বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার টিটাগড়ে। রাজনৈতিক হিংসা নয়, দুষ্কৃতী তাণ্ডবও নয়। বোমা পড়েছে একটি স্কুলে। গ্রেফতার করা হয়েছে চার জনকে। ধৃতদের মধ্যে তিন জনই ওই স্কুলের প্রাক্তনী। এ ছাড়া এক জন অভিযুক্তের বাড়ি থেকে দশটি বোমাও উদ্ধার হয়েছে। এমন ঘটনা নিঃসন্দেহে নজিরবিহীন। এর ফলে শুধুমাত্র যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়াদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়টি প্রশ্নের মুখে পড়ল, তা নয়, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির দিকটিও বেআব্রু হয়ে পড়ল।
প্রাথমিক তদন্তে প্রকাশ, শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে কাউকে ভয় দেখাতে এই বোমাবাজি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ‘ভয় দেখানো’-র প্রসঙ্গটি ইঙ্গিতবহ। রাজ্য রাজনীতিতে এখন এই ভয় দেখানো এক প্রকার ‘সংস্কৃতি’-তে পরিণত হয়েছে। যে কোনও কার্যসিদ্ধির জন্য ভয় দেখানো, পদ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করা এখন নিয়মে পরিণত। বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে প্রাক্-নির্বাচন বা নির্বাচন-পরবর্তী পর্বে এই অস্ত্রকে হামেশাই ব্যবহার করতে দেখা যায় ক্ষমতাসীন দলকে। এই হিংসাগুলির পিছনে উদ্দেশ্য থাকে, বিরোধী দলের অনুগামীদের সম্পত্তি নষ্ট কিংবা মারধর বা হত্যার মাধ্যমে নিজেদের নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা। অনেক ক্ষেত্রেই শাসক দলের ঘনিষ্ঠতার কারণে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা করতে দেরি হয়। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ওঠে। শাসক দলের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ঘটনাকে খাটো করে দেখানোর নিরলস প্রচেষ্টা চলে, অথবা পূর্ববর্তী জমানার উদাহরণ টেনে আনা হয়। দলীয় ক্ষমতার প্রশ্রয়ে অপরাধ এবং পুলিশ প্রশাসনের পেশিশক্তি ব্যবহার করে নির্যাতিতদের প্রভাবিত করার প্রবণতা দুর্বৃত্তদের আরও সাহস জোগায়। ফলে কিছু কাল অন্তরই রাজ্যের নানা স্থানে এই সব অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটে। সংবাদমাধ্যম, সমাজমাধ্যমে হইচই হয় বটে, কিন্তু অপরাধ বা অপরাধীদের সংখ্যা কমে কই? এই হিংসার রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেই বঙ্গবাসী এখন অভ্যস্ত।
সমস্যা হল, এই সংস্কৃতি শুধুমাত্র রাজ্য রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ নেই। সমাজের সমস্ত স্তরে তার প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। সামান্য কারণে স্কুল-কলেজ ঘেরাও, শিক্ষকদের আটক, ক্ষেত্রবিশেষে তাঁদের মারধর, হুমকির মধ্যে তারই ছায়া। রাজ্য যুবসমাজও যে সেই সংস্কৃতির দ্বারা অনুপ্রাণিত হবে, এতে আর আশ্চর্য কী? এই কারণেই পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখায় শিক্ষার্থীরা, পাশ করানোর অন্যায় দাবিতে ভাঙচুর চালানো হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এমনকি ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধও যে ভয় দেখিয়ে, ঘুষ দিয়ে, রাজনৈতিক শক্তির প্রশ্রয়ের জোরে চেপে দেওয়া যায়, সেই বিশ্বাস যুবসমাজের মধ্যে বহু দূর ছড়িয়ে গিয়েছে। ফলে, অপরাধের সঙ্গে কিশোর-সদ্যযুবকদের নাম প্রায়শই জড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বোমা পড়ার ঘটনা তাই বিচ্ছিন্ন নয়। ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটানোর জায়গা যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা রাজপথ নয়, এবং ভয় দেখিয়ে যে আসলে কোনও সমস্যার সমাধান হতে পারে না, তা এই অল্পবয়সিদের বোঝানোর গুরুদায়িত্বটি যাঁরা পালন করতে পারতেন, তাঁরা নিজেরাই অরাজকতাকে গ্রহণীয় বলে মনে করছেন। এই বিপথগামী যুবসমাজকে আটকাবে কে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy