প্রতীকী ছবি।
লোকসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে জানা গেল, দেশ জুড়ে কবে কোথায় কী কারণে কোন সাংবাদিকেরা গ্রেফতার হয়েছেন বা হচ্ছেন, কেন্দ্রের কাছে সেই সুনির্দিষ্ট তথ্য সংরক্ষিত নেই। কেন নেই, তার ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে: কাজটি রাজ্য সরকারের, কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও পুলিশি ব্যবস্থা তদারকির দায়িত্ব রাজ্যের। সুতরাং, নাগরিকের বিরুদ্ধে ঘটা অপরাধের প্রতিরোধ, তদন্ত ও অপরাধীর দণ্ডবিধানের বন্দোবস্তটি রাজ্য সরকারকেই করতে হবে, এবং সাংবাদিকদের বিষয়টিও তারই মধ্যে পড়ে— কেন্দ্রীয় একটি ক্রাইম রেকর্ডস বুরো থাকলেও সাংবাদিকদের গ্রেফতার সংক্রান্ত তথ্য সেখানে পাওয়া যাবে না।
প্রচলিত লোকপ্রবাদে আছে, ‘নেই, তাই হয়নি’। অর্থাৎ, যার কোনও প্রমাণ নেই, তার অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন। লোকভাষ্য বক্রোক্তির ছলে ঘটমান বাস্তবকে বুঝিয়ে দেয়, বিজেপি-শাসিত কেন্দ্রের কাছে সাংবাদিক গ্রেফতারের বিষয়টিও তেমনই— তথ্য নেই, মানে ব্যাপারটাই ঘটেনি। এ ক্ষেত্রে আবার বলা হল যে কাজটা রাজ্যের, যাতে দায়িত্ব ধুয়ে ফেলা যায়। তাতে সুবিধাও আছে। অনেক রাজ্যই বিজেপি-শাসিত, অতএব সেখানকার সাংবাদিকেরা দলিত ধর্ষণ নিয়ে খবর করলে, মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়কের দুর্নীতি নিয়ে সরব হলে বা সরকারি মদতে পুষ্ট ব্যবসায়ীচক্রের কুকীর্তি ফাঁস করলে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার, হেনস্থা ও অত্যাচার করা যায় সহজেই। শুধু তা-ই নয়, একই সঙ্গে বা একের পর এক এফআইআর করা হয়, যাতে একটিতে আদালত জামিন দিলেও পরেরটিতে ফাঁসিয়ে সাংবাদিকের কারাবাস দীর্ঘায়িত করা যাবে। এবং সবচেয়ে বড় কথা, ইউএপিএ আইনের প্রয়োগে দেশ ও মানুষের নিরাপত্তার প্রশ্নে অভিযুক্ত করে সাংবাদিকের নিরবচ্ছিন্ন কারাবাস নিশ্চিত করা যায়। সঙ্গে রয়েছে দলীয় আই টি সেল-এর মাধ্যমে সমাজমাধ্যমে সাংবাদিক সম্পর্কে বিষোদ্গার, চরিত্রহনন ও মিথ্যা অপবাদ-অভিযোগ। এ ভাবেই যখন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে আন্তর্জাতিক তালিকায় ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান হয় ১৫০-এ, তখনও সংসদে কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন যে, বিদেশি অসরকারি সংস্থার ‘অস্বচ্ছ’ মূল্যায়নে সরকারের বিশ্বাস নেই। কাজেই ল্যাঠা চুকে গেল, ‘ফলাফল’-কেই অস্বীকার করলে আর ‘কারণ’-এর খোঁজ পড়বে কেন।
তবু খোঁজ পড়ে, এবং আশার কথা, আজকের ভারতে প্রশাসন ও আইন যখন খড়্গহস্ত, তখন সংবাদ ও সাংবাদিকের স্বাধীনতার বলভরসা বিচারবিভাগ। সম্প্রতি সাংবাদিক মহম্মদ জ়ুবেরের কারামুক্তির ক্ষেত্রেও সেই আশ্বাসই ধ্বনিত; সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে সব ক’টি মামলায় তাঁকে জামিন দেওয়ার, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বেঁধে দিয়েছে তাঁর মুক্তির সময়সীমা, তাঁর বিরুদ্ধে সব মামলা দিল্লিতে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সাংবাদিকের যা কাজ— লেখা, খবর করা, সরব হওয়া— তার কোনওটিতেই কোনও রকম হস্তক্ষেপ করা যাবে না, তাও বলেছে শীর্ষ আদালত। এই আশ্বাস নিঃসন্দেহে স্বস্তির। একই সঙ্গে তা স্পষ্ট করে দেয় বর্তমান ভারতে সাংবাদিকের কাজের প্রবল ঝুঁকির পরিস্থিতিও, যে পরিস্থিতির উদ্ভব কেন্দ্রীয় সরকার ও তার বশংবদ রাজ্য প্রশাসনের হাতে পড়ে। নিজেদের অপরাধ ঢাকতেই যে তারা সাংবাদিক গ্রেফতারের তথ্য রাখবে না, এতে আর আশ্চর্য কী!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy