Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
COVID-19 Vaccine

রাজ্য হইতে দেশ

আঞ্চলিক শক্তিগুলি যদি একটি সাধারণ নীতি ও কর্মসূচির ভিত্তিতে সম্মিলিত হইতে পারে, তবে গণতান্ত্রিক ভারতের ইতিহাস আবার মোড় ঘুরিতে পারিবে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২১ ০৪:৫৮
Share: Save:

বিধানসভা নির্বাচনে দলের নিরঙ্কুশ জয় সম্পর্কে নিশ্চিত হইবার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোভিডের মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার দিবার কথা বলিবার সঙ্গে সঙ্গে সেই মোকাবিলার সহিত জড়িত একটি দাবিও তুলিয়াছেন— টিকা পাইবার যোগ্য সমস্ত মানুষ যাহাতে বিনা পয়সায় টিকা পান, কেন্দ্রীয় সরকারকে তাহার দায়িত্ব লইতে হইবে। দাবির অর্থটি সুস্পষ্ট করিবার জন্য তিনি তাহার পুনরাবৃত্তি করিয়া বলিয়াছেন— এই দাবি তিনি করিতেছেন সারা ভারতের জন্য। লক্ষণীয়, কার্যত একই সময়ে ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ ও মহারাষ্ট্র, এই তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী-সহ তেরোটি বিজেপি-বিরোধী দলের নেতা কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে একটি সমবেত দাবিপত্র প্রকাশ করিয়াছেন, সেখানেও দেশ জুড়িয়া স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করিবার সঙ্গে সঙ্গে বিনামূল্যে সর্বজনীন কোভিড প্রতিষেধক দানের ব্যবস্থা করিবার দাবি জানানো হইয়াছে।

অতিমারির মোকাবিলাকে কেন্দ্র করিয়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিরোধী দলগুলির এই সম্মিলিত দাবি ঘোষণার মধ্যে যে একটি রাজনৈতিক প্রতিস্পর্ধা নিহিত রহিয়াছে, তাহা বুঝিতে অসুবিধা হয় না। ইহাও স্পষ্ট যে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিকট নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের পরাজয় এই প্রতিস্পর্ধাকে বাড়তি শক্তি ও উৎসাহ দিয়াছে, সম্ভবত প্রেরণাও। ভোটের ফল ঘোষণার পরে একটি পরিচিত এবং পুরাতন প্রশ্ন নূতন করিয়া উঠিয়াছে: নরেন্দ্র মোদী তথা ভারতীয় জনতা পার্টির বিরুদ্ধে জাতীয় স্তরে একটি সম্মিলিত বিরোধী শক্তি কি অতঃপর দানা বাঁধিবে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি সেই শক্তিপুঞ্জের অন্যতম, অথবা প্রধান ভরকেন্দ্র হইবেন? পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যে এই সম্ভাবনা সম্পর্কে সচেতন, তাহা কোনও জল্পনার বিষয় নহে। বিরোধী রাজনীতির জাতীয় মঞ্চে তাঁহাকে অতীতে একাধিক বার তাৎপর্যপূর্ণ উদ্যোগ করিতে দেখা গিয়াছে। সাম্প্রতিক কালেও, গত মার্চ মাসে, তিনি পনেরোটি বিজেপি-বিরোধী দলের নেতানেত্রীদের চিঠি লিখিয়া মোদী সরকারের আধিপত্যবাদী আগ্রাসন হইতে ভারতীয় গণতন্ত্রকে রক্ষা করিবার উদ্দেশ্যে সমবেত প্রতিরোধ গড়িয়া তুলিবার আহ্বান জানাইয়াছিলেন। বিধানসভা নির্বাচনের এই ফল তাঁহার সেই উদ্যোগকে নূতন মাত্রা দিবে, এমন সম্ভাবনা সুস্পষ্ট।

সম্ভাবনাটি আশাপ্রদ। দেশের পক্ষে, রাজ্যের পক্ষেও। রাষ্ট্রের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিস্পর্ধা গড়িয়া তুলিতে বিরোধী দলগুলির ব্যর্থতা ভারতীয় গণতন্ত্রকে কোথায় নামাইয়াছে, তাহা আজ আক্ষরিক অর্থেই দুনিয়ার মঞ্চে প্রকট। গণতন্ত্রের স্বার্থেই সেই প্রতিস্পর্ধা অত্যন্ত জরুরি। গত কয়েক বৎসরের অভিজ্ঞতা হইতে ইহা স্পষ্ট যে, জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপির বিপ্রতীপে কার্যকর প্রতিরোধ গড়িয়া তুলিতে হইলে আঞ্চলিক দলগুলির সমন্বয় ও সংহতি অত্যাবশ্যক। কংগ্রেসকেও আজ আর তাহার পুরানো অবতার হিসাবে না দেখিয়া কয়েকটি রাজ্যে প্রাসঙ্গিক আঞ্চলিক দল হিসাবে দেখাই বাস্তবসম্মত। বহু রাজ্যেই তেমন আঞ্চলিক শক্তি সক্রিয়। এই শক্তিগুলি যদি একটি সাধারণ নীতি ও কর্মসূচির ভিত্তিতে সম্মিলিত হইতে পারে, তবে গণতান্ত্রিক ভারতের ইতিহাস আবার মোড় ঘুরিতে পারিবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক সাফল্য পশ্চিমবঙ্গকে এই সন্ধিক্ষণে সর্বভারতীয় রাজনীতির ময়দানে কার্যত অভূতপূর্ব গুরুত্ব অর্জনের একটি সুযোগ দিয়াছে। পশ্চিমবঙ্গ ‘দখল’ করিবার জন্য সঙ্ঘ পরিবারের সর্বাত্মক অভিযান প্রতিহত করিবার পরে এই রাজ্য যদি জাতীয় রাজনীতিতে তাহার প্রাপ্য গুরুত্ব আদায় করে, তাহা বাস্তবিকই নূতন ইতিহাস রচনা করিবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিশ্চয়ই জানেন যে, ইতিহাস আপনি রচিত হয় না, তাহাকে রচনা করিতে হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus COVID-19 Vaccine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy