Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee

সমাধানে সাবধান

রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে, পশ্চিমবঙ্গ স্বরোজগার নিগমের সহায়তায় পুরুষদের পঞ্চাশ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠন করা হবে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:১৬
Share: Save:

হিসাবে গরমিল, তাই মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্পের টাকা কেন্দ্র আটকে দিয়েছে। সামনে পঞ্চায়েত ভোট। সম্ভবত তাই বার বার জনসমক্ষে ‘বিকল্প’ রোজগার প্রকল্প তুলে ধরতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের নির্মাণ কাজের জন্য ঠিকাদার জব কার্ডের মাধ্যমে নিয়োগ করবে। পঞ্চায়েত, সেচ, জনস্বাস্থ্য কারিগরি প্রভৃতি দফতরে এমন নিয়োগ চলছে। যদিও গ্রামবাসীর চাহিদা অনুসারে কাজ সৃষ্টি, যা এমজিএনআরইজিএ-র প্রধান বৈশিষ্ট্য, তার কোনও সম্ভাবনা এই ‘বিকল্প’ পরিকল্পনায় নেই। এর পর আবার রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে, পশ্চিমবঙ্গ স্বরোজগার নিগমের সহায়তায় পুরুষদের পঞ্চাশ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠন করা হবে। ব্যাঙ্কের সঙ্গে সংযোগ করিয়ে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার। নিজেদের উৎপাদিত তাঁত, হস্তশিল্প প্রভৃতি বিক্রি করে স্বনির্ভর হবেন ওই সব গোষ্ঠীর সদস্যেরা।

এমন ঘোষণা জব কার্ডে কর্মপ্রার্থীদের কতটা খুশি করতে পেরেছে, বলা কঠিন। প্রথমত, কাজ করে তার মজুরি পাওয়া আর ঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার মধ্যে পার্থক্য অনেক। কৃষির সঙ্গে যুক্ত বহু ব্যক্তি চাষের অবসর সময়ে শ্রমিক হিসাবে কাজ করে বাড়তি রোজগার করেন। স্বউদ্যোগের শর্ত আলাদা— ছোটখাটো ব্যবসাকেও সফল করার জন্য সম্বৎসর পরিশ্রম করতে হয়। বিশেষ ধরনের প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। তাতে বিনিয়োগ প্রয়োজন, ব্যবসা শুরু করলেই লাভ আসে না। এ রাজ্যে মেয়েদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী এখনও সঞ্চয় ও ঋণ গ্রহণের জন্যই বেশি ব্যবহৃত হয়। ব্যবসায়িক সাফল্য পেয়েছে, এমন গোষ্ঠী নগণ্য। অথচ, একশো দিনের কাজের প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য শ্রমিকের হাতে চটজলদি মজুরি পৌঁছে দেওয়া, যাতে দৈনন্দিন প্রয়োজনের খরচ মেটাতে তাঁরা ঋণগ্রস্ত না হন। দ্বিতীয়ত, কর্মসংস্থানের বিকল্প হিসাবে সহজে ঋণের প্রস্তাব যে ভাল কাজ করেনি, তা কোভিড কালে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ‘প্যাকেজ’-এর দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়। রোজগার অনিশ্চিত হলে গরিব মানুষ সহজে ঋণ নিতে চান না।

সর্বোপরি, রাজ্য সরকার মধ্যস্থতা করলেও ব্যাঙ্ক পুরুষদের গোষ্ঠীগুলিকে ঋণ দিতে আগ্রহী হবে কি? ছাত্রদের শিক্ষা ঋণের ‘গ্যারান্টার’ রাজ্য সরকার, তবু ব্যাঙ্কগুলি শিক্ষা ঋণ না দিয়ে তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে, এমন অভিযোগ বার বার উঠেছে। তার উপর, মেয়েদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি ব্যাঙ্ক ঋণ ফেরত দেওয়ার বিষয়ে নির্ভরযোগ্য হলেও, পুরুষদের গোষ্ঠীগুলি সেই আস্থা অর্জন করতে পারেনি। কেন্দ্রীয় সরকারের স্বর্ণজয়ন্তী গ্রামীণ স্বরোজগার যোজনার অধীনে এক লক্ষেরও বেশি পুরুষ গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু ঋণ বকেয়া রেখে দেওয়ার জন্য ২০১২ সালের পর পুরুষ গোষ্ঠী তৈরি করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আজ কেন ব্যাঙ্কের আস্থা ফিরবে? আশঙ্কা জাগতে বাধ্য, একশো দিনের কাজ না পাওয়ার ক্ষোভ চাপা দিতে কি পরিশোধের সম্ভাবনার বিচার না করেই ঋণ দেওয়া হবে? রাজনৈতিক প্রভাবে অনুপযুক্ত ব্যক্তিদের ঋণ দান করে বহু সমবায় ও ব্যাঙ্ক সঙ্কটে পড়েছে। তাতে সমস্যার চাইতে আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে সমাধান। রাজ্যের মানুষের কাজের চাহিদা মেটাতে পরীক্ষালব্ধ পরিকল্পনা চাই। নির্বাচনী প্রচার যেন প্রকল্পের লক্ষ্য না হয়ে ওঠে।

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee West Bengal Income Scheme
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy