Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
LIC

জটিল সিদ্ধান্ত

এলআইসি-র আইপিও নিয়ে কেরলের সিপিআইএম নেতা টমাস আইজ়্যাক যে প্রশ্নটি তুলেছেন, তার প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে গোটা দেশ জুড়েই।

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২২ ০৪:৫৫
Share: Save:

বহু কাটছাঁটের পর ভারতীয় জীবনবিমা নিগমের (লাইফ ইনশিয়োর‌্যান্স কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া বা এলআইসি) ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং বা আইপিও ঘোষিত হল। অর্থাৎ, শেয়ারের মাধ্যমে সংস্থাটির বিলগ্নিকরণের প্রক্রিয়া শুরু হল। সূচনাটি অবশ্য মাপে তেমন বড় নয়। ভারতের শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিয়োরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া বা সেবি-র নিয়ম অনুসারে এক লক্ষ কোটি টাকার বেশি মূল্যের সংস্থার ক্ষেত্রে আইপিও-র মাধ্যমে অন্তত পাঁচ শতাংশ বিলগ্নিকরণ করতে হয়। কিন্তু এলআইসি-র ক্ষেত্রে সেবি এই নিয়মের ব্যতিক্রম করতে সম্মত হয়েছে— সংস্থার মোট মূল্যের মাত্র সাড়ে তিন শতাংশের বিলগ্নিকরণ করা হচ্ছে। তাতেও অবশ্য এলআইসি-র আইপিও-ই ভারতের ইতিহাসে বৃহত্তম। প্রত্যাশা, এই বিলগ্নিকরণের মাধ্যমে রাজকোষে ২১,০০০ কোটি টাকা ঢুকবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়ল এই বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্তের উপর। বাজারে তুমুল উত্থানপতন চলছে, ফলে নীতিগত সিদ্ধান্ত হওয়ার পরও সরকার ২০২১-২২ অর্থবর্ষের শেষ পর্বে এই বিলগ্নিকরণ করেনি। এই বিলগ্নিকরণ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন আছে, কিন্তু আগে বলা জরুরি যে, এই বিলগ্নিকরণের মাধ্যমে সরকার বাজারকে একটি ইতিবাচক বার্তা দিল— আর্থিক সংস্কারের প্রতি দায়বদ্ধতার বার্তা।

এলআইসি-র আইপিও নিয়ে কেরলের সিপিআইএম নেতা টমাস আইজ়্যাক যে প্রশ্নটি তুলেছেন, তার প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে গোটা দেশ জুড়েই। আমেরিকা বাদে বিশ্বের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ অর্থব্যবস্থাতেই যে কোনও বিমা সংস্থার মূল্যায়নের পদ্ধতি হল তার ‘এমবেডেড ভ্যালু’ নির্ণয়। সংস্থাটির বর্তমান সম্পদ ও আর্থিক দায়বদ্ধতার সঙ্গে তার ভবিষ্যৎ লাভযোগ্যতার বর্তমান মূল্য যুক্ত করে নির্ণীত হয় তার এমবেডেড ভ্যালু। সংস্থাটি যখন শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত হয়, তখন তার মূল্যায়ন হয় এই এমবেডেড ভ্যালুর একটি গুণিতকের উপর। এলআইসি-র ক্ষেত্রে সংস্থার এমবেডেড ভ্যালু ৫,৪০,০০০ কোটি টাকা— শেয়ার বাজারে তার মূল্যায়ন হয়েছে ছয় লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাৎ, এই ক্ষেত্রে গুণিতকটি হল ১.১। টমাস আইজ়্যাক ভারতের অন্য একাধিক বেসরকারি বিমা সংস্থার উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন যে, তাদের ক্ষেত্রে এই গুণিতকটি আড়াই থেকে চারের মধ্যে রয়েছে। আইজ়্যাকের অভিযোগ, এলআইসি-র যা ন্যায্য মূল্য হওয়া উচিত, সরকার তার চেয়ে অনেক কম দামে এই সংস্থার শেয়ার বিক্রি করছে— ৩.৫ শতাংশ বিলগ্নিকরণের ফলে সরকারের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২৬,০০০ কোটি টাকা থেকে ৩৫,০০০ কোটি টাকার মধ্যে। সরকারের সেই ক্ষতিতে কাদের লাভ, অনুমান করতে বিশেষ পরিশ্রম নেই।

একটি কথা মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন— যে লোকসানের কথা টমাস আইজ়্যাক বলছেন, তা ‘নোশনাল’ বা ধারণাগত— অর্থাৎ, যথাযথ মূল্যে বিক্রি হলে যত টাকা আয় হত, প্রকৃত মূল্যের আয় তার চেয়ে ততখানি কম। এই লোকসানের ধারণার সঙ্গে ভারত অবশ্য পরিচিত— টু জি স্পেকট্রাম বা কয়লাখনি বণ্টন, ইউপিএ জমানার এমন বহু ‘কেলেঙ্কারি’-র পিছনে অভিযোগ ছিল এমন ‘নোশনাল’ লোকসানেরই। তখন যাঁরা অভিযোগে সরব হতেন, এখন তাঁরাই ক্ষমতায়। তাঁরা কী যুক্তিতে এই সিদ্ধান্তকে ন্যায্য হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেন, দেশবাসী দেখতে উদ্‌গ্রীব। তবে আশঙ্কা হয়, তাঁরা এই অভিযোগটির উত্তর দেওয়ার প্রয়োজনই অনুভব করবেন না। অন্য একটি অভিযোগ হল, সেবি-নির্ধারিত ন্যূনতম বিলগ্নিকরণ সীমাটি এই ক্ষেত্রে শিথিল করায় একটি মন্দ দৃষ্টান্ত স্থাপিত হল। ভবিষ্যতেও অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ক্ষেত্রে সরকার এই পথে হাঁটতে পারে। আইপিও সফল হলেও এই প্রশ্নগুলির উত্তর সরকারকে দিতে হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

LIC IPO
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy