Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Maharashtra And Jharkhand Assembly Election 2024

নতুন কিছু নয়

জনজাতি-ভোট আকর্ষণের জন্য একটি ভয়ানক কাজে বিজেপি নেতৃবৃন্দ বিশেষ পারঙ্গমতা দেখালেন, আরও এক বার: সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বিষ যদৃচ্ছ ছড়ানোয়।

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪ ০৫:৫৮
Share: Save:

আগামী কাল মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডের ভোট। তবে ঝাড়খণ্ডের দুই দফার ভোট একটি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে এক দফায় ভোট হলে এমন একটি ছোট রাজ্যে দুই দফায় ভোট করতে হল কেন। নির্বাচন কমিশনের কাছে নিশ্চয়ই পূর্বপ্রস্তুত উত্তর থাকবে। তবে সাম্প্রতিক ভারতের ভোট-রাজনীতির চর্চা যাঁরা করেন, তাঁদের সংশয় হতেই পারে যে, দিন কয়েক আগে বিরসা মুন্ডার সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী পালনের সঙ্গে এই ভোট-নির্ঘণ্টের একটি গভীর যোগ আছে। জনজাতি-অধ্যুষিত রাজ্য ঝাড়খণ্ডে এই অনুষ্ঠান বিশেষ অর্থবাহী, এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই বছর যে গুরুত্বের সঙ্গে সেই অনুষ্ঠানটি ‘ব্যবহার’ করলেন সে রাজ্যে বিধানসভা ভোটে তাঁর বার্তা প্রচারের কাজে, তাতে মনে হতেই পারে যে এই অনুষ্ঠানের পর যাতে রাজ্যের অন্তত একাংশের ভোট হয়, সে দিকেই ছিল তাঁদের নজর। বিশেষত এ বছরেই লোকসভা ভোট যে-হেতু দেখিয়ে দিয়েছে, অভিযুক্ত ও শাস্তিপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে কেন্দ্র করে জনজাতি আবেগে বিজেপির গ্রহণযোগ্যতা সেখানে কতটা কমেছে। বিজেপি নেতারা বলতেই পারেন, সামাজিক অনুষ্ঠানকে নির্বাচনী প্রচারের কাজে ব্যবহার করা একটি গণতান্ত্রিক প্রকরণ, সকল দল সকল যুগেই করে থাকে। রাষ্ট্রতত্ত্ববিদরা বলবেন, বর্তমান দেশে জনবাদী রাজনীতি যে ভাবে প্রতিষ্ঠান কিংবা নীতিনির্ধারক গণতান্ত্রিক পদ্ধতির তোয়াক্কা না করে সমাজের নানা অংশের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগে আস্থা রাখে, এই ঘটনাও সেই রাজনীতিরই একটি চেহারা মাত্র, নতুন কিছু নয়।

লক্ষণীয় শুধু, ঝাড়খণ্ডের মতো একটি পশ্চাৎপদ রাজ্যের বিরাট সংখ্যক জনজাতি সাধারণের স্বার্থ এই রাজনীতিতে কী ভাবে ‘ব্যবহৃত’ হচ্ছে। সেই দিক দিয়ে দেখতে গেলে বিষয়টি আবার তত সাধারণও নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ বারের প্রচারে জোর দিলেন, কী ভাবে তাঁরা আগেকার সরকারের তুলনায় অনেক বেশি জনজাতি উন্নয়নে মনস্ক। প্রধানমন্ত্রী জনমন যোজনার মাধ্যমে কী ভাবে অতি পশ্চাৎপদ জনজাতিগুলির জন্য পাকা বাড়ির ব্যবস্থা হচ্ছে, সেগুলিকে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে পাকা রাস্তা তৈরি হচ্ছে। এক ঢিলে একাধিক পাখি মারতে সফল তাঁরা। একে তো নিজেদের ঢাকটি পেটানো গিয়েছে। দুই, বিরোধী কংগ্রেস ও জেএমএম-এর দায় হয়ে উঠেছে, জনজাতি উন্নয়ন প্রকল্পকে কোনও ভাবে ছোট না করেও তার বিরোধিতা করা, অর্থাৎ আরও অধিক কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়া। ‘উন্নয়ন’-এর কতখানি বাস্তব, কতখানি কেবল ফাঁপা আওয়াজ, ‘জল-জঙ্গল-জমি’র অধিকার থেকে জনজাতিকে বিচ্যুত করার ধারাবাহিক ‘সাফল্য’ কতখানি ঢেকে দেওয়া যায় প্রচারের কৌশল দিয়ে— তারই অলজ্জ প্রদর্শন চলল গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ।

জনজাতি-ভোট আকর্ষণের জন্য একটি ভয়ানক কাজে বিজেপি নেতৃবৃন্দ বিশেষ পারঙ্গমতা দেখালেন, আরও এক বার: সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বিষ যদৃচ্ছ ছড়ানোয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কেবল ‘অনুপ্রবেশকারী’দের বহিষ্কারের কথাই বলেননি, হেমন্ত সোরেন সরকার কী ভাবে এদের অনুগ্রহ করে চলেছে, সেই কথাটি বারংবার বলে জনতাকে উত্তেজিত করতে চেয়েছেন। মনে রাখতে হবে, জনজাতি সমাজের মধ্যে নানা লোকায়ত ধর্মবিশ্বাসের প্রচলন সত্ত্বেও এই অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের বহু প্রয়াস ও উদ্যোগের কারণে হিন্দু সমাজের সঙ্গে এঁদের একটি ঘনিষ্ঠ সংযোগ ইতিমধ্যেই স্থাপিত। বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর উবাচ, গত পাঁচ বছরে এই রাজ্যে ‘লাভ জেহাদ’, ‘জমি জেহাদ’ ছাড়া কিছু হয়নি, এবং জেএমএম সরকার ছিল তার একনিষ্ঠ সমর্থক। জনজাতি ও মুসলমান সমাজের মধ্যে সংঘর্ষ বাধানোর এই নিরন্তর চেষ্টা বিপজ্জনক এবং ঘৃণ্য। তবে, অবশ্যই, নতুন কিছু নয়। ভোট এলেই হিংসার স্ফুলিঙ্গ বর্ষণ এখন মোদী-ভারতের ‘নিউ নর্মাল’, আবার দেখিয়ে দিল ঝাড়খণ্ড-ভোট।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy