প্রতীকী ছবি।
বহু বিলম্বে হইলেও যে প্রধানমন্ত্রীর চেতনা হইয়াছে, কেন্দ্রীয় সরকার দেশের সব নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে টিকার ব্যবস্থা করিবে বলিয়া জানাইয়াছেন, ইহা সুসংবাদ। প্রশ্ন হইল, ১৮-৪৪ বৎসর বয়ঃক্রমের নাগরিকদের জন্য টিকা কিনিতে গত দেড় মাসে রাজ্যগুলির যে টাকা খরচ হইল, কেন্দ্রীয় সরকার তাহা পুষাইয়া দিবার ব্যবস্থাও করিবে কি? এই বিপুল বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করিবে? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁহার সহজাত প্রবৃত্তিতে এই বিভ্রমের দায় রাজ্য সরকারগুলির উপর চাপাইতে চাহিয়াছেন। বলিয়াছেন, রাজ্যগুলিই চাহিয়াছিল যে, টিকার ব্যবস্থা করিবার দায়িত্ব তাহাদের হাতে থাকুক। এই কথাটির মধ্যে সত্যকে বিকৃত করিবার প্রবণতা অতি স্পষ্ট। টিকার আর্থিক বোঝা বহিবার ‘দাবি’ রাজ্যগুলি কখনও করে নাই— করিবার কারণও নাই— টিকার অর্থসংস্থান করা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তব্য। দেশজ বা বিদেশি সংস্থা হইতে টিকা কিনিবার জন্য যে দরকষাকষি করিতে হয়, সেই কাজেও কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে তিলপরিমাণ সাহায্য করে নাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা যখন টিকার ব্যবস্থা করিয়া লইবার অধিকার দাবি করিয়াছিলেন, তখন তাঁহারা রাজ্যকে হাত-পা বাঁধিয়া বিশ বাঁও জলে ফেলিয়া দেওয়ার আকুল প্রার্থনা লইয়া কেন্দ্রের দ্বারস্থ হন নাই। সত্যকে নিজের সুবিধামতো দুমড়াইয়া লইবার অভ্যাসটি প্রধানমন্ত্রী এই বেলা ত্যাগ করিলে তাঁহার পদটির সম্মানরক্ষা হয়।
বিরোধী রাজনীতির প্রবল চাপ, এবং শীর্ষ আদালতের ধমক, দুই ধাক্কায় প্রধানমন্ত্রী ঢেঁকি গিলিতে বাধ্য হইলেন। গণতন্ত্রের পক্ষে ইহা সুসংবাদ। প্রধানমন্ত্রী অন্তরে-বাহিরে যতই একনায়কত্বে বিশ্বাসী হউন, নাগপুরের পাঠশালা যতই তাঁহাদের সর্বাধিপত্যকামী শাসনের দীক্ষা দিক, বিরোধী রাজনীতি যদি ঠিক ভাবে সংগঠিত হইতে পারে, তবে যে সেই একাধিপত্যবাদীকেও আলোচনার টেবিলে টানিয়া আনা সম্ভব, এই মুহূর্তটি তাহা দেখাইয়া দিল। শাসকের স্বৈর-প্রবণতায় রাশ টানিতে নৈতিকতায় স্থিত বিচারবিভাগের ভূমিকাও অতি গুরুত্বপূর্ণ। সবার জন্য বিনামূল্যে টিকা দিতে প্রধানমন্ত্রী রাজি হইলেন বটে, কিন্তু প্রশ্ন হইল, তাহাতে সরকারের চরিত্রগত দিশাহীনতার শোধন হইল কি? যখন যেমন মনে হয়, তখন তেমন সিদ্ধান্ত লইবার প্রবণতাটি কিন্তু এই সিদ্ধান্তের ফলে তিলমাত্র পাল্টাইল না। পরে কোনও দিন মনে হইলে বিকাল পাঁচটা অথবা রাত্রি আটটায় টেলিভিশনের ক্যামেরার সম্মুখে দাঁড়াইয়া প্রধানমন্ত্রী ফের নিজের ‘হৃদয় পরিবর্তন’-এর কথা ঘোষণা করিতে পারেন। একটি দেশ যে কোনও ব্যক্তির তাৎক্ষণিকের তারল্যে পরিচালিত হইতে পারে না, এই কথাটি প্রধানমন্ত্রী এখনও স্বীকার করেন নাই।
ব্যক্তিবিশেষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা হইতে দেশকে মুক্তি দেওয়ার উপায় নীতি নির্ধারণ। কোভিড-এর প্রতিষেধক আহরণ, বণ্টন, বা তাহার অর্থ সংস্থানের ন্যায় অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দেশ কোন পথে চলিবে, দেশের প্রতিটি নাগরিকের তাহা জানিবার অধিকার আছে। সরকার জানাইয়াছে যে, দেশে যত কোভিড প্রতিষেধক উৎপাদন হইতেছে, তাহার বারো আনা সরকারই কিনিয়া লইবে। এই নীতিটি কি এককালীন, না কি অতঃপর এই ব্যবস্থাই থাকিবে, টিকানীতি প্রণীত না হইলে সে বিষয়ে নিশ্চিত হইবার উপায় নাই। রাজ্যগুলির মধ্যে কোন অনুপাতে টিকা বণ্টিত হইবে, তাহাও স্পষ্ট নহে। এখন যে হেতু প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের টিকার দাম কেন্দ্রই দিবে, ফলে বয়ঃক্রম অনুসারে তাহার পরিচালনার দায়িত্বের বর্তমান যে কেন্দ্র-রাজ্য বিভাজন আছে, তাহা আর রাখা জরুরি কি না, সেই কথাটিও জানাইতে হইবে। অবিবেচনার মহাযজ্ঞ যদি শেষ হয়, কেন্দ্রীয় সরকার এই বার এই প্রশ্নগুলি বিবেচনা করিতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy