Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
school

কর্তব্য

দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠিয়াও যদি কোনও শিশু এ, বি, সি, ডি লিখিতে না পারে, তাহাকে কি একান্তই শিশুটির দোষ বলিয়া হাত ঝাড়িয়া ফেলা চলে?

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৯:৩০
Share: Save:

অতিমারি আগমনের প্রায় দুই বৎসর পর বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্তরের শিশুদের পা পড়িবার দিনে কিছু অমূল্য মুহূর্ত তৈরি হইল রাজ্য জুড়িয়া। কোথাও তাহাদের স্বাগত জানানো হইল ফিতা কাটিয়া, কোথাও নবরূপে সাজিল স্কুলবাড়ি, কোথাও হাতে তুলিয়া দেওয়া হইল উপহার। দুই বৎসরে শিশুদের জগতে পরিবর্তন আসিয়াছে অনেকখানি। শুধু যে তাহাদের বিদ্যালয়ে পরিয়া যাইবার জামা, জুতোখানি ছোট হইয়াছে, তাহা নহে। তাহারা শিখিয়াছে— প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত না হইলে, সেই প্রযুক্তি ক্রয়ের পারিবারিক সামর্থ্য না থাকিলে চিরতরে লেখাপড়ার পাটটি বন্ধ হইয়া যাইতে পারে, এক বেলার ডাল-ভাত, ডিমের নিশ্চিত আহারে দাঁড়ি পড়িয়া যাইতে পারে, হয়তো বা ছোট হাতখানি দিয়া আনাজও বেচিতে হইতে পারে। বড় মর্মান্তিক সেই শিক্ষা।

এ-হেন শিক্ষার পাশাপাশি তাহারা ভুলিয়াছেও অনেক কিছু। যে শ্রেণিতে যেটুকু জ্ঞানলাভ প্রত্যাশিত, অনেক শিশুই তাহা অপেক্ষা বহু পিছাইয়া আছে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠিয়াও যদি কোনও শিশু এ, বি, সি, ডি লিখিতে না পারে, তাহাকে কি একান্তই শিশুটির দোষ বলিয়া হাত ঝাড়িয়া ফেলা চলে? তাহাকে শিখাইবার জন্য যথেষ্ট উদ্যোগ করা হইয়াছিল কি? এই ‘লার্নিং গ্যাপ’-এর কথাই কি এই দুইটি বৎসরে বহু বার চর্চিত হয় নাই? বিশেষজ্ঞরা বলেন নাই যে, এই ক্ষতি ভবিষ্যতে ভয়ঙ্কর আকার লইতে পারে? তাহা সত্ত্বেও যে সেই ক্ষতি পূরণের জন্য যথেষ্ট উদ্যোগ কোনও স্তরেই করা হইল না, তাহা অক্ষমণীয়। মিড-ডে মিলের সামগ্রী হাতে ধরাইয়া দেওয়া এবং সঙ্গে কর্মপত্র পাঠাইয়া দিলেই যে শিক্ষার্থীর শিক্ষা সম্পূর্ণ হয় না, ইহা বুঝিতে কি দুই বৎসর সময় লাগে? পাড়ায় শিক্ষালয়-এর যে উদ্যোগ করা হইল, তাহাও অতি বিলম্বে। সুতরাং, সেই উদ্যোগও বিশেষ কাজে আসে নাই। অনলাইন ক্লাসের স্বল্প সময়ে, প্রযুক্তিগত ত্রুটি সামলাইয়া, প্রত্যেকের উন্নতির মান নির্ণয় সহজ নহে। বাস্তবে তাহা হয়ও নাই। তদুপরি, বাড়িতে সময় লইয়া প্রশ্নপত্রের উত্তর জমা দেওয়া এবং শ্রেণিকক্ষের নির্দিষ্ট সময়ে জমা দিবার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য আছে। সুতরাং, যে ক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাস নিয়মিত হইয়াছে, সেইখানেও ছাত্রছাত্রীরা প্রত্যাশিত উন্নতি করিতে পারে নাই। হাতের লেখার শ্লথ গতি, নিজ বুদ্ধি অনুযায়ী উত্তর করিতে না পারিবার ন্যায় নানা সমস্যা দেখা দিতেছে।

আশার কথা ইহাই যে, কিছু কিছু বিদ্যালয় ইতিমধ্যেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করিতেছে— নিজেদের উদ্যোগে ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা দূরীকরণের। যাহাদের বই নাই, বই কিনিবার টাকা নাই, বিদ্যালয়ে আসিবার পোশাক নাই, তাহাদের পাশে গিয়া স্কুল কর্তৃপক্ষ দাঁড়াইতেছেন। অত্যন্ত স্বাগত এই সকল পদক্ষেপ। প্রয়োজনের তুলনায় হয়তো সামান্য, কিন্তু বিন্দু বিন্দু উদ্যোগেই প্রত্যাশার সিন্ধু তৈরি হয়। হয়তো এই পথে রাজ্যের নীতি-নির্ধারকদের কাছেও সিন্ধুর ডাক গিয়া পৌঁছাইবে। অতিমারিকালীন ক্ষতি পূরণ করিতে হইলে প্রশাসনিক উদ্যোগ ও সামাজিক সহযোগিতাকে হাত মিলাইতে হইবে। কী কী উপায় অবলম্বন করিলে তাহা সম্ভব, ভাবা জরুরি। সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ করা ব্যতীত উপায় নাই। কোনও বৃহৎ বা ক্ষুদ্র রাজনীতির ফাঁদে তাহা যেন আটকাইয়া না যায়— ইহাই দেখা এখন কর্তব্য।

অন্য বিষয়গুলি:

school Coronavirus in West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy