প্রতীকী ছবি।
ঘরে ঘরে পানীয় জলের সংযোগ দিবার প্রকল্প শুরু হইতে না হইতে জল ঘোলা শুরু হইয়াছে। কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দল পরস্পরের প্রতি তথ্য-পরিসংখ্যান ছুড়িতেছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হইতে পারে, তাহাদের প্রদত্ত তথ্য পরস্পরবিরোধী। কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত বলিয়াছেন, গ্রামীণ পশ্চিমবঙ্গে মাত্র কুড়ি শতাংশ ঘরে পানীয় জলের পাইপ পৌঁছাইয়াছে। গ্রামে নলবাহিত জলের সুবিধা পৌঁছাইবার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ দেশে পশ্চাৎপদ রাজ্যের দলে। অপর দিকে রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী পুলক রায় দাবি করিয়াছেন, গত এক বৎসরে এই রাজ্য একুশ লক্ষ গ্রামীণ গৃহস্থালিতে নলবাহিত জলের ব্যবস্থা পৌঁছাইয়াছে, যাহা ভারতে সর্বাধিক। একটু হিসাব করিলেই বোঝা যাইবে যে, এই দুইটি বক্তব্য পরস্পরকে সমর্থন করিতেছে। জনগণনা অনুসারে গ্রামীণ পশ্চিমবঙ্গে এক কোটি এগারো লক্ষ গৃহস্থালি রহিয়াছে, তাহার কুড়ি শতাংশ ধরিলে সংখ্যাটি একুশ লক্ষের কিছু অধিক হইবে। যদি বা রাজ্য সরকারের দাবি অনুসারে এক বৎসরে একুশ লক্ষ সংযোগ ভারতে সর্বোচ্চ হয়, তবু তাহা সরকারি তৎপরতার পরিচয় বলিয়া গণ্য হইতে পারে, সাফল্যের নহে। গ্রামীণ বাংলার পাঁচটি বাড়ির চারটিতেই পানীয় জলের সংযোগ নাই, এই তথ্য আশ্বস্ত করিতে পারে না।
বহু দিন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ জোর দিয়াছে টিউবওয়েল খননের উপর। সেইগুলিই গ্রামাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানীয় জলের প্রধান উৎস ছিল। ফলে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে পাইপবাহিত জল সরবরাহ কখনও গুরুত্ব পায় নাই, গ্রামবাসী আপন এলাকায় টিউবওয়েল স্থাপনের দাবি করিয়াছেন। এই কারণে দেশের অন্যত্র পাইপবাহিত জলের প্রকল্প প্রচলিত হইলেও, বাংলায় মাত্র এক শতাংশ গ্রামীণ গৃহস্থালিতে নলবাহিত জল পৌঁছাইয়াছে। টিউবওয়েল-নির্ভরতার সমস্যাগুলি গত কয়েক দশকে স্পষ্ট হইয়াছে। হুগলির পূর্ববর্তী জেলাগুলিতে ভূগর্ভস্থ জলের আর্সেনিক দূষণ বিপুল। কিছু জেলায় ফ্লোরাইড দূষণও মিলিয়াছে। একই সঙ্গে ভূগর্ভের জলস্তর নামিতেছে, তাই টিউবওয়েলের গভীরতা বাড়িতেছে, খরচ বাড়িতেছে। সর্বোপরি, আপন সময়, স্বাস্থ্যের মূল্যে পানীয় জল বহন করিয়া আনিতে হয় মেয়েদের, তাহার দাম কেহ গণ্য করে না— এই অন্যায় সম্পর্কেও সচেতনতা বাড়িয়াছে। তাই নলবাহিত জল গ্রামাঞ্চলে প্রসারিত করিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করিয়াছে দেশ। পশ্চিমবঙ্গে সেই কাজের আশানুরূপ অগ্রগতি হইয়াছে কি?
কেন্দ্রের প্রতিও প্রশ্ন থাকে। এক, প্রকল্পের নাম বদল হইলে টাকা দিবেন না, মন্ত্রী বলিয়াছেন। কেন এই ঘোষণা? প্রকল্পের নাম কি তাহার কাজ হইতে বড়? প্রকল্পে অর্থের বরাদ্দ ও রূপায়ণে রাজ্যের অংশীদারি তাহাকে নাম বদলাইবার অধিকার দেয় কি না, তাহা ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু নাম অপরিবর্তিত রাখিবার অঙ্গীকার কেন্দ্রের অর্থদানের শর্ত হইতে পারে না। দুই, যে সকল গৃহস্থালিতে নল ও কল বসিয়াছে, সেখানে পানযোগ্য জল নিয়মিত এবং যথেষ্ট পরিমাণে মিলিতেছে কি না, তাহার নজরদারি কি কেন্দ্র করিতেছে? ঠিকাদারকে পাইপ বসাইবার বরাত দিয়া লক্ষ্যপূরণ এক কাজ, আর জল সরবরাহ আর এক কাজ। জলহীন কল যদি ‘লক্ষ্যপূরণ’ বলিয়া গণ্য হয়, তাহা অন্যায় হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy