ইউক্রেনে যাহা ঘটিতেছে, তাহা ভয়ানক বিপর্যয়। কিন্তু সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত বলা যায় না। রাশিয়ার বাহিনী যে বেশ কিছু দিন ধরিয়াই সমরসাজে প্রস্তুত, কেবল প্রেসিডেন্ট পুতিনের সবুজসঙ্কেতটির অপেক্ষায়, তাহা কেবল গোপন গোয়েন্দা তথ্য ছিল না, সমগ্র পৃথিবীই মোটের উপর তাহা অবহিত ছিল। তবু পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝিতে ভারত সরকারের এতই বিলম্ব হইল যে প্রচুর সংখ্যক ভারতীয় নাগরিক — বিশেষত অল্পবয়সি ছাত্ররা— সেখানে আটকাইয়া পড়িলেন। অথচ সংবাদে বারংবার শোনা গিয়াছে, কী ভাবে প্রাণভয়ে দিন কাটাইতেছেন ইউক্রেনবাসী ভারতীয় নাগরিকেরা, কেহ দলবদ্ধ ভাবে সীমান্ত পার হইবার চেষ্টা করিতেছেন, কেহ বা অ্যাপার্টমেন্টের বেসমেন্টে আশ্রয় লইয়াছেন। ভারত সরকার যদি আর কয় দিন পূর্বে সক্রিয় হইত— আমেরিকা বা অপরাপর ইউরোপীয় দেশের ন্যায়— তাহা হইলে স্বদেশীয় নাগরিকদের এহেন দুর্ভোগ হয়তো এড়ানো যাইত। এবং এহেন সক্রিয়তায় ভারত অনভিজ্ঞও নহে— কোভিড-প্লাবনে আটকাইয়া পড়া বহু নাগরিককে বিভিন্ন দেশ হইতে জরুরিকালীন ভিত্তিতে বন্দে ভারত মিশনে ‘এয়ারবাবল অ্যারেঞ্জমেন্ট’-এর মাধ্যমে ফিরাইবার ব্যবস্থা করা হইয়াছিল। তালিবানের কাবুল দখলের পরও বহু নাগরিককে দ্রুত দেশে ফিরানো হইয়াছিল। কিন্তু এ বার ঠিক একই ধরনের সরকারি উদ্যোগের মুখাপেক্ষী ইউক্রেনবাসী ভারতীয়রা এখন চরম বিপন্নতায় আটকাইয়া পড়িলেন। ইউক্রেননিবাসী প্রায় ২০,০০০ ভারতীয় ছাত্রের অধিকাংশই ডাক্তারি ছাত্র। সরকারি হিসাব, গত কয়েক সপ্তাহে মাত্র ৪,০০০ ভারতীয় স্বদেশে ফিরিতে পারিয়াছেন, অতঃপর বিমান পরিষেবা বন্ধ হইয়াছে, রহিয়া গিয়াছেন অবশিষ্ট চার ভাগ।
ইঁহাদের অবস্থা অবর্ণনীয়। খারকিভ হইতে কানপুরের ছাত্র আকাঙ্ক্ষা কাটিয়ার জানাইয়াছেন, ভোর চারটায় বোমার শব্দে তাঁহার ঘুম ভাঙিয়াছে, জানলা কাঁপিতেছে, পার্কিং লটে সব গাড়ির সেন্সর এক সঙ্গে বাজিতেছে। উজহোরাদ হইতে ছাত্র আসিফ খান বলিয়াছেন, অকস্মাৎ এক দিন জল, বিদ্যুৎ-সহ সকল সংযোগ বিচ্ছিন্ন, দোকানে লভ্য কেবল সামান্য আটা আর পেঁয়াজ। এই পরিস্থিতিতে যদি বিপুল লোকক্ষয় না-ও ঘটে, তবু এই অভিজ্ঞতা পক্ষে ভয়ানক। সকলেই প্রাণভয়ে আবাস ছাড়িতেছেন— কেহ দূতাবাসে, কেহ তুলনায় নিরাপদ শহরে। এই পথেই কাহারও খোয়া যাইতেছে সরকারি কাগজপত্র, কাহারও পরীক্ষা অর্ধসমাপ্ত রহিয়া যাইতেছে, কাহাকেও বা কোর্স ছাড়িয়া দিতে হইতেছে। একটি ধাক্কায় জীবন উলটপালট— জলাঞ্জলি গেল অতীতের শ্রম, অন্ধকারে ডুবিল ভবিষ্যৎ।
যথাশীঘ্র তাঁহাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কী বন্দোবস্ত সম্ভব, নরেন্দ্র মোদী সরকার এখন সেই দুর্ভাবনায়। কিভের ভারতীয় দূতাবাস তথ্য সংগ্রহ করিতেছে, তাঁহাদের দেশে ফিরাইবার উদ্যোগে আগাইয়া আসিয়াছে এয়ার ইন্ডিয়া। ইউক্রেন এয়ারস্পেস আটকাইয়া যাওয়ায় এখন রোমানিয়া ও হাঙ্গারি হইতে ফিরাইবার কাজ শুরু হইয়াছে। কূটনৈতিক দিক দিয়া ভারত যেহেতু আপাতত একটি মধ্যবর্তী অবস্থানে, হয়তো সেই দিক দিয়াও ‘ইভাকুয়েশন’-এর কাজটি চালানো সম্ভব। কেবল দায়িত্বজ্ঞানহীন বিলম্বে যে পরিস্থিতি উদ্ভূত হইল, তাহা সামলাইতে এখন সব রকম সম্ভাব্য পথ ধরিয়া অনাবাসী নাগরিকদের উদ্ধার-প্রক্রিয়া চলিতেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy