আটষট্টিটি দেশের পরে নবতম সংযোজন ভারত। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’ (পূর্বের টুইটার) তথ্যের সত্যতা বিচারের বিশেষ প্রোগ্রাম ‘কমিউনিটি নোটস’ চালু করল এ দেশেও। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক তথা অন্য কোনও সম্ভাব্য বিভ্রান্তিকর পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের বক্তব্য পেশ করার সুযোগ পাবেন এক্স দ্বারা নির্বাচিত ভারতীয় কন্ট্রিবিউটররা। পরে তাঁদের সেই বক্তব্যের গুরুত্ব এবং তথ্যের সত্যতার মূল্যায়ন করবেন অন্যরা। সংস্থার দাবি, লোকসভা নির্বাচনের মতো দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার আগে তাদের এই পদক্ষেপ ভারতে ভুয়ো তথ্যের প্রচার ঠেকাতে সাহায্য করবে। অন্য সমাজমাধ্যমগুলিও ভুয়ো তথ্য যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা করেছে। রাজনীতির ময়দানে ভুয়ো তথ্যের ‘মাহাত্ম্য’ ইতিমধ্যেই বহু-আলোচিত। ভারত-সহ ৮১টি দেশে ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষা দেখিয়েছে যে, ৯০ শতাংশ দেশে সে দেশের সরকার তথা শাসক দলের প্রচারের উদ্দেশ্যে বিভ্রান্তিকর তথ্যের সংগঠিত প্রচারাভিযান চালানো হয়, ৯৪ শতাংশ দেশে পরিচালিত হয় বিরোধীদের আক্রমণ তথা কালিমালিপ্ত করার ভুয়ো তথ্যের অভিযান, হেনস্থা বা নিগ্রহের মাধ্যমে মানুষের অংশগ্রহণ দমন করার জন্য ৭৩ শতাংশ ক্ষেত্রে ভুল তথ্যের অভিযান পরিচালিত হয় আর ৪৯ শতাংশ ক্ষেত্রে ভুল তথ্যের অভিযান চালানো হয় ভোটদাতাদের মধ্যে মেরুকরণ বা বিভাজন ঘটাতে। গত দু’বছরে এই খেলাকে জটিলতর করে তুলেছে জেনারেটিভ এআই বা সৃষ্টিশীল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার। ফলে, তথ্য যাচাইয়ের নতুনতর ব্যবস্থা স্বাগত।
রাজনীতির পরিসরকে ভুয়ো তথ্যের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার কাজটিতে জটিলতা বহুমাত্রিক। এবং, তার প্রতিটি পরতে রয়েছে ক্ষমতার খেলা। প্রথমত, বৈশ্বিক অভিজ্ঞতায় যে-হেতু দেখা গিয়েছে যে, ভুয়ো খবরের সিংহভাগ ক্ষমতাসীন দলের পক্ষেই কাজ করে, ফলে সেই খবরের রমরমা রুখতে শাসকপক্ষের— বিশেষত যে শাসক গণতন্ত্রের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল নয়— আপত্তি থাকা স্বাভাবিক। অন্য দিকে, বিরোধী রাজনীতির কণ্ঠ রোধ করার ক্ষেত্রেও স্বৈরতন্ত্রী শাসনের আগ্রহ থাকে। ফলে, সরকারকে এড়িয়ে বা তাকে সঙ্গে নিয়ে ভুয়ো তথ্যের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর কাজটি নিঃসন্দেহে কঠিন। দ্বিতীয় সমস্যা এই প্ল্যাটফর্মগুলিকে নিয়ে। সেগুলি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চালিত হয়। কোনও দেশে রাষ্ট্রশক্তিকে চটিয়ে বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া কতখানি কঠিন, সংস্থাগুলি তা বিলক্ষণ জানে। ফলে, ভুয়ো খবরের বিরুদ্ধে ঘোষিত অভিযানও শেষ অবধি কত দূর কার্যকর হতে পারবে, তা বহুলাংশে নির্ভর করে গণতন্ত্রের প্রতি এই সংস্থাগুলির দায়বদ্ধতার উপরে। তেমন দায়বদ্ধতার প্রমাণ সুলভ নয়। তৃতীয় সমস্যা (অর্থ)বলের। শাসক দল-পোষিত আইটি সেল স্বভাবতই আর্থিক ভাবে বলীয়ান। বিভিন্ন দেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনে প্রমাণ মিলেছে যে, চাইলে সেই আইটি সেল অতি অল্প সময়ের মধ্যে ভুয়ো খবরের প্লাবন বইয়ে দিতে পারে। তার সঙ্গে লড়াই একটি পূর্ণ সময়ের কাজ। বাধাগুলির প্রতিটিই অতি বাস্তব, অতি প্রবল। কিন্তু, ভুয়ো খবরের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে এই বাধাগুলির বিরুদ্ধেও লড়তেই হবে। সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলি আংশিক ভাবে হলেও তেমন পরিসর তৈরি করছে, এটা ভাল খবর। সেই পরিসরকে কাজে লাগানোর দায়িত্ব সমাজের, উদারবাদী রাজনীতির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy