Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Budget 2024

যথেষ্ট কি?

এ বছরের সমীক্ষা থেকে স্পষ্ট, সরকার মাঝারি মেয়াদে ভারতীয় অর্থব্যবস্থার ভবিষ্যৎ বিষয়ে একই সঙ্গে আশাবাদী এবং উদ্বিগ্ন।

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৪ ০৮:৫১
Share: Save:

বাজেটের আগের দিন প্রকাশিত অর্থনৈতিক সমীক্ষার সঙ্গে সরকারের আর্থিক নীতির প্রত্যক্ষ সম্পর্ক খুঁজতে গেলে হতাশ হওয়ার সম্ভাবনা থাকেই। তবু, এই সমীক্ষার মধ্যে সরকারের আর্থিক দৃষ্টিভঙ্গির একটি বৃহত্তর ছায়া থাকে। এ বছরের সমীক্ষা থেকে স্পষ্ট, সরকার মাঝারি মেয়াদে ভারতীয় অর্থব্যবস্থার ভবিষ্যৎ বিষয়ে একই সঙ্গে আশাবাদী এবং উদ্বিগ্ন। আশাবাদের কারণ— ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির চড়া হার, দেশের তরুণ জনসংখ্যা এবং বিশ্ববাজারে চিনের একচেটিয়া রফতানির বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া আন্তর্জাতিক অস্বস্তি। উদ্বেগের কারণ যথেষ্ট উৎপাদনশীলতার অভাব, শিল্পক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষতার ঘাটতি, আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি হলে তার বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা, এবং অতি অবশ্যই, দেশের অভ্যন্তরীণ আর্থিক অসাম্য। দিনকয়েক আগে নীতি আয়োগ আর্থিক অসাম্যের বিপদের কথা উল্লেখ করেছিল— এ বার অর্থনৈতিক সমীক্ষাতেও সেই অসাম্য কমিয়ে আনার পক্ষে সওয়াল করা হল। অনুমান করা চলে, ভারতে আর্থিক অসাম্য যে স্তরে পৌঁছেছে, এবং গত দু’এক বছরে তা নিয়ে যে পরিমাণ হইচই হয়েছে, তাকে অস্বীকার করা কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষেও কঠিন হচ্ছে।

কারণ যা-ই হোক না কেন, আর্থিক অসাম্য কমানোকে যদি লক্ষ্য হিসাবে গণ্য করা হয়, এবং বাকি নীতিগুলিকে যদি সেই অভিমুখে সাজিয়ে নেওয়া হয়, তবে অর্থব্যবস্থার অন্যান্য অভীষ্টও পূরণ হওয়া সম্ভব। আর্থিক অসাম্য কমাতে গেলে তা করতে হবে শ্রমের বাজারের মাধ্যমেই— কারণ, ভারতের সিংহভাগ মানুষের উপার্জনের একমাত্র পথ শ্রম বিক্রয় করা; তাঁদের হাতে বিনিয়োগযোগ্য মূলধন বা খাজনা আদায়ের মতো জমিজমা নেই। এই আর্থিক সমীক্ষায় যেমন কৃষি থেকে শিল্পে কর্মসংস্থান সরিয়ে আনার গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে, এবং পাশাপাশি বলা হয়েছে দক্ষতা বৃদ্ধির কথাও। অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে লাল ফিতের ফাঁসের ফলে যে এই ক্ষেত্র তার সম্ভাবনার সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে সক্ষম হচ্ছে না, সমীক্ষা সে কথাও উল্লেখ করেছে। ভারতের কর্মক্ষম জনসংখ্যার স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার কথাও রয়েছে সমীক্ষায়। অর্থাৎ, বহু বিলম্বে হলেও সরকারি অলিন্দে অসাম্যের সমস্যাটির অনুরণন ঘটেছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, অন্তত এই আর্থিক সমীক্ষার পৃষ্ঠায় সরকার তার অর্থনৈতিক দর্শনে স্থিত— অসাম্য দূরীকরণের কাজটি করতে চাইছে বাজারব্যবস্থার মাধ্যমেই। ভারতে নির্বাচনী ঋতু বুঝিয়ে দিয়েছে যে, প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তরের নীতিটি দীর্ঘস্থায়ী হবে। আর্থিক অসাম্য দূর করার জন্য সেই হস্তান্তরের পথে হাঁটার কথা বলেনি আর্থিক সমীক্ষা, এই বিষয়টির তাৎপর্য নজর এড়ানোর নয়। বাজারের পথে সমাধান খোঁজার ক্ষেত্রে সমস্যা অবশ্য থাকছে— যেমন, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির উপরে নির্ভর করবে ভারতের উৎপাদন ক্ষেত্রের অবস্থা। তবে, চিনের উপরে অতিনির্ভরতার বিষয়ে উদ্বেগের কিছু সুফল ভারত পেয়েছে— যেমন, ইলেকট্রনিক পণ্য রফতানি বেড়েছে।

সদ্যপ্রকাশিত আর্থিক সমীক্ষার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সহানুভূতি বজায় রেখে একটি প্রশ্ন করা প্রয়োজন— বাজারের যে পথটি সমীক্ষা নির্দেশ করেছে, তা কি মাঝারি মেয়াদে আর্থিক অসাম্য দূর করার পক্ষে যথেষ্ট? কিছু কাঠামোগত সমস্যার কথা সমীক্ষায় নেই— যেমন, এ দেশের ন্যূনতম মজুরির হার অতি স্বল্প; নতুন শ্রমবিধিও কিছু ক্ষেত্রে শ্রমিক স্বার্থের পরিপন্থী। যেমন, সংগঠিত ক্ষেত্রের মধ্যে একটি ‘অসংগঠিত’ ক্ষেত্র ক্রমশ স্ফীত হয়ে উঠছে। যেমন, শুধু পেশাদারি দক্ষতাবৃদ্ধিতে জোর দেওয়াই যথেষ্ট নয়, নজর দিতে হবে স্কুলশিক্ষার দিকে— তাকে নতুন যুগের উপযোগী করে তুলতে হবে। যেমন, খেয়াল রাখতে হবে যে, সংগঠিত শ্রমের বাজারে পৌঁছনোর মতো সামর্থ্য যেন সকলের তৈরি হয়। আর্থিক সমীক্ষায় সদিচ্ছার ছাপ রয়েছে— তার বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াটি যেন একই সদিচ্ছার ধারক হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Economy Economic Growth
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE