Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
The Kerala Story

কঠোর

আজকের ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে এ এক দীর্ঘ তর্ক। যেমন আর একটি তর্ক এর মধ্যেই উত্থাপিত: বাক্‌স্বাধীনতা এবং/বনাম শিল্পবস্তু সেন্সর তথা নিষেধের রাজনীতি।

Poster of `The Kerala Story`

পশ্চিমবঙ্গে দ্য কেরালা স্টোরি প্রদর্শনে রাজ্য সরকারের নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ সুপ্রিম কোর্টের। Sourced by the ABP

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৩ ০৬:৪৭
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গে দ্য কেরালা স্টোরি প্রদর্শনে রাজ্য সরকারের নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। অর্থাৎ রাজ্যের প্রেক্ষাগৃহে আবারও দেখা যাবে ছবিটি। গত কিছু দিন ধরে এ ছবি নিয়ে রাজনীতি থেকে সমাজমাধ্যমের পরিসরে যা যা হল, তার পরিপ্রেক্ষিতে মাথায় রাখা ভাল সেই শব্দগুলি, যে কোনও ছবির শুরুতে পর্দায় যারা ভেসে ওঠে। যা বলে, দর্শকরা যা দেখতে চলেছেন তা বাস্তব নয়, চিত্রনির্মাতার কল্পনা। কিছু ক্ষেত্রে ‘বাস্তবাশ্রয়ী’, ‘সত্য ঘটনার ভিত্তিতে নির্মিত’ লেখা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা মনগড়া, কারণ বাস্তবের সত্য ও সিনেমাপর্দার সত্যে ফারাক আছে। প্রেক্ষাগৃহের ভিতরে দর্শক এবং বাইরে বৃহৎ ‘গণ’ পর্দার সত্যকে আগাগোড়া বাস্তব মনে করলে, এবং যে তা করে না তার সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে সমস্যা। যেমন হল জম্মুতে। সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দ্য কেরালা স্টোরি-র সমর্থনে এক ছাত্রের মন্তব্যে প্রতিবাদ করে আর এক জন। ক্রমে তা গড়ায় উত্তপ্ত তর্কে, এবং সিনেমাটির সমর্থক-দল রাতে হানা দেয় প্রতিবাদী-দলের উপর, ছাত্রাবাসে! অভিযোগ, সমর্থকেরা বহিরাগতদের জুটিয়ে এনেছে, প্রতিবাদীদের হেনস্থা ও আঘাত করেছে, এবং সবচেয়ে বড় কথা— এ সব চলাকালীন ছাত্রাবাসের বাইরে থাকা পুলিশ কিছুই করেনি।

একটি সিনেমা ঘিরে এই সহিংসতার কোনও যুক্তি বা ব্যাখ্যা আছে কি না, এর পিছনে কতটা সাম্প্রদায়িক মানসিকতা আর কতটাই বা মেরুকরণের রাজনীতির চতুর ইন্ধন— আজকের ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে এ এক দীর্ঘ তর্ক। যেমন আর একটি তর্ক এর মধ্যেই উত্থাপিত: বাক্‌স্বাধীনতা এবং/বনাম শিল্পবস্তু সেন্সর তথা নিষেধের রাজনীতি। এ নিয়ে এর মধ্যেই এই স্তম্ভে আলোকপাতও হয়েছে (পরাভূত গণতন্ত্র, ১৬-৫), বাক্‌স্বাধীনতার দ্বারটি দিয়ে সমাজে বিপদ ঢুকলে দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রম রোধ করা যাবে না; দরজা খুলে রেখেই বোঝাতে হবে কোনটি ভুল, কেনই বা— সমাজকে করে তুলতে হবে নিজস্ব বিবেচনাবোধের শক্তিতে বলীয়ান। এই করে তোলার কাজটি বহুলাংশে সরকারের। গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে সিনেমা বা কোনও শিল্পকর্মের সামাজিক প্রতিক্রিয়ায় জনজীবনে হিংসা ছড়িয়ে পড়াটা যেমন নাগরিকের অবিবেচনার দায়, তারও বেশি প্রশাসনের ব্যর্থতা।

প্রেক্ষাগৃহে চূড়ান্ত বিতর্কিত সিনেমাও চলুক, কিন্তু বাইরে যেন হিংসা না ছড়ায়, তা নিশ্চিত করা প্রশাসনেরই দায়িত্ব। সে কারণেই দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর নজরদারি, কোথায় কী হতে পারে তা বুঝে যথাযোগ্য পদক্ষেপ। জম্মুর ঘটনায় মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা জড়িত বলেই তা আরও দুশ্চিন্তার: ভবিষ্যতের চিকিৎসকেরা, প্রাণ বাঁচানোর ব্রতধারীদের একাংশ যখন একটি সিনেমা ঘিরে হিংসায় মেতে ওঠে, তখন বৃহত্তর সমাজ কত বড় সম্ভাব্য হানাহানির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে, ভাবতেও ভয় হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে এফআইআর, হস্টেল থেকে বরখাস্তের মতো কঠোর পদক্ষেপ করেছেন, কিন্তু নাগরিক ও জনজীবনের শান্তি স্বস্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে প্রতিটি রাজ্যের প্রশাসনকে। আজ ডাক্তারি পড়ুয়ারা আক্রান্ত, ভবিষ্যতে শিক্ষক চিত্রকর কবি সৈনিক বিজ্ঞানীরা ভ্রষ্ট রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত হবেন না, হিংসায় জড়াবেন না, তা-ই বা কে জানে। তাই শক্ত হতে হবে প্রশাসনকেই, বিশেষত এ রাজ্যের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy