আলোচনায় অতনু ঘোষ, সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রতিম ডি গুপ্ত। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
২০২৪ আশার আলো দেখিয়েছে। ২০২৫-এ বুঝি সুদিন আসতে চলেছে চিত্রনাট্যকারদের। গত বছরের শেষ দিনে জানা গিয়েছে, চিত্রনাট্যকারদের সর্বভারতীয় সংগঠন ‘স্ক্রিনরাইটার্স রাইটস অ্যাসোসিয়েশন’ (SRAI)-কে ভারত সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘কপিরাইট সোসাইটি’র মান্যতা দিয়েছে। সমাজমাধ্যমে খবর ছড়াতেই খুশির ঝিলিক চিত্রনাট্যকারদের মুখে। আশা, এ বার তাঁদের অধিকার রক্ষা হবে। রয়্যালটি সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যাও হয়তো মিটবে, মনে করছেন তাঁরা।
যদিও সংশয় একেবারে যে নিরসন হয়ে গিয়েছে, তা নয়। অনেক সময়ই এ রকম অনেক সরকারি পদক্ষেপ করা হয়। বাস্তবায়িত হতে বহু বছর পেরিয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে তা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয় না। কিংবা হলেও সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হয় না।
এই পদক্ষেপ কি কোনও ভাবে চিত্রনাট্যকারদের সমস্যা মেটাবে? কখনও চিত্রনাট্যকারের লেখা চুরি যায়, কখনও খোয়া যায় টাকা। চিত্রনাট্যকারদের সর্বভারতী সংগঠন ‘কপিরাইট সোসাইটি’র মর্যাদা পাওয়ায় সেই সমস্যার সমাধান হবে?
আনন্দবাজার অনলাইন প্রশ্ন রেখেছিল পরিচালক-চিত্রনাট্যকার অতনু ঘোষ, সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিচালক-চিত্রনাট্যকার প্রতিম ডি গুপ্তের কাছে।
অতনু এই সংগঠনের একেবারে শুরুর সদস্য। তিনি জানেন, বছরশেষে নতুন পালক সংগঠনের মুকুটে যোগ হয়েছে। জানিয়েছেন, একমাত্র এই সংগঠন লেখক, চিত্রনাট্যকার যাবতীয় অধিকার রক্ষার চেষ্টা করে। তাঁর কথায়, “চিত্রনাট্যকারদের সংগঠনে নাম নথিভুক্ত করতে হয়। অনেক সময়েই স্থানীয় সংগঠন সুবিধা পাইয়ে দেওয়া আশ্বাসে প্রতারণার ফাঁদ পাতে। তারা সরকারি সংগঠনের সমতুল্যও নয়। উপরন্তু প্রচুর লেখক, চিত্রনাট্যকার ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন।” ময়ূরাক্ষী’র পরিচালকের মতে, সরকারি সিলমোহরের স্বীকৃতিই আলাদা। একই ভাবে, এই ধরনের সংগঠন থেকে প্রতারণার সম্ভাবনাও কম।
অতনুর আরও আফসোস, পাশ্চাত্যের তুলনায় ভারতীয় লেখক-চিত্রনাট্যকারদের গুরুত্ব নিতান্তই অকিঞ্চিৎকর। তার উপরে, মুম্বইয়ে নাম নথিভুক্ত না থাকলে চিত্রনাট্য নেওয়াই হয় না। পাশাপাশি, চিত্রনাট্য চুরির মতো বিষয়টি তো রয়েছেই। ‘কপিরাইট সোসাইটি’ আগামী দিনে এই সমস্ত দিক দেখবে, লেখক বা চিত্রনাট্যকার কোনও সমস্যার পড়লে তাঁদের পাশে দাঁড়াবে— আশা করছেন তিনি। একই ভাবে চিত্রনাট্যকারেরা উপযুক্ত পারিশ্রমিক পান না। সংগঠন সেই দিকটিও দেখবে, মনে হচ্ছে তাঁর। পরিচালক তাই সংগঠনে নাম নথিভুক্তিকরণের পক্ষে। তাঁর যুক্তি, আগামীতে লেখক-চিত্রনাট্যকার কোনও সমস্যায় পড়ে আইনি পদক্ষেপ করলে সংগঠন তাঁকে সব দিক থেকে সহযোগিতা করবে।
সাংবাদিকতা থেকে পরিচালনায় এসেছেন প্রতিম ডি গুপ্ত। তিনিও অতনুর মতো ‘স্ক্রিনরাইটার্স রাইটস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সদস্য। সংগঠনের একাধিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর কাছে এই সরকারি সংগঠনের থেকে পাওয়া সিলমোহরের যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিম তাই কাহিনি বা চিত্রনাট্য লেখার পরেই সকলের আগে সংগঠনে নথিভুক্ত করান। তিনি জানেন, কোনও সমস্যায় পড়লে পাশে একমাত্র এই সংগঠন থাকবে। তাই সংগঠনের এই নতুন তকমায় তিনি খুশি। বলেছেন, “নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটার প্রয়োজন ছিল। গীতিকারদের সংগঠন অনেক আগেই এই প্রাতিষ্ঠানিক গুরুত্ব অর্জন করেছে।” তাঁর আরও দাবি, যে কোনও ছবির সবচেয়ে মূল্যবান অঙ্গ চিত্রনাট্য। এর উপরে ছবির সাফল্য নির্ভর করে। সেই জায়গা থেকে চিত্রনাট্যকারের স্বার্থরক্ষার দিকটিও প্রয়োজনীয়, মনে করেন তিনি।
চিত্রনাট্যকারদের সংগঠনের সরকারি স্বীকৃতিলাভের কথা জানতেন না ‘বাবা বেবি ও’ ছবির চিত্রনাট্যকার সম্রাজ্ঞী। আনন্দবাজার অনলাইনের থেকে প্রথম খবর পেয়ে খুশি তিনিও। কলকাতার চিত্রনাট্যকারেরা সংগঠনের এই স্বীকৃতিতে কতটা লাভবান হবেন? প্রশ্ন ছিল তাঁর কাছে। সম্রাজ্ঞীর উত্তর, “আমাদের এখানে লেখক-চিত্রনাট্যকারদের কোনও গিল্ড বা সংগঠন নেই। ফলে, এখানে যথেষ্ট খাপছাড়া কাজ হয়। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা জানেনই না, গল্প বা চিত্রনাট্যকারদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক কী হওয়া উচিত। অথবা, তাঁরা কী কী সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন।” তাঁরা তথাকথিত টেকনিশিয়ান নন, ফলে সেই বিভাগের কোনও গিল্ডেও তাঁরা নাম নথিভুক্ত করতে পারেন না। ফলে অনেকেই সচেতন নন। এখনও অনেকে সর্বভারতীয় এই সংগঠনে নাম নথিভুক্ত করেননি। যেমন করেননি সম্রাজ্ঞী স্বয়ং।
তাঁর কৈফিয়ত, “গিল্ডহীন ছন্নছাড়া বলেই এক ধরনের আলস্য আমাদের মনে কাজ করে। সরকারি তকমা পেয়ে সংগঠন আরও শক্তিশালী হলে আমার মতো বাকিরাও আগ্রহী হবেন। সমস্যা সমাধানের আশায় নাম লেখাবেন। এটাই সবচেয়ে বড় ইতিবাচক পদক্ষেপ।” পাশাপাশি তাঁর অনুযোগ, “লেখক আদতে ‘না ঘর কা না ঘাট কা’। সরকারি সংগঠন তাঁদের পাশে থাকলে চিত্রনাট্য চুরি বা পারিশ্রমিক না পাওয়ার মতো ঘটনা কমবে।”
এত ইতিবাচকতার পরেও সম্রাজ্ঞী কিন্তু অতনু বা প্রতিমের মতো আবেগে ভেসে যাননি। তিনি পুরো বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখতে চান। ছেড়ে দিতে চান সময়ের উপরে। আগামী দিনে সংগঠনের সদস্যদের যাবতীয় চাহিদা পূর্ণ হলে তবেই সংগঠনের এই স্বীকৃতির উপরে তাঁর আস্থা জন্মাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy