ডিজিটাল ভারত তৈরির আশার নীচেই রয়েছে সাইবার অপরাধের শিকার হওয়ার আশঙ্কা। ডিজিটাল দুনিয়ায় কত মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন, কত আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, তার একটা আভাস মেলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাম্প্রতিক তথ্য থেকে। ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়েছে ছিয়াশি হাজার, যার প্রায় অর্ধেক ঘটেছে ওয়টস্যাপ-এর মাধ্যমে। ক্ষতির পরিমাণ সরকারি হিসাবে ১২৫ কোটি টাকা, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে প্রকৃত অঙ্ক তার কয়েক গুণ। অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিয়ো থেকে শুরু করে নানা ধরনের গোপন, ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের ঘটনা অধিকাংশই পুলিশকে জানান না আক্রান্তরা। সাধারণ অপরাধ জগতের সঙ্গে সাইবার অপরাধের কয়েকটি বিষয়ে মিল অবশ্যই রয়েছে— যেমন, অতিরিক্ত লাভের আশা দেখিয়ে বিনিয়োগ করতে প্রণোদিত করা, নানা ভাবে অর্থপ্রাপ্তির লোভ দেখিয়ে টাকা আদায় ইত্যাদি। কিন্তু নিতান্ত নির্লোভ মানুষও সর্বস্বান্ত হতে পারেন, যদি তাঁর পাসওয়ার্ডের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়। অথবা, কোনও ধর্মীয় বা সামাজিক অনুষ্ঠানের সম্প্রচার দেখানোর জন্য লিঙ্ক পাঠানো হয়, যা স্পর্শ করামাত্রই গোপনীয় তথ্যে প্রবেশ করতে পারে দুষ্কৃতীরা (‘ফিশিং’)। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যার নিরিখে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ বটে, কিন্তু ভারতের অধিকাংশ মানুষের কাছে ডিজিটাল দুনিয়া এখনও অপরিচিত, রহস্যময় জগৎ। অনেকেই প্রবেশ করেছেন একান্ত অনিচ্ছায়, কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই। সরকারি প্রকল্প, নানা ধরনের জনপরিষেবা, ব্যাঙ্ক-সহ নানা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ক্রমশ ডিজিটাল ব্যবহারকে অপরিহার্য করে তুলছে। তাই বহু নাগরিক বাধ্য হচ্ছেন ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য দিতে, আর্থিক লেনদেন করতে। গ্রাহকদের সচেতন করার জন্য বার্তা সরকারের তরফে প্রচার করা হয় বটে, কিন্তু বাস্তবে সেই সব সতর্কবার্তা কত জনের কাছে পৌঁছনো যাবে, কী করেই বা, তার কোনও স্পষ্ট দিশা নেই।
অতএব ডিজিটাল জগতে কী করে গ্রাহকদের সুরক্ষিত রাখা যায়, সে প্রশ্নটি ক্রমশ বড় হয়ে উঠছে। কিছু প্রতারণার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক কিছু সুরক্ষা দেয়। একটা উপায় বিমা— যে কোনও ক্ষতির মতো, সাইবার অপরাধের জন্য আর্থিক ক্ষতির সামাল দিতে ভারতে বিমা চালু হয়েছে, তার প্রসারও ক্রমশ বাড়ছে। তবে ব্যক্তির তুলনায় বাণিজ্যিক সংস্থাগুলিই এর সুবিধা পাচ্ছে বেশি। গোপনীয় তথ্য চুরি গেলে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে বিশাল অঙ্কের মামলা হতে পারে, যা থেকে কিছুটা নিরাপত্তা দিতে পারে সাইবার বিমা। ব্যক্তিও ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। কিন্তু গ্রাহক নিজে যদি কোনও ভাবে প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে থাকেন— যেমন, ভুয়ো ফোনে বিশ্বাস করে ব্যাঙ্কের তথ্য দিয়ে থাকেন— তা হলে বিমার সুরক্ষা হারাবেন। অপরাধের একটা বড় অংশ এমন নানা প্রতারণার মাধ্যমে হয়। প্রতারণার দায় বহন করতে হয় প্রতারিতকে।
যে কোনও অপরাধের মতোই, সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রেও নিরাপত্তার দায় নাগরিকের উপরে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। সুরক্ষিত লেনদেন-সহ সব ধরনের ডিজিটাল আদান-প্রদানকে নিরাপদ করতে হবে সরকারকেই। মুশকিল হল, কেবল আইন করে এই সমস্যার সমাধান হবে না। সাইবার অপরাধ দ্রুত পদ্ধতি ও প্রযুক্তি বদলায়, দেশের সীমাও মানে না। সাইবার অপরাধীকে ধরতে হলে আইনে যে নমনীয়তা দরকার, পুলিশ-প্রশাসনে সাইবার অপরাধের বিষয়ে যে দক্ষতা ও প্রযুক্তি দরকার, বিভিন্ন বিভাগের কাজে যে সমন্বয় প্রয়োজন, বাস্তবে তা দেখা যায় না। পাশাপাশি, গ্রাহকদের তথ্যের নিরাপত্তা সম্পর্কে শিথিলতার জন্য বৃহৎ সংস্থাগুলিকে কঠোর শাস্তি দেওয়ার দৃষ্টান্ত ভারতে তেমন নেই। তাই সাইবার নিরাপত্তার নানা আইন থাকলেও, সাইবার দুনিয়ায় নাগরিকের বিপন্নতা থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy