Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Anura Kumara Dissanayake

পালাবদল

নিজ ভূমে লড়াই এখনও শেষ হয়নি দিশানায়েকের। আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের ২.৯ বিলিয়ন ডলারের শর্তসাপেক্ষে অর্থসাহায্য সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতির হাল আশাব্যঞ্জক নয়।

অনুরাকুমার দিশানায়েক।

অনুরাকুমার দিশানায়েক। ছবি: রয়টার্স।

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:১৮
Share: Save:

পরিবর্তনের হাওয়া বইছে শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে। দু’মাস আগেই বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিঙ্ঘেকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চমকপ্রদ জয় পেয়েছিলেন অনুরা দিশানায়েকে। এ বার দেশের সংসদীয় নির্বাচনেও সেই জয়ের ধারা অব্যাহত রাখল তাঁর দল ‘জনতা বিমুক্তি পেরুমুনা’ (জেভিপি)-র নেতৃত্বাধীন বামপন্থী জোট ‘ন্যাশনাল পিপল্‌‌স পাওয়ার’ (এনপিপি)। ৬২ শতাংশের বেশি শ্রীলঙ্কাবাসীর সমর্থন নিয়ে সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে তারা। উল্লেখযোগ্য সাফল্য মিলেছে উত্তর এবং মধ্য প্রদেশে তামিল অধ্যুষিত অঞ্চল-সহ পূর্বাঞ্চলে মুসলিম-প্রধান জায়গাগুলিতে। যার ফলে ইঙ্গিত স্পষ্ট— সিংহলি সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের সঙ্গে পূর্বের তিক্ত জাতিগত বিবাদ ভুলে দেশের স্থিতিশীলতাকেই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষ। এ দিকে, প্রেসিডেন্ট হয়েই সংসদ ভেঙে নতুন করে নির্বাচনে সক্রিয় হয়েছিলেন দিশানায়েকে। ফল বলছে, সেই চালেও সফল তিনি।

তবে নিজ ভূমে লড়াই এখনও শেষ হয়নি দিশানায়েকের। আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের ২.৯ বিলিয়ন ডলারের শর্তসাপেক্ষে অর্থসাহায্য সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতির হাল আশাব্যঞ্জক নয়। সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রায় এক-চতুর্থাংশের বেশি মানুষ ছিলেন দারিদ্রসীমার নীচে। তা ছাড়া, বিশ্বব্যাঙ্কের প্রত্যাশা অনুসারে এ বছর দেশের আর্থিক বৃদ্ধিও হতে চলেছে মাত্র ২.৪ শতাংশ। এই অবস্থায় অর্থনীতির কাঠামোগত সংস্কার, আন্তর্জাতিক সমঝোতা এবং আঞ্চলিক নীতির প্রয়োজন, যা তার উন্নতি এবং সাম্যবাদের মাঝে এক সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। রয়েছে রাজনৈতিক বাধাও। দিশানায়েকে প্রশাসনের কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ তামিল এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়গুলির আস্থা অর্জন, যাদের এত কাল তীব্র বিরোধিতা করে এসেছেন তাঁরা। অন্য দিকে, দিশানায়েকের প্রচারের মুখ্য বিষয় থেকেছে দুর্নীতি দমন, কর হ্রাস-সহ সামাজিক উন্নয়নের আশ্বাস, যদিও সাম্প্রতিক খাদ্য এবং জ্বালানি সঙ্কটের ভয়ঙ্কর স্মৃতি এখনও মোছেনি জনগণের মন থেকে।

ভারতের দিক থেকে অবশ্য পড়শি রাষ্ট্রে স্থায়ী সরকার একটা গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ এনে দিতে পারে— কূটনৈতিক স্বার্থরক্ষার সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর। বেজিং-এর সঙ্গে কলম্বোর নৈকট্য এবং ভারত মহাসাগরে হাম্বানটোটা বন্দর ইজারা দেওয়া ছাড়াও বিভিন্ন পরিকাঠামোমূলক প্রকল্পে চিনকে বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান দিল্লির উদ্বেগ বাড়িয়েছিল। এখন দিল্লি কিছুটা নিশ্চিন্ত হতে পারে এই ভেবে, ভারতের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার কথাই শোনা গিয়েছে কলম্বোর নতুন নেতাদের মুখে। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে ভারতে আসেন দিশানায়েকে। দেখা করেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে অতিমারির সময়ে দেশের আর্থিক সঙ্কটকালে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার অর্থসাহায্য দিয়ে কলম্বোর পাশে দাঁড়িয়েছিল দিল্লি। ঋণখেলাপি অবস্থা এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি দ্বীপরাষ্ট্রটি। নতুন ঋণের জন্যও ভারতের সাহায্য লাগতে পারে, বিলক্ষণ জানেন দিশানায়েকে। ও দিকে আদানি গোষ্ঠীর বায়ু প্রকল্পের মতো বিষয়ে যে ভাবে বিরোধিতা করেছেন তাঁরা, তাতে দিল্লিরও প্রচ্ছন্ন উদ্বেগের কারণ আছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Sri Lanka Anura Kumara Dissanayake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy