Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Export and Import

টাকার অভাব

ইরান থেকে তেল আমদানি করতে ভারত আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যবহার করত না, সেই লেনদেন হত ভারতীয় মুদ্রার মাধ্যমে।

ইরানে রফতানি করা হত বাসমতি চাল।

ইরানে রফতানি করা হত বাসমতি চাল। প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৩ ০৪:৫২
Share: Save:

ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৃষি-রফতানি হল বাসমতি চাল। আর, তার এক-পঞ্চমাংশ যেত ইরানে। সেই রফতানি আপাতত গভীর সঙ্কটে, কারণ ইরানের হাতে টাকা নেই। আক্ষরিক অর্থেই ‘টাকা’, অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রার অভাব ঘটেছে ইরানের আমদানিকারকদের। তার কারণ ইরানের উপরে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পর থেকে রাশিয়া থেকে ভারতের পেট্রোলিয়াম আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। তার আগে অবধি যে তিনটি দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অশোধিত তেল ভারত আমদানি করত, তার অন্যতম ছিল ইরান। পরিবর্তে কৃষিপণ্য-সহ অন্যান্য পণ্য ইরান আমদানি করত ভারত থেকে। কিন্তু ২০১৯ সালে তেহরানের উপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কারণে দাঁড়ি পড়ে তেল কেনার দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে। তৎসত্ত্বেও তেলের সূত্রে সংগৃহীত ভারতীয় মুদ্রা ব্যবহার করে ভারত থেকে অন্যান্য পণ্য আমদানি করতে থাকে ইরান। সম্প্রতি জানা গিয়েছে, টান পড়েছে তাদের সেই ভারতীয় মুদ্রার ভান্ডারে। ফলে বাধ্য হয়েই ভারতের বদলে পাকিস্তান, তুরস্ক বা তাইল্যান্ড থেকে বাসমতি চাল কেনার পরিকল্পনা করছে তারা।

ইরান থেকে তেল আমদানি করতে ভারত আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যবহার করত না, সেই লেনদেন হত ভারতীয় মুদ্রার মাধ্যমে। যে টাকার তেল আমদানি করত ভারত, তা ভারতেরই কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ইরানি ব্যাঙ্কের ভস্ত্রো অ্যাকাউন্টে জমা থাকত— আর, সেই জমা থাকা ভারতীয় মুদ্রা ব্যবহার করেই ইরান ভারত থেকে আমদানি করা বাসমতি চাল, চা, চিনি, সয়াবিন এবং ওষুধের দাম মেটাত। কিন্তু ২০১৯ সালে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার ফলে ব্যাহত হয় এই প্রক্রিয়াটি— ভারত ইরান থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি কমিয়ে দেয় বহুলাংশে, ফলে ইরানের হাতে ভারতীয় টাকার পরিমাণও কমতে থাকে। সেই ভান্ডারটিই এ বার নিঃশেষিত হল। তা ছাড়া, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের সঙ্গে আমেরিকান ডলারের মাধ্যমেও বাণিজ্য অসম্ভব হয়। এই সমস্যার জেরেই ২০২১ সালের শেষের দিকে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া ইরানের সঙ্গে ‘থার্ড পার্টি কারেন্সি’ লেনদেন প্রক্রিয়ায় সায় দেয়। কিন্তু, প্রকৃত পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে এই যে, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য করতে চাইলে ইরানকে কোনও তৃতীয় পক্ষের সাহায্য নিতে হচ্ছে, ফলে দেখা দিচ্ছে শুল্ক সংক্রান্ত সমস্যা এবং গোটা প্রক্রিয়াটি দীর্ঘায়িত ও খরচসাপেক্ষ হয়ে উঠছে।

মধ্য এবং পশ্চিম এশিয়ার যে দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে, ইরান তার অন্যতম। ভূরাজনৈতিক কারণেই আমেরিকার অসন্তোষ সত্ত্বেও ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করা সম্ভব নয় ভারতের পক্ষে। পাকিস্তানের সঙ্গে বিবাদের কারণে এত দিন এই দুই অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের সরাসরি স্থল-যোগাযোগ সীমিত ছিল। কিন্তু ইরানের সঙ্গে চাবাহার বন্দর ও ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডরের মতো প্রকল্পগুলি ভারতকে সেই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। হালে চিনের সঙ্গে ইরানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হওয়ায় মধ্য এশিয়ায় চিনের প্রভাবের সম্ভাবনাকে প্রশমিত করতে ভারতকে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে হবে। সেই সূত্রেই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বিবিধ সমস্যার আশু সমাধান ছাড়া বিকল্প পথ নেই ভারতের।

অন্য বিষয়গুলি:

Export and Import Iran Punjab Basmati Rice
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy