Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Assembly Election 2021

ধ্বংসাশ্রম

বিল পাশ করাইবার সময়ে বিরোধীদের মত কেবল অগ্রাহ্যই করা হইল না, তাঁহারা মার্শাল কর্তৃক সভাকক্ষ হইতে নিক্ষিপ্ত হইলেন, নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক নিগৃহীত হইলেন। এই রূপেই সম্ভবত যথাযোগ্য ‘মর্যাদা’ পাইল বিলটি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৫৩
Share: Save:

আশ্রম শব্দটির বহু অর্থ। কাহারও নিকট সাধনা বা শাস্ত্রচর্চার স্থান, কাহারও নিকট আশ্রয়। বিগত মাসের শেষলগ্নে বিহার বিধানসভায় যে অভূতপূর্ব কুনাট্য অভিনীত হইল, তাহাতে সর্বার্থেই ম্লান হইল আইন প্রণয়নের এই সভা— আশ্রম। এক বিতর্কিত বিল পাশ হইল বিধানসভায়, ততোধিক বিতর্কিত উপায়ে। ‘বিহার বিশেষ সশস্ত্র পুলিশ বিল, ২০২১’ অনুসারে, বিহার সেনা পুলিশের ২১ ব্যাটালিয়ন কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীর ন্যায় এক বিশেষ পুলিশ বাহিনীতে রূপান্তরিত হইবে। ইহাকে কালা কানুন আখ্যা দিয়া বিরোধীরা অভিযোগ তুলিলেন যে, উক্ত আইনের জোরে পরোয়ানা না থাকিলেও অনুসন্ধান চালাইতে বা গ্রেফতার করিতে বাধা নাই। এমনকি সরকারের অনুমতি বিনা বাহিনীর বাড়াবাড়িতে প্রবেশ করিতে পারিবে না আদালতও। এবং এই বিল পাশ করাইবার সময়ে বিরোধীদের মত কেবল অগ্রাহ্যই করা হইল না, তাঁহারা মার্শাল কর্তৃক সভাকক্ষ হইতে নিক্ষিপ্ত হইলেন, নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক নিগৃহীত হইলেন। এই রূপেই সম্ভবত যথাযোগ্য ‘মর্যাদা’ পাইল বিলটি।

আইনসভায় মতান্তরের পরিণতি রূপে বিশৃঙ্খলা বা হাতাহাতি দেখিয়া হয়তো নূতন বিস্ময়ের কারণ নাই। স্মরণে আসিবে যে, ১৯৯৭ সালের ২২ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় দাবি জানাইতে স্পিকারের চেয়ারে মাইক্রোফোন নিক্ষেপ করিয়াছিলেন বিএসপি বিধায়ক; প্রতিক্রিয়ায় পেপারওয়েট, গ্লাসের ঢাকনা, আসবাবপত্র লইয়া মারপিট, হাসপাতালে ভর্তি বহু সদস্য। সাম্প্রতিক কালে, ২০১৭ সালে তামিলনাড়ুতে পলানিস্বামী সরকার আস্থা ভোটে জিতিবার পরে বিরোধী ডিএমকে-র কিছু সদস্য চেয়ার ছুড়িয়াছিলেন, কাগজ ছিঁড়িয়াছিলেন, মার্শালদের গায়ে জল ঢালিয়াছিলেন। এই রাজ্যের বিধানসভায় ২০১২ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ও সিপিএম-এর হিংসাত্মক মতবিরোধে আহত হন প্রাক্তন মন্ত্রী দেবলীনা হেমব্রম। তবু বিহারের ঘটনা অ-তুলনীয়, যেখানে বিরোধী রাজনৈতিক দল নহে, আইনের রক্ষাকর্তারাই আইনসভার সদস্যদের গায়ে হাত তুলিয়াছেন। অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলায় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ এক অন্য বিপদের দ্যোতনা বহন করে। রাজধর্ম হইতে চ্যুত হইবার বিপদ।

ঘটনার প্রেক্ষাপট আদ্যন্ত রাজনৈতিক বলিয়া অনুমান করা যায়। গত নির্বাচনে নীতীশ কুমার চতুর্থ বার মুখ্যমন্ত্রী হইলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ দল তেজস্বী যাদবের আরজেডি। রাজনীতির স্বাভাবিক নিয়মেই আসনসংখ্যায় তৃতীয় স্থানাধিকারী জেডি(ইউ)-কে ক্রমাগত কোণঠাসা করিতেছেন তেজস্বী। উজ্জীবিত বিরোধী শক্তি রাষ্ট্রের পক্ষে ভাল, প্রশাসনের পক্ষেও— কিন্তু দেড় দশক নিষ্প্রশ্ন ক্ষমতাভোগের সুখে হয়তো সেই সত্য বিস্মৃত হইয়াছেন নীতীশ। এক দিকে তরুণ নেতার তেজোদ্দীপ্ত বক্তৃতাবলি জনমানসে সমর্থন পাইতেছে, অপর দিকে এক কালে প্রধানমন্ত্রী পদের অভিলাষী নেতা জোটসঙ্গীর দয়ায় কুর্সিরক্ষা করিতেছেন। প্রশ্ন উঠিবে, রাজনৈতিক বিলয় ঠেকাইতেই কি প্রশাসনিক পথে একচ্ছত্র হইবার চেষ্টা? তাহা যদি হয়, তবে ইতিহাসের পাঠ আবশ্যক। ক্ষয়প্রাপ্ত প্রতিপত্তির সমানুপাতে রাজনৈতিক কাণ্ডজ্ঞানটিও বিসর্জিত হইলে শেষাবধি সামান্য করুণা বিনা কিছুই পড়িয়া রহে না। বহু বলিষ্ঠ রাজনীতিক ইহার উদাহরণ।

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Assembly Election 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy