রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ষোলো মাস অতিক্রান্ত। বিশ্বব্যাপী অস্থিরতার মাঝে এখনও পর্যন্ত মধ্যপন্থার ভূমিকাটি ভারত যে দক্ষতার সঙ্গেই পালন করে এসেছে, এমন দাবি উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। এই দীর্ঘ সময় কালে বিশ্বের তাবড় শক্তিধর দেশগুলিকে সে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, তার কূটনৈতিক এবং কৌশলগত নীতিগুলি দেশের স্বার্থেই চালিত। যদিও কয়েক মাস আগেই ইউক্রেনে হামলার কারণে অর্থনৈতিক ভাবে রাশিয়াকে কোণঠাসা করার ক্ষেত্রে কোনও পদক্ষেপ না করায় এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে ভর্তুকি-মূল্যে জ্বালানি কেনায় পশ্চিমি দেশগুলির তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল ভারতকে। সে ক্ষেত্রেও নিজের অবস্থান না পাল্টে, বেশ কিছু উপলক্ষে পশ্চিমি দেশগুলিরই রাশিয়ার কাছ থেকে কম মূল্যে জ্বালানি কেনার দ্বিচারিতার কথা তুলে ধরে ভারত। ফলস্বরূপ বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক সময় বিবৃতি দেন, পশ্চিমি দেশগুলির সমস্যা গোটা বিশ্বের সমস্যা নয়। কূটনীতিতে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়াটা জরুরি, কিন্তু সর্বদা সেটা সহজ নয়। প্রতিরক্ষা, বাণিজ্যের মতো বিবিধ কারণে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সঙ্গে মৈত্রীতে ইতি টানা সম্ভব ছিল না ভারতের। একই সঙ্গে সমগ্র এশিয়ায় চিনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্যকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমেরিকা-সহ অন্য পশ্চিমি দেশগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা নিয়েও তার উদ্বেগ সঙ্গত।
এটা ঠিক, রাশিয়ার ইউক্রেনের উপর আগ্রাসনের কোনও দিনই সমর্থক ছিল না ভারত। বরং, একাধিক পরিস্থিতিতে মস্কোকে আলোচনা এবং কূটনীতির পথ অবলম্বনের কথাই বলে এসেছে। সেই সূত্রেই গত সেপ্টেম্বরে উজ়বেকিস্তানে শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজ়েশন-এর (এসসিও) বৈঠকের ফাঁকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এটা যুদ্ধের সময় নয়। এই বক্তব্যকে স্বাগত জানায় পশ্চিমি দেশগুলি। তা ছাড়া, এ বছর এপ্রিলে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইউক্রেনের বুচা শহরে রুশ সেনার নির্বিচারে নাগরিক হত্যাকে ভর্ৎসনা করে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তেরও দাবি তোলে ভারত। অন্য দিকে, দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্কেও ঘনিয়েছে সঙ্কটের ছায়া। রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল আমদানির ক্ষেত্রে মস্কোর সঙ্গে টাকায় লেনদেনের আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত দু’দেশের কোনও চুক্তি হয়নি। এ দিকে, আন্তর্জাতিক বাজারে টাকা পুরোপুরি সোনা কিংবা অন্য দেশের মুদ্রায় রূপান্তরিত করা যায় না। ফলে ভারতীয় ব্যাঙ্কে কোটি কোটি টাকা জমা থাকলেও বর্তমান যুদ্ধপরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের কাজে ওই অর্থ ব্যবহার না করতে পারার অভিযোগ তোলে রাশিয়া। এবং অতি সম্প্রতি পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় করতে রাশিয়ার ইঙ্গিতের জেরে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জ়েলেনস্কির কার্যালয়ের কর্তা আন্দ্রে ইয়ারমাকের সঙ্গে কথা বলেন। তবে কি ভারতের পাল্লা ইউক্রেনের দিকে ঝুঁকছে? আগামী দিনে কি তাকে গোটা পরিস্থিতির সাপেক্ষে আরও সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাবে? রাশিয়ার সঙ্গে যে সম্পর্ক খারাপ করা চলবে না, তা ভারত সরকার বিলক্ষণ জানে। তাই কোথাকার জল কোথায় গড়ায়, তা সময়ই বলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy