ, এক তথাকথিত মহানগরের এক বিশাল অংশের রাস্তা হয় ভেঙেচুরে তছনছ, নয়তো আবর্জনা জমে তার অপরিচ্ছন্ন দশা। সামনেই দুর্গোৎসব, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। সেই আসন্ন উৎসব কালে শহরের হতশ্রী, জোড়াতালি দেওয়া, জল-ভর্তি রাস্তার ছবি আগামী দিনের জন্য ভাল বিজ্ঞাপন হতে পারে কি?
সম্প্রতি পুজোর প্রস্তুতি নিয়ে পুরসভা, কেএমডিএ, সিইএসসি, পূর্ত-সহ বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন পুলিশের আধিকারিকেরা। রাস্তাগুলির মেরামতির কথা বলে চিঠি পাঠানো হয়েছে এই বৈঠক-অন্তেই। বৃষ্টি থামলে পুজোর আগে হয়তো হাল ফেরানোর উদ্যোগও করা হবে। কিন্তু প্রশ্ন, প্রতি বর্ষায় কেন নিয়ম করে রাস্তাগুলির এ-হেন জরাজীর্ণ দশা হবে? তা হলে মেনে নিতে হয়, রাস্তা তৈরির পদ্ধতিতেই যথেষ্ট গলদ রয়েছে, অথবা রক্ষণাবেক্ষণের কাজটি আদৌ হচ্ছে না। রাস্তা এক বার ভাঙলে তাকে কোনও রকমে জোড়াতালি দিয়ে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করা হয়। কিন্তু কিছু দিন পর ফের তা খানাখন্দে ভরে ওঠে। কখনও অপরিকল্পিত মেরামতির কারণে রাস্তা বেখাপ্পা উঁচু হয়ে পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলিতে জল জমার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই চরম অব্যবস্থা কেন? কেন এমন পদ্ধতিতে রাস্তা তৈরি বা মেরামত করা হবে না, যার স্বাস্থ্য দীর্ঘমেয়াদে অটুট থাকবে? কেন সল্ট লেকের মতো অভিজাত অঞ্চলে মানুষ বাইক, গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করতে ভয় পাবেন দুর্ঘটনা বা গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনায়? এই অবস্থা তো এক বর্ষায় হয়নি। দীর্ঘ দিন বেহাল রাস্তাকে নামমাত্র মেরামতির মাধ্যমে ‘কাজ চালিয়ে নেওয়া’র প্রচেষ্টা আজ এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে যে, সারাইয়ের খরচে কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। এত কাল তবে দায়িত্বপ্রাপ্তরা কী করছিলেন?
রাস্তা নির্মাণ, সারাই এবং ফের তার ভগ্নদশা— এই কুনাট্যের মধ্যে যদি কেউ ‘টাকা পাইয়ে’ দেওয়ার রাজনীতি খোঁজেন, তাঁকে দোষ দেওয়া চলে না। বাস্তবিকই, যত বার সারাই, তত বার লক্ষ্মীলাভের সম্ভাবনা। সারাইয়ের নামে পছন্দসই লোককে বরাত পাইয়ে দেওয়া এবং ‘কাটমানি’— এই রীতি পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘলালিত। টেকসই, উন্নতমানের রাস্তা নির্মাণে সেই সম্ভাবনা বন্ধ হতে পারে। যে কোনও ক্ষমতাসীন দলের পক্ষেই সেই ঝুঁকি নেওয়া কঠিন। সুতরাং, জনগণের টাকার নয়ছয় অব্যাহত থাকে। পুরকর্তা, পূর্ত দফতর বিস্মৃত হয়, ভাঙা রাস্তা শুধুমাত্র শহরকে কুৎসিত বানায় না, তা বড় দুর্ঘটনারও জমি প্রস্তুত করে। সর্বোপরি, ডেঙ্গি-বিধ্বস্ত শহরে গর্তে জল জমে তা মশার আঁতুড়ঘর হয়ে ওঠে। অবশ্য নিজ কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দিতে যাদের চিঠি পাঠাতে হয়, তারা এত দূর অনুভূতিসম্পন্ন হবে, তেমন আশা বৃথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy